পর্যটন দ্বীপ কুকরীমুকরী

প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৫ সময়ঃ ১০:২৫ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৯:৫৬ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিক্ষণ ডটকম:

kukri_mukri3বিস্তীর্ণ জলরাশি, সবুজ গাছপালা, মায়াময় হরিণ, রঙ-বেরঙের পাখি আর ম্যানগ্রোভ বন- একজন পর্যটকের জন্য আর কী চাই? যদি এ সবের সম্মিলন এক জায়গাতেই চান, তাহলে ঘুরে আসুন চর কুকরীমুকরী। ভোলা সদর থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই দ্বীপটি হাতছানি দিয়ে ডাকছে সৌন্দর্যপিপাসুদের।

দ্বীপটির নামকরণের ইতিহাসটি কিন্তু বেশ অদ্ভুত। প্রায় ৪৫০ বছর আগে সৃষ্ট এ দ্বীপটিতে প্রথমদিকে ইঁদুর আর কুকুরের রাজত্ব ছিল। ইঁদুরকে স্থানীয় নামে ডাকা হতো ‘মেকুর’ বলে। সেই মেকুর থেকে মুকরী আর কুকুর থেকে কুকরী; ব্যস হয়ে গেল কুকরীমুকরী।

তবে সেখানে ইঁদুর আর কুকুরের রাজত্ব কিন্তু বেশিদিন টেকেনি। এই রাজত্বে প্রথমে ভাগ বসায় ওলন্দাজরা। এরপর তারা জোর করে অনেক বাঙালিকে এখানে নিয়ে আসে। পরের ইতিহাস তো সবারই জানা। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বাঙালিরা বিজয় নিশান উড়াচ্ছে ছোট্ট এই দ্বীপটিতে।

আর হ্যাঁ, ইতিহাসের পাশাপাশি আরেকটি কথা জানিয়ে রাখি, দ্বীপটির চারপাশ দিয়ে ম্যানগ্রোভ বনের কোল ঘেঁষে বাঁধ তৈরির কাজ প্রায় শেষপর্যায়ে। বাঁধটি হয়ে গেলে ওই অঞ্চলের বাসিন্দাদের পাশাপাশি পর্যটকদের জন্যও অনেক সুবিধা হবে।

tyurtyদ্বীপটিতে যাওয়ার সময় মেঘনা নদী, সবুজ ম্যানগ্রোভ বন দেখে শুরুতেই যে কারও চোখ জুড়িয়ে যাবে। এরপর বনের ভেতর দিয়ে হাঁটা কিংবা নৌকা ভ্রমণ আলাদা অনুভূতি জাগাবে। তবে হ্যাঁ, হরিণ কিন্তু এত সহজেই দেখা যাবে না।

বনটি বেশ বিস্তৃত হওয়ায় হরিণগুলো বনের ভেতরের অংশেই থাকে। তাই মায়াবতী হরিণগুলোকে দেখতে বেশ বেগ পেতে হবে, পাশাপাশি থাকতে হবে ভাগ্যের ওপর ভরসা করে। মনে রাখবেন, হরিণ দেখার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় কিন্তু সন্ধ্যার আগ মুহূর্ত।

শেষ কবে বনেভোজন করেছেন মনে আছে? বনভোজন শব্দটি এখনও বহুল ব্যবহৃত হলেও বনের মধ্যে ভোজন করার সুযোগ কিন্তু আমাদের শহুরে মানুষদের নেই বললেই চলে। কুকরীমুকরীতে গিয়ে সেই ইচ্ছাটাও পূরণ করে আসতে পারেন। বনের মধ্যে সবাই মিলে ভোজন করার এমন নিরাপদ ও উপযুক্ত পরিবেশ সারাদেশে খুব কমই আছে।

আগে দ্বীপটির সঙ্গে লাগোয়া অবস্থানে ছিল মেঘনা আর বঙ্গোপসাগরের মোহনা। তবে কালক্রমে তা বেশ দূরে সরে গেছে। তাই এখন মোহনায় যেতে হলে লঞ্চ বা ট্রলার ছাড়া কোনো উপায় নেই। এই নদী ভ্রমণের আনন্দ আরেকটু বাড়িয়ে দেবে অতিথি পাখি, নানা জাতের বক ও পানকৌড়ি।

কুকরীমুকরীতে যাওয়ার পথ

ঢাকা থেকে ভোলা নেমে সেখান থেকে বাসে চড়ে যেতে হবে চরফ্যাশন উপজেলায়। এরপর বাস অথবা মোটরসাইকেলে চড়ে যেতে হবে চর কচ্ছপিয়া। সেখান থেকে ট্রলারযোগে যেতে হবে কুকরীমুকরী দ্বীপে। কচ্ছপিয়া থেকে কুকরীমুকরীর উদ্দেশে দুপুর ১২টায় ট্রলার ছাড়ে। কুকরীমুকরী থেকে কচ্ছপিয়ার উদ্দেশ্যে ট্রলার ছাড়ে সকাল ৯টা ও দুপুর ২টায়।

এ ছাড়া ঢাকা থেকে লঞ্চে চড়ে সরাসরি বেতুয়া নেমে সেখান থেকে মোটরসাইকেলে কচ্ছপিয়া হয়ে কুকরীমুকরী যেতে পারবেন। আসার সময়ও একই রাস্তা। তবে জেনে রাখুন, বেতুয়া থেকে ঢাকার উদ্দেশে লঞ্চ ছাড়ে বিকাল ৪টায়। আর ঢাকা থেকে ভোলার উদ্দেশে সর্বশেষ লঞ্চ রাত সাড়ে ৮টায় ছাড়লেও ভোলা থেকে কিন্তু সর্বশেষ রাত সাড়ে ৭টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে লঞ্চ ছাড়ে।

আরেকটি কথা, কুকরীমুকরীতে এখনও থাকার ব্যবস্থা তেমন গড়ে ওঠেনি। তাই সেখানে থাকতে চাইলে আগে থেকেই কারও সঙ্গে যোগাযোগ করে যেতে হবে।

প্রতিক্ষণ/এডি/আকিদ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

December 2025
SSMTWTF
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031 
20G