শারমিন আকতার, প্রতিক্ষণ ডটকম :
খেলার শুরুতে বাংলাদেশের টাইগাররা আপাতত ছোটবেলার সেই কচ্ছপ-খরগোশের গল্পটায় মনে করিয়ে দিচ্ছে। বলছি বাংলাদেশ-আফগানিস্তানের আজকের প্রথম ম্যাচের কথা।
আমাদের মনে বহু বছর ধরে বাজানো আশঙ্কা সংগীততো সঙ্গীর মতো করে খেলা চলাকালীন পুরো সময়েই বাজবে । এ আর নতুন কী! দুতিনবার আউট হয়ে যাওয়ার ভয় দেখিয়ে পরের বলে একটা চার। তখনও মনের ভেতর আউট হয়ে যাওয়ার শারিন্দাটাই বেজে যাচ্ছে।
কী যে করতে চাইছে আমাদের এই দামাল ছেলেরা কিছুই বুঝতে পারছি না। এইমাত্র আমাদের যক্ষের ধন তামিম রান আউটের সম্ভাবনাটা প্রবলভাবে জাগিয়ে দিয়েছিল। ভাগ্যিস একটুর জন্য বেঁচে গেল। তামিম এবং সাথে বাংলাদেশও। না, এবার আর হল না। কয়েক বল পরেই সেই তামিম ১৯ রান করে আউট হয়ে গেল!
এর কয়েক বল পরেই ৫০ রানের ঘরে পা রাখল বাংলাদেশ। যেনতেনভাবে নয়; একেবারে চার মেরে। এটাইতো বাংলাদেশ। একদিকে পার ভাঙবে, অন্যদিকে পার গড়বে। হু, হান্ড্রেড পার্সেন্ট ট্রু। এখনও ফিফটি উদযাপন শেষ করতে পারলাম না অথচ এনামুল হক বিজয় আউট হয়ে গেল?
রান ৫২! বেশ ঐতিহাসিক সংখ্যা। আমাদের বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার বছর। এরই মধ্যে আফগানিরাতো দেখছি বেশ জোঁকের মতো চড়ে বসেছে। প্রতি বলেই হুংকার! বলতে বলতে আরেকটি উইকেট পড়ল। চার উইকেটে ১১৯। কি ব্যাপার, এ কী কান্ড, দর্শক সারি থেকে এ কী শব্দ শুনছি; ভুয়া ভুয়া…
এবার দৃশ্যপটে পরিবর্তন। ক্রিকেটের রঙ্গমঞ্চে সাকিব- মুশফিক হাজির। আমাদেরও আশায় বুক বাঁধা শুরু।
কি হবে এবার, হারবে নাকি পারবে? ভাবতে ভাবতে মুশফিক-সাকিব ৫০ রানের পার্টনারশিপ গড়ে তুলল। হয়ত এমন কোন দুর্গ নয়। কিন্তু বর্তমান যে পরিস্থিতি তাতে এটাইবা কম কী।
এদিকে মুশফিকের ৪০ বলে ৫০ রান আমাদের আশার পালে মৃদুমন্দ হাওয়া ছড়িয়ে দিল। কল্পনায় সাত রং দিয়ে এক একটি আনন্দবাণী প্রস্তুত হচ্ছে মনের মণিকোঠায়। সত্যিইতো, এবারকার মতো বাংলাদেশের পাল বোধয় নোঙরে ভিড়তে পারবে।
এদুজন মিলে যেভাবে দুই-চার-ছয় মেরে যাচ্ছে। তাতে আশা করতে দোষ কি? আমরাতো আশা নিয়েই বেঁচে আছি। তাই না? এর পরেই আকাশে উড়তে থাকা রঙিন ফানুসটি আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠল বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার বাংলাদেশের সাকিব আল হাসানের ৪৩ বলে ৫০ রান করার পর। এবারতো ছোট গল্প বড় হতে চলল।
রানের চাকা বেশ নিয়মের গতিতেই চলছে। কিন্তু গল্পেতো ক্লাইমেক্স থাকতে হবে, তাইনা? তারই ধারাবাহিকতায় এইমাত্র ছক্কা মারলো সাকিব। সবার মুখে খুশির ছোঁয়া। ঠিক তার পরের বলেই আউট! কি বলব বুঝতে পারছি না। চারদিকে করুণ সুরের হুংকার নাকি একে বিরহের ঝংকার বলব ।
এইমাত্র বোল্ড হয়ে গেল সাকিব আল হাসান, ৫১ বলে ৬৩ রান করে। যদিও মুশফিক-সাকিবের ওপর ভর করে বাংলাদেশের বর্তমান স্কোর ২৩৬ রান ৫উইকেটে। যাক সেসবক কথা। এবার মুশফিকের সাথে এসে যোগ দিল সাব্বির। কিছু ভাবার আগেই ৮বলে ৩ রান করে সাব্বির আউট। তখনও আশার প্রদীপ মিটমিট করে জ্বলছিল।
কিংকর্তব্যবিমুঢ়, বেশ কিছু সময় আগেই হয়ে গেছি। তাই এখন কি বলব বুঝতে পারছি না। কারণ এইমাত্র ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে গেল বাংলাদেশের আশার প্রদীপ হয়ে জ্বলতে থাকা মুশফিক। এখন বর্তমানে ২৪৭ রান ৭ উইকেট।
এবার এল ইনজুরিকে প্রতিনিয়ত পরাজিত করে এগিয়ে চলা বর্তমান বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফি। এসেই চার উৎসব। কিন্তু বন্যা-খরা আর নানান সমস্যায় জর্জরিত এই দেশের মানুষের আশার ফানুস বারবার জ্বালাতে হয়। কারণ তা বারবার নিভে যায়। রান আউট হল মোমিনুল হক ।
এখনও শেষ হয়নি; ঠিক তার পরেই বোল্ড মাশরাফি। ৪৯ ওভার শেষে ২৬৩ রান ৯ উইকেটে। বেশি সময় আর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হল না; ৪ রান যোগ করেই সব উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ ইনিংস শেষ ২৬৭ রানে। এ পুঁজি নিয়ে কতদূর পাড়ি দিতে পারবে প্রতিনিয়ত লড়াই করে বেড়ে উঠা আফগানদের সাথে তা বলা সত্যিই মশকিল।
হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা। দেখা যাক, আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পথ কতদূর হয়। নোঙর জয়ের তীরে ভীড়বেতো? একটু অপেক্ষা করতে হবে এ উত্তরের জন্য।