পূর্ণাঙ্গ রায়ে কামারুজ্জামানের ফাঁসি বহাল
আদালত প্রতিবেদক, প্রতিক্ষন ডটকম
মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়েছে।
বুধবার বেলা ১২টা ৩৫ মিনিটের সময় পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন আপিল বিভাগ।
এর আগে গত ২০১৪ সালের ৩ নভেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
ওই দিন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগ এ রায় ঘোষণা করেন।
বেঞ্চের অপর তিন সদস্য হলেন, বিচারপতি মো. আব্দুল ওয়াহাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এবং বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। এটি আপিল বিভাগের তৃতীয় রায়।
এর আগে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে ট্রাইব্যুনালের দেয়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড থেকে ফাঁসির রায় দিয়েছিলো আপিল বিভাগ। আর জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ফাঁসির দণ্ড থেকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয় আপিল বিভাগের রায়ে।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর একই বেঞ্চে শুনানি শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখা হয়। এর আগে এ মামলায় ট্রাইব্যুনালের রায়ে মৃত্যুদণ্ড দিলে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন কামারুজ্জামান।
২০১৩ সালের ৯ মে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
তার বিরুদ্ধে গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, নির্যাতন, লুটপাটসহ প্রসিকিউশনের আনা সাতটি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটিই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় মৃত্যুদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয় ট্রাইব্যুনাল।
এছাড়া বাকি দুটি অভিযোগ প্রমাণ হয়নি মর্মে তাকে খালাস দেওয়া হয়। পরে ২০১৩ সালের ৬ জুন ট্রাইব্যুনালের দেয়া ফাঁসির আদেশ থেকে খালাস চেয়ে আপিল করেন কামারুজ্জামানের আইনজীবীরা। আপিলে ২ হাজার ৫৬৪টি মূল ডকুমেন্ট, ১২৪টি গ্রাউন্ডসহ সর্বমোট ১০৫ পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট জমা দেয়া হয়।
কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ২০১২ সালের বছরের ৩১ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল-১। পরে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপুর এক আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৬ এপ্রিল মামলাটি ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে ট্রাইব্যুনালে-২ স্থানান্তর করা হয়। আর ৪ জুন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
২০১২ সালের ১৫ জুলাই থেকে ২০১৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) আব্দুর রাজ্জাক খানসহ রাষ্ট্রপক্ষের মোট ১৮ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন। কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন, ১৯৭১ সালে ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি হামিদুল হক, শেরপুরে কামারুজ্জামানের স্থাপন করা আলবদর ক্যাম্প ও নির্যাতন কেন্দ্রের দারোয়ান মনোয়ার হোসেন খান মোহন, মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল হক মুন্সী বীরপ্রতীক।
মুক্তিযোদ্ধা ফকির আব্দুল মান্নান, মুক্তিযুদ্ধের শহীদ গোলাম মোস্তফা হোসেন তালুকদারের ছোট ভাই মোশাররফ হোসেন তালুকদার, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা বদিউজ্জামানের বড় ভাই ডা. মো. হাসানুজ্জামান, লিয়াকত আলী, মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদের পুত্র জিয়াউল ইসলাম, এডভোকেট আবুল কাশেম, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পরিবারের সন্তান মো. জালাল উদ্দিন, শেরপুর জেলার ‘বিধবাপল্লী’ নামে খ্যাত সোহাগপুর গ্রামের নির্যাতিত তিন নারী সাক্ষী (ক্যামেরা ট্রায়াল), মুজিবুর রহমান খান পান্নু এবং দবির হোসেন ভূঁইয়া। আর জব্দ তালিকার প্রথম সাক্ষী হলেন বাংলা একাডেমির সহকারী গ্রন্থাগারিক এজাব উদ্দিন মিয়া ও মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের তথ্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা আমেনা খাতুন।
অন্যদিকে কামারুজ্জামানের পক্ষে এ মামলায় গত বছরের ৬ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত মোট ৫ জন সাফাই সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। তারা হচ্ছেন মো. আরশেদ আলী, আশকর আলী, কামারুজ্জামানের বড় ছেলে হাসান ইকবাল, বড় ভাই কফিল উদ্দিন এবং আব্দুর রহিম। উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ১৩ জুলাই মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে হাইকোর্ট এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে ওই বছরের ২ আগস্ট তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায়।
প্রতিক্ষণ /এডি/জেসমিন