‘অপারেশন অ্যাসল্ট-১৬’; পাঁচ জঙ্গি নিহত

প্রকাশঃ মার্চ ১৬, ২০১৭ সময়ঃ ৭:৩১ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৯:২০ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম ব্যুরো:

পুলিশের সাহসী অভিযানে এক নারীসহ চার জঙ্গি নিহত হয়েছে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে। অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে আট পরিবারের প্রায় ২০ সদস্যকে।

বুধবার দুপুর থেকে ২০ ঘণ্টা ধরে চলা অভিযানের নাম ছিল ‘অপারেশন অ্যাসল্ট-১৬’।

নিহতদের মধ্যে দুইজন ছিল আত্মঘাতী। তাদের লাশ ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। জঙ্গি আস্তানা থেকে বোমা তৈরির এক্সক্লুসিভ সব সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি কার্টনে এসিড, লিকুইড কেমিক্যাল ও ১২ সেট জেল এক্সক্লুসিভ পাওয়া গেছে।

অভিযান শেষ হওয়ার পর ৫টি গ্রেনেড বিস্ফোরণ করা হয়েছে। ভবনের ছাদে একটি অবিস্ফোরিত শক্তিশালী গ্রেনেড রয়েছে। এটি বিস্ফোরণ করতে গেলে পুরো ভবন ধসে পড়ার আশংকা রয়েছে। সিএমপির বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট কাজ করছে।

পুলিশ জানায়, গতকাল বুধবার দুপুরে সীতাকুন্ড পৌরসভার লামারবাজার আমিরাবাদের সাধন কুটির থেকে জঙ্গি দম্পতিকে তাদের এক শিশুসন্তানসহ আটক করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রেমতলার ছায়ানীড় ভবনে আসে পুলিশ। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে হাতবোমা ছুঁড়ে জঙ্গিরা। এতে তিন পুলিশ সদস্য আহত হন। পরে ঐ বাড়ি ঘিরে রাখে পুলিশের সদস্যরা।

সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে যায় সিএমপির সোয়াত টিম। রাত ৮টার দিকে সিএমপির সোয়াত এবং জেলা পুলিশের সমন্বয়ে গঠিত টিম গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে সড়ক থেকে আস্তানায় প্রবেশের চেষ্টা করে। এসময় হ্যান্ডমাইকে জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের আহ্বানও জানায় পুলিশ। কিন্তু জঙ্গিরা ভেতর থেকে গ্রেনেড ছুঁড়ে প্রতিরোধ করতে থাকে। এই অবস্থায় ঢাকা থেকে পুলিশের বিশেষ টিমকে ঘটনাস্থলে আসার জন্য বলা হয়।

বৃহস্পতিবার ভোর ৫টায় ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায় ঢাকার সোয়াত টিম। ডিএমপির সোয়াত টিমের নেতৃত্বে সকাল ৬টা ২০ মিনিটে গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে ‘অপারেশন অ্যাসল্ট-১৬’ অভিযান শুরু করে সিএমপি সোয়াত, জেলা পুলিশ, সিএমপির বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট, কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, র‌্যাব ও পুলিশের সম্বন্বয়ে গঠিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এ সময় অভিযানে ভবনের ভেতরে আটকে পড়া ২০ জনকে উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়া নারীসহ চার জঙ্গির মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি এম সাখাওয়াত হোসাইন প্রতিক্ষণকে মুঠোফোনে জানান, ‘এক দুঃসাহসিক অভিযান পরিচালনা করেছি। কারণ বাড়ির ভেতর প্রায় ২০ জন সদস্য আটকা ছিল। তাদের অক্ষত বের করাই ছিল আমাদের টার্গেট। সাথে জঙ্গিদের গ্রেপ্তার করা। আশাকরি আমরা সফল অভিযান পরিচালনা করেছি।’

এ ঘটনায় চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, তাদের লক্ষ্য ছিল বিদেশিদের ওপর হামলা করে মিরসরাই-সীতাকুন্ড অঞ্চলে বিদেশি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করা। আমরা নিশ্চিত এরা নিষিদ্ধ ঘোষিত উগ্র সংগঠন ‘নব্য জেএমবি’। তারা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বড় ধরনের নাশকতার লক্ষ্যে প্রচুর গ্রেনেড ও বিস্ফোরক মজুদ করেছিল আস্তানায়।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, দ্বিতল ভবনটিকে প্রতি ফ্লোরে চারটি করে মোট আটটি ও পাশের একটিসহ মোট ৯টি পরিবার বাস করতো। এর মধ্যে একটি ফ্ল্যাট জঙ্গিরা ভাড়া নিয়েছিল। রাতভর অভিযানকে কেন্দ্র করে আশপাশের এলাকার পরিস্থিতি থমথমে হয়ে উঠে। সাধারণ মানুষদের মাঝে আতংক বিরাজ করে। স্কুল-কলেজ সহ অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ ছিল।

প্রতিক্ষণ/এডি/শাআ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G