অবৈধ বালি উত্তোলন; শিবপুরে ভাঙন আতঙ্কে গ্রামবাসী
শরীফ ইকবাল রাসেল,নরসিংদী প্রতিনিধি:
নির্ঘূম রাত আর কর্মহীন দিন, এই নিয়ে সময় কাটে শিবপুর উপজেলার দুলালপুরের কয়েকটি গ্রামের সাধারণ মানুষের। কারণ একটাই, থেমে নেই বালি ব্যবসায়ীদের অবাধে বালি উত্তোলন। যার ফলে কার বাড়ি কখন দেবে যায়, এই আতঙ্কে দিন পার করছেন ঐ ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষগুলো।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শিবপুর উপজেলায় দুলালপুর ইউনিয়নের মির্জাকান্দি, দত্তেরগাও, চন্ডিবরদী এলাকাসহ আরো কয়েকটি গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় ফসলি জমি ও বাড়ী করার জায়গা; এমনকি কোথাও কোথাও বাড়ির পাশ থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করায় একদিকে মারাত্মভাবে ফসলি জমি বিনষ্ট হচ্ছে, অপরদিকে এক এক এক করে ভিটেহারা হচ্ছেন ঐসব গ্রামের মানুষ।
স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তি ও প্রশাসনের ছত্রছায়ায় একটি মহল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ইউনিয়নজুড়ে এভাবে দিন-রাত বালি উত্তোলন করে যাচ্ছে। প্রশাসন জেনেও না জানার ভান করে বসে আছেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
বিগত সময়ে এভাবে বালি উত্তোলনের ফলে বেশ কয়েকটি বাড়ি ভাঙনের কবলে পড়লে কিছু দিনের জন্য বন্ধ থাকে এই অবৈধ কর্মকান্ড। তবে পুনরায় বালি উত্তোলন শুরু হয়।
প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে যাচ্ছে বালুভর্তি ট্রাক। বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ভাগ পাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসনসহ ক্ষমতাসীন দলের নেতারাও। দীর্ঘ প্রায় ১০/১৫ বৎসর যাবৎ অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। অভিযোগ আছে, স্থানীয় প্রশাসনও তাদের হাতে। প্রায় শতাধিক ব্যক্তি অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছেন বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।
জানা যায়, প্রত্যেক বালি ব্যবসায়ী স্থানীয় রমিজ উদ্দিন মাস্টারের নিকট প্রতিমাসে দশ হাজার টাকা মাসোয়ারা দিচ্ছেন স্থানীয় নেতৃবৃন্দসহ প্রশাসনকে ম্যানেজ করার জন্য। এভাবেই সকল কিছু ম্যানেজ করে তারা অবৈধ বালু উত্তোলন করে আসছেন। এ বিষয়ে রমিজ উদ্দিন মাস্টারের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে তাকে খোঁজে পাওয়া যায়নি। অসাধু ব্যসায়ীদের দাপটে এলাকার সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করতেও সাহস পাচ্ছে না। বালি ব্যবসায়ীরা স্থানীয় প্রভাবশালী ও উর্দ্ধতন রাজনৈতিক ব্যক্তিকে বসিয়ে বালি উত্তোলন করে বলেও অভিযোগ করেন ভুক্তবোগী এলাকাবাসী। এছাড়া তাদের দৌরাত্ম এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এই এলাকার সংবাদ সংগ্রহের জন্য সাংবাদিকরা এগিয়ে গেলে বালি ব্যবসায়ীদের পালিত সন্ত্রাসীদের হাতে বেশ কয়েকবার নাজেহাল হয়েছেন একাধিক সাংবাদিকও।
বালি ব্যবসায়ী শহিদুল্লা জানান, আমরা প্রতি মাসে দশ হাজার টাকা রমিজ উদ্দিন মাস্টারের কাছে দিয়ে বালু উত্তোলন করছি। বালু উত্তোলন করার জন্য অনুমোদন নিয়েই আমরা বালু উত্তোলন করছি।
এলাকাবাসী জানান, ফসলি জমি থেকে ইঞ্জিন চালিত মেশিন দিয়ে বালি উত্তোলনের ফলে একদিকে যেমন ফসল নষ্ট হচ্ছে অন্য দিকে এলাকার রাস্তাঘাট ও বাড়ী-ঘর ভেঙে স্থানীয় রাস্তাঘাট মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এভাবে বালি উত্তোলনের ফলে যার জমি ভেঙে যাচ্ছে তারাই আবার অল্প দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। বালি উত্তোলন বন্ধ করার জন্য বহুবার জেলা প্রশাসক ও শিবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকতার নিকট দরখাস্ত দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
স্থানীয় দুল্লালপুর ইউপি চেয়ারম্যান মিঞা হোসেন নাজির বলেন, এলাকাবাসী আমার কাছে আবেদন জানালে আমি কিছু করতে পারি না। কারণ আমারতো আর পুলিশ নেই। এছাড়া এলাকাবাসী আবেদন নিয়ে আসলে আমি সুপারিশ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়েছি।
স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্থরা জানান, ‘আমাদের বাড়ি ঘর ভেঙে গেলেও তাদের কিছু আসে যায় না। এছাড়া থানা থেকে এক দারগা আসে মোটা অংকের টাকা উপার্জন করে বদলি হয়ে চলে যায়। আবার আরেক দারগা আসছে। এই ভাবেই চলছে দীর্ঘদিন ধরে। বাড়ির পাশে পঞ্চাশ হাত গভীর করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। এতে বাড়ি ভাঙনের আতংকে আছি আমরা। আমরা যদি সরকারের জনগণ হতাম তাহলে সরকার অবশ্যই দেখতো। এই রাস্তা দিয়ে কি সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা চলাফেরা করে না? কারো চোখে তা পরে না, এই বাড়ি ঘরের কি হবে? কোথায় যাবো আমরা? আমরা সরকারের কাছে জোড় দাবি জানাই এলাকার স্বার্থে বালি উত্তোলন বন্ধ করে এলাকার সাধারন মানুষকে বাচাঁন’।
শিবপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোস্তফা মনোয়ার জানান, আমরা একাধিকবার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছি, জরিমানাও আদায় করেছি কিন্তু এলাকার কিছু প্রভাবশালী মহল আর জনগনের অসচেতনতার কারণে তা বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো: মাহাবুব হাসান শাহীন জানান, আমি নতুন এসেছি, অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করার বিষয়ে জানা নেই। তাছাড়া লিখিত অভিযোগও পাইনি। যেহেতু আপনার মাধ্যমে জেনেছি। জানার সাথে সাথেই শিবপুরের ইউএনওকে টেলিফোনে জেনে এর সত্যতা পেয়েছি। এখন এর দ্রুত ব্যবস্থা নেবো।
প্রতিক্ষণ/এডি/শাআ