অভিযুক্ত ধর্ষকদের হত্যা করে চলেছেন ছন্মনামধারী হারকিউলিস

প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১৯ সময়ঃ ১২:২০ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১২:২০ অপরাহ্ণ

গ্রীক পূরাণের বীর ‘হারকিউলিস’ এর সাহসিকতার কথা আমরা অনেকেই জানি। তবে গত কয়েকদিন ধরে‘হারকিউলিস’ ছদ্মনামে ধর্ষণ মামলার আসামিদের হত্যা করে চলেছে কেউ একজন। তার পরিচয় এখনও জানা যায়নি। কেন তিনি নিজেকে ‘হারকিউলিস’ ছন্মনামে পরিচয় দিচ্ছেন? কেন ধর্ষণ মামলার আসামিদের হত্যা করে চলেছেন তিনি। এ বিষয়গুলোর কোনো সুরাহা হয়নি এখনও পর্যন্ত। আড়ালেই আছেন এই ছন্মনামধারী হারকিউলিস।

এ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এমন তিনটি মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ যাদের গলায় ঝুলানো ছিল একটি চিরকুট। সেখানে লেখা ছিল, খুন হওয়া ব্যক্তিরা ধর্ষক। প্রথম ও দ্বিতীয় মরদেহের ক্ষেত্রে কোনো দায় স্বীকার না করলেও তৃতীয় মরদেহের সঙ্গে একটি চিরকুটে নিজেকে হারকিউলিস বলে দাবি করেন অজ্ঞাত হত্যাকারী।

ঘটনার সূচনা হয়েছে গেলো ১৭ জানুয়ারি। রাজধানী ঢাকার অদূরে সাভার থেকে একজন নারী গার্মেন্টস শ্রমিককে গণধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় মূল সন্দেহভাজন রিপনের (৩৯) গলায় চিরকুট ঝোলানো মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে ৭ জানুয়ারি রিপন ও অপর তিন সহকর্মীর বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়েরের পর আশুলিয়ার বেরুন এলাকায় নিজ বাড়িতে ১৮ বছর বয়সী ঐ নারীর মরদেহ পাওয়া যায়। এরপর ঐ নারীর বাবা তার মেয়েকে হত্যার ঘটনায় রিপন ও অপর তিনজনকে অভিযুক্ত করে আশুলিয়া থানায় অপর একটি মামলা করেন।

এরপর ১৮ জানুয়ারি ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলা থেকে রাকিব (২০) নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তার গলায়ও ঝোলানো ছিলো চিরকুট। তিনিও সন্দেহভাজন ধর্ষণকারী। নিহত রাকিব একজন মাদ্রাসা ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় ভান্ডারিয়া থানায় দায়েরকৃত মামলার আসামি ছিলেন। রাকিব একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র। রাজাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রাকিবের মরদেহ পাওয়া গেছে। সম্ভবত কয়েক ঘণ্টা আগে তাকে গুলি করা হয়েছিলো।

এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। তবে হারকিউলিসের ব্যাপারে তিনি এখনও কিছু জানতে পারেননি বলে জানান ওসি জাহিদুল। এরপরের ঘটনা ঘটে ২৪ জানুয়ারি। ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলায় গলায় চিরকুট ঝোলানো সজলের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সন্তান হত্যার ঘটনায় গত ২৬ জানুয়ারি সজলের বাবা শাহ আলম জমাদ্দার কাঠালিয়া থানায় একটি মামলা করেন বলে জানান ঐ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এনামুল হক।

তিনি বলেন, ‘মামলায় ধর্ষণের শিকার হওয়া নারীর বাবাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। গত ২২ জানুয়ারি ঢাকা থেকে সজলকে অপহরণ করা হয়। পরে তাকে গুলি ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে হত্যা করা হয়।’ এ মামলাটিও তদন্তের আওতাধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।

মনোবিজ্ঞানী আশীক মোহাম্মদ বলেন, ‘ধর্ষণ দেশে নতুন নয়। গণমাধ্যমের কারণে এ বিষয়টি নতুন মাত্রা পেয়েছে মাত্র। এটা সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিরই বহিঃপ্রকাশ। আর দেশে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটে যাওয়া আর বিপরীতে যথাযথ বিচার না হওয়ার কারণে মানুষের মধ্যে সংবেদনশীলতা কমে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে বাধ্য হয়েই কেউ আইন হাতে তুলে নিয়ে থাকতে পারে’।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং সমাজবিজ্ঞানী মাহবুবা নাসরীন বলছেন, ‘অনেকে দেখছেন অনেক ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে কিন্তু বিচার তো হচ্ছে না। বাইরে মিটমাট হয়ে যাচ্ছে। অনেক দেশে কিন্তু দ্রুত বিচার আইনে সাজা হয় এবং মানুষ তা দেখে সচেতন হয়। তবে সেটা না হলে ভবিষ্যৎ জীবনে এ ধরনের ঘটনায় প্রতিশোধের বশবর্তী হয়ে ধর্ষণের শিকার নারী বা তার স্বজন অপরাধে জড়ানোর শঙ্কা থাকে’।

 

প্রতিক্ষণ /এডি/ অনু

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G