আজ শুধু বিদ্রোহী কবির দিন
শারমিন আকতার :
আজ শুধু আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের দিন। তাঁর কবিতা আমার মতো অনেককে সাহসী হয়ে উঠার শক্তি দেন। হৃদয়ের মণিকোঠায় লুকানো কৌটোটিতেই সযতনে তাঁর নামটি লেখা আছে। আর থাকবে নাই বা কেন, তিনি তাঁর কবিতা-গানে যে সাহস দেখিয়েছেন; তাতো আমাদের মাঝে ছড়িয়ে গেছে আগ্নেয়গিরির অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো।
হে কবি, আমরা আপনার গুণগ্রাহী। যতদিন বাংলার সীমানায় আপনার শুভাকাঙ্খিরা থাকবে; ততদিন বাংলার আকাশে-বাতাসে আপনার নাম উচ্চারিত হবেই। এ আমাদের বিনম্র প্রতিজ্ঞা।
‘মহাবিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত আমি সেই দিন হব শান্ত,
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না,
অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না।’
হে চির বিদ্রোহী কবি, আপনার অযাচিত উদ্ধত মনের গগণবিদীর্ণ করা অনলে আমাদেরও ভষ্ম করে দিন। তাহলে হয়তো তিমির থেকে সবিতার আলোই আমরা আলোকিত হতে পারবো। দগ্ধ চিত্তে বাজাও বিষাণ , ওড়ান নিশান! বৃথা ভীড়ু সমঝায়! রণ দুর্ম্মদ রণ চায়!
আজ দেশে দেশে যত তিক্ত ক্রন্দন ছল-ছল করে খুঁজে ফিরছে মুক্তির-নিশীথ।
‘দিলওয়ার তুমি, জোর তলওয়ার হানো আর
নেস্ত-ও-নাবুদ কর, মারো যতো জানোয়ার!’
আপনি বলেছেন, সে- যুগ হয়েছে বাসি,
যে যুগে পুরুষ দাস ছিল নাক’, নারী আছিল দাসী!
তাই এখন, ‘কেহ রহিবেনা বন্দি কাহারও, উঠিছে ডঙ্কা বাজি’।
অস্পৃস্য পাষাণরা ভুলে গেছে আপনার সাবধান বাণি, ‘ নর যদি রাখে নারীরে বন্দী, তবে এর পর যুগে
আপনার রচা ঐ কারাগারে পুরুষ মরিবে ভুগে। ‘
‘যুগের ধর্ম এই–
পীড়ন করিলে সে পীড়ন এসে পীড়া দেবে তোমাকেই!’
‘শোনো মর্তের জীব !
অন্যেরে যত করিবে পীড়ন , নিজে হবে তত ক্লীব!’
‘সেদিন সুদূর নয়—
যেদিন ধরণী পুরুষের সাথে গাহিবে নারীও জয় !’
ওহে কবি, জীবনের জয়গান আপনিই গেয়েছেন। যৌবনের মিছিল আপনিই দেখিয়েছেন। তাই আজ জয়ের নিশান আপনার হাতে। চির বিদ্রোহী বীরতো আপনিই–
আমি চির-বিদ্রোহী বীর-
আমি বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির উন্নত -শির’ !