সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষ থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে একসঙ্গে কাজ করুন: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশঃ অক্টোবর ১৭, ২০২২ সময়ঃ ৮:৪২ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৮:৪২ অপরাহ্ণ

‘আমি আবারো অনুরোধ করছি- কোনো খাদ্যের অপচয় নয়, যার যেখানে যতটুকু জমি আছে তা চাষের আওতায় এনে খাদ্য উৎপাদন বাড়ান। সারাবিশ্বে যে দুর্যোগের আভাস আমরা পাচ্ছি তা থেকে বাংলাদেশকে সুরক্ষিত করুন। আমি বিশ্বাস করি, সবার প্রচেষ্টায় এটা করা সম্ভব।’- কথা গুলো আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সে বলেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে সম্ভাব্য বৈশ্বিক দুর্ভিক্ষ বা খাদ্য সংকট থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করার পাশাপাশি প্রতি ইঞ্চি জমি চাষের আওতায় এনে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সোমবার সকালে ‘বিশ্ব খাদ্য দিবস-২০২২’ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে কৃষি মন্ত্রণালয় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

শেখ হাসিনা বলেন, পুষ্টিকর খাদ্য, সুষম খাদ্য, নিরাপদ খাদ্য- এটাই আমরা নিশ্চিত করতে চাই। যা কেবল আমাদের দেশের মানুষ নয়, সারাবিশ্বের মানুষেরই এটা একান্তভাবে প্রয়োজন। খাদ্যের  চাহিদা কোনোদিন কমে না, বরং বাড়ে সেই কথা মনে রাখতে হবে। কাজেই আমি যত উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারি, আর যত বেশি খাদ্য চাহিদা মেটাতে পারি ততই আমাদের মঙ্গল হবে। এটি আমাদের অর্থনীতিতেও বিরাট অবদান রাখতে পারে ‘ নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও পুষ্টির চাহিদা পূরণে সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেন, আমি বলবো সুষম খাদ্য গ্রহণ করা, খাদ্যের অপচয় বন্ধ করা এবং উদ্বৃত্ত খাদ্য সংরক্ষণ এবং পূর্ণব্যবহারের ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া সারাদেশে গড়ে তোলা ১শ’ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে যেন কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পও গড়ে ওঠে সে বিষয়েও আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। নিজের খাবার নিজেরা উৎপাদন করার চেষ্টা করবেন, যেন পরিবেশের ওপর চাপ কমে, বাজারের ওপর চাপ কমে। সবাই মিলে কাজ করলে অবশ্যই আমাদের বাংলাদেশের ওপর কোনো রকম আঘাত আসবে না, এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এবং কৃষি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন কৃষিসচিব মো. সায়েদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে বিশ্ব খাদ্য দিবস এবং কৃষি খাতের উন্নয়নে সরকারের প্রচেষ্টা নিয়ে একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি অর্জনে ৬টি থিম্যাটিক এরিয়াতে কাজ করে যাচ্ছি। প্রথমত, কৃষি গবেষণা এবং উন্নয়ন; দ্বিতীয়ত, কৃষি উপকরণ সরবরাহ; তৃতীয়ত, কৃষি সম্প্রসারণ; চতুর্থত, সেচ কাজে পানির সাশ্রয়ী ব্যবহার; পঞ্চমত, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবিলা এবং ৬ষ্ঠত, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও মানবসম্পদ উন্নয়ন। এ বিষয়গুলোর দিকে লক্ষ্য রেখেই তার সরকার প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়ে যাচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। সরকার নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩ প্রণয়ন করেছে, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কতৃর্পক্ষ প্রতিষ্ঠাসহ সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধিবিধান তৈরি করেছে এবং ২০১৮ সাল থেকে নিরাপদ খাদ্য দিবস পালন শুরু করেছে। ভেজাল খাদ্য প্রতিরোধে ‘অন দ্য স্পট স্ক্রিনিং,’ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে এবং যারা খাদ্যে ভেজাল দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেন মানুষ নিরাপদ খাদ্য পেতে পারে। আর এ নিরাপদ খাদ্যটাই হচ্ছে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিরাপদ খাদ্য কতৃর্পক্ষের প্রধান কার্যালয় স্থাপন এবং কেন্দ্রীয় ও বিভাগীয় ল্যাবরেটরি স্থাপনে পূর্বাঞ্চলে ৫ একর জমিও বরাদ্দ করেছে। আট বিভাগে আটটি রেফারেন্স ল্যাবরেটরি স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে এবং নিরাপদ খাদ্য কতৃর্পক্ষের হটলাইন চালু করা হয়েছে। ‘কৃষি সম্প্রসারণ নীতি- ২০২০’ আমরা প্রণয়ন করেছি এবং এসডিজি বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমাদের ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় কৃষি সংশ্লিষ্ট যাবতীয় বিষয় অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। যেন নিরাপদ খাদ্যটা আমরা মানুষকে দিতে পারি, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই এগুলো করা হয়েছে। আমাদের যারা কৃষিবিদ তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই, কেননা আমাদের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে তাদের বিরাট অবদান রয়েছে। পাশাপাশি আমাদের কৃষকদেরও ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই, যেহেতু আজকে তারা আমাদের এ খাদ্যের যোগানটা দিচ্ছে। কাজেই তাদের সম্মান ও সহযোগিতা করাটা একান্তভাবেই অপরিহার্য।

সূত্র : বাসস

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

September 2024
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
20G