আমি কি কারো টাকায় চলি?

প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৫ সময়ঃ ৩:৪৫ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১১:৩৩ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিক্ষণ ডটকম:

images‘ভাত খাই। ভাত খাওয়ার পর বাকি টাকা দিয়া বিকালে বন্ধুদের লগে ঘুরি। সেন্টার ফ্রুট খাই। আরও যা ইচ্ছা খাই।

পাঁচ টাকা রাইখ্যা বাকি টাকা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ঘুইর‌্যা বেড়াই।’ আমার ভালোলাগার জায়গাতে চলে যাই ।

সব জায়গাই আমার চেনা জানা । সুমনকে দেখতে ঠিক যেন ধূলিমাখা ফুলের মতো। জীবনের সতেজতার উপর ধূলোর আস্তরন। ছেঁড়া হ্যাফপ্যান্ট, হাফহাতা ময়লা শার্ট।

একাধিক সেলাইয়ের পরও শার্টটি বেশ কয়েক জায়গায় ছেঁড়া। শীত ঢাকতে ছেঁড়া লুঙ্গিতে শরীর মোড়ানো ছেরেটির। সদরঘাটে একটি লঞ্চের ছাদে শুয়েছিল আট বছরের এক শিশু।

হঠাৎ এক দৌঁড়ে অন্য লঞ্চের জানালা বেয়ে ভেতরে ঢুকে গেল সে। মিনিট পাঁচেক পরেই তিনটি খালি পানির বোতল নিয়ে শিশুটি আগের জায়গায় ফিরে এলো।

কাজের সন্ধানে তার পরিবার গ্রামের বাড়ি বিক্রমপুর ছেড়ে রাজধানীর রায়েরবাগে এসেছে দীর্ঘদিন। সেখানেই থাকেন তার বাবা-মাসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা। এরই মধ্যে সুমনের একমাত্র বোনকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইতেই শিশুসুলভ জবাব-‘বাড়ি আছিলো বিক্রমপুর। মা-বাপে রায়েরবাগে থাকে। তারা কাম করে। আমিও করি। দিনে ১০০ থেকে ২০০ টাকা কামাই।’

‘লঞ্চের ভেতর থেক্যা বোতল টোকাই। সকাল থেকেই বোতল কাম শুরু করি। একটা দুই লিটারের খালি বোতল দিলে দুই টাকা পাই। এখানে বোতল কেনার লোক আহে, তাদের কাছে বোতল বেইচ্যা দিই। দিনে কুনো সময় ৫০ থেকে ১০০টা বোতল বিক্রি করি।’

পাঁচ টাকা রাখার কারণ জানতে চাইলে সে বলে, ‘নদীর ওপারে দুইডা জায়গা আছে। সেই জায়গাডায় আমরা রাত কাটাই। আমার মতো আরও কয়েক শিশু থাকে। কারও বয়স ৭, ৮ কিংবা ৯ বছর। পাঁচ টাকা দিলেই ওরা আমাগো থাকতে দেয়।’

পরিবারের অভাবের কারণে বোতল টোকানোর কাজ করে কিনা, জানতে চাইলেই তীব্র প্রতিবাদ তার- ‘কেন? আমার বাড়িতে থাকতে ইচ্ছে করে না, আমি কেন বাড়ি থাকুম। মাঝে-মধ্যেই বাবা-মা, বোন আহে আমারে ধইর‌্যা নিয়া যাইতে। আমি পালাইয়া যাই।’

সে বলে, ‘বাড়িতে থাকতে আমার ভাল লাগে না। তাই রায়েরবাগের এক বন্ধুর লগে সদরঘাটে চইল্যা আইছি। ও আগেই এহানে থাকত। এখানে থাকতেই খুব ভাল লাগে। নিজের টাকা দিয়্যা নিজে চলি। আমি ভিক্ষা করিনে? আমি কি কারো টাকায় চলি? নিজের টাকা দিয়া নিজে খাই। আমার টাকা দিয়া সেন্ট্রারে ঘুমাই। এটাই ভাল লাগে।’

তার সঙ্গে কথা বলে চলে আসার আগেই আরও কিছু শিশু ভিড় জমায়। এ সব শিশুরা প্রায় সবাই বাবা কিংবা মা হারিয়ে কিংবা দরিদ্রতার কারণে সদরঘাটে জীবনের ঠাঁই খুঁজে। কেবল সুমনই বাবা-মা ছেড়ে ‘স্বনির্ভর’ হতে সদরঘাটে এসেছে।

 

প্রতিক্ষণ/এডি/ইসলাম

 

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G