আমি যেভাবে দুর্নীতিবাজ হলাম…

প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৫ সময়ঃ ৭:০২ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৭:২৫ অপরাহ্ণ

ফজলুর রহমান :

Durniti officeএই ‘তিনি’ অনেকের চেনা। আমাদের মাঝেই থাকেন।…………….তিনি আমার চেয়ে বড় কেউ নন। পদবীতে দুজনই সমান কর্তা। তবে একটি জায়গায় বিরাট ফারাক। টাকার বেলায়। তিনি বান্ডিলে বান্ডিলে নেন। দুই হাতে উড়িয়ে চলেন। তিনি মাসের সামান্য(!) বেতনে হাত দেননা। অবহেলায় পড়ে থাকে ব্যাংকে। একাউন্টকে মেদবহুল করে।

এই ‘আমি’ও কি কম চেনা। সব লোকালয়ে মিলতে পারে।…………আর আমি বেতনে চলি। মানিব্যাগে যতনে রাখি। একটু খরচ। একটু বাঁচানো। এভাবে পুষে রাখি মাসের শেষ দিনটি পর্যন্ত। মেপে মেপে মাসকাবারি দিন চলি। মনের ক্যালকুলেটরে দিন গুজরানের হিসাব। বেগুনের দাম ৫টাকা বাড়লেও দপ্ করে উঠে বুক।

তিনি একটি অধিদপ্তরে কাজ করেন। বিশেষায়িত একটি পেশায় কাজ করেন। কাজ না নির্দেশনা দেয়াই কাজ যেন তার। বাকি কাজ সংশ্লিস্টরাই সেরে দেন। বরং উপরি হিসেবে চলে আসে আরো অনেক অনেক আয়েশ। এই যেমন- বাসায় একদল এসে সেট করে দিল ৫২ ইঞ্চি বিলাসী টিভি। অন্য একটি গ্রুপ তার বাড়ি যাওয়ার রাস্তার পাশপাশি বাড়ির পুকুরটির চারপাশও পাকা করে দিল। হাতের যে আইপড/আইফোন- কোনটাই কিনতে হয়নি তার। তাকে ছাপিয়ে বাসায়ও পৌঁছে যায় হাতে হাতে।

আর আমি-একটি প্রতিষ্ঠানের হিসাব বিভাগের সমান র‌্যাংকে চাকরি করেও যে কেবলাকান্ত। আমার হাত দিয়ে হিসাবের নানা পদ। একটি পদ ঘুরিয়ে দিলেই অন্যের বিপদ। হিসাবের ছলা-কলা আমিও কি কম জানি? ক্ষমতা ফলাতে পারি আমিও। আয়েশ-বিলাস তো আসতে পারে আমার জীবনেও…।

এই পর্যন্ত বলে একটু দম নিলেন এক পরিচিত মুখ। বুঝতে পারলাম-তার বলার আছে আরো বহু। এরই মাঝে আমার মনে উঁকি দিল বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম বর্ষের ক্লাসের একটি স্মৃতিময় দিন। ‘ক্ষমতার অপব্যবহারে দুর্নীতি’র বিষয়ে একটি বিতর্ক সভা যেন ছিল সেদিনের ক্লাস।

প্রথম বর্ষে ক্লাস শুরু করেছি কিছুদিন হয়। শোনা গেল- একজন অতিপ্রিয় শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ছেড়ে দিবেন। বিসিএস-এ র্শীষের দিকে থাকা এই তুমুল মেধাবী যোগ দিবেন প্রশাসনে। ক্লাসের আগেই স্যারের ওই সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে। আমরা স্যারকে ছাড়বো না। যেতে নাহি দেব। পরে বন্ধুপরায়ণ স্যারকে ক্লাসে পেয়ে বসি। একের পর এক প্রশ্ন। বেশির ভাগই স্যারের চলে যাওয়ার বিপক্ষে। ১/২জন অন্য যুক্তিও দেখালেন।

সিংহভাগ বললেন, ‘শিক্ষকতা মহান পেশা, কেন ছাড়বেন। আপনি মেধাবী। আপনার মেধা বিলিয়ে শিক্ষার্থীদেরও তুখোড় করে নিবেন। বিশেষ করে- সাংবাদিকতার মতো বিশেষায়িত পেশায় আপনার মতো বহুমুখী জ্ঞান যারা ধারণ করেন তাদের প্রয়োজনই তো বেশি।’ সংখ্যালঘিষ্ট অংশ বললেন,‘প্রশাসনেও তো মেধা ছড়নো যায়। মেধা ও যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখা যায়। শুধু বিবেক দিয়ে চলবে, ক্ষমতাও আগে বিবেক বাস্তবায়নের জন্য। স্যার এটি এপ্লাই করতে পারবেন।’

স্যার কোনটাতে সায় দিচ্ছিলেন, কোনটাতে বিরুদ্ধে, আবার কোনটাতে মন্তব্য জুড়ে দিচ্ছিলেন। আরো দুইটি বিষয়ে শেষের সেদিন যুক্তি-তর্ক-গল্প হয়েছিল। এই লেখার সঙ্গে ওই দুইটি বিষয় বেশি মানানসই। উল্লেখ করছি মোটাদাগে-

১. আপনার বাড়ি-গাড়ি হবে, তা ভাগাভাগি নিয়ে পরবর্তী প্রজন্ম ঝগড়ায় লিপ্ত হবে, আপনার শান্তি মিলবে না, সুখ চলে যাবে, এখানে থাকেন, দেশের একজন ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি ফাইল নাড়াতে নাড়াতে কেন জীবনের সেরা সময়টা কাটাবেন, পুরো জাতির জন্য কাজ করেন প্লিজ ( স্যারকে না যাওয়ার জন্য সর্বশেষ অস্ত্র প্রয়োগ)।

২. দুর্নীতি মানেই তো খারাপ না, দুর্নীতির টাকা তো সব বিদেশে যায় না। দেশেই থাকে বেশিরভাগ। বিনিয়োগ হয় এখানেই। এদেশেরই মানুষ টাকা দিবেন আবার বিনিয়োগে লাভবান হয় এদেশেরই মানুষ। ধরা যাক- কারো মায়ের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন অর্ধ কোটি টাকা। শিক্ষকতা পেশায় তা কি মিলবে? বরং জনম দু:খী মাকে চিকিৎসা না করিয়ে কি কেউ মরতে দিবেন। হাতে টাকা থাকলেই তো বাঁচবেন। এসব দিকও তো দেখতে হবে। (স্যারকে একটু আগাম খোঁচা মেরে, বারাক ওবামাকে যেমন দায়িত্ব পালন শুরু করতে না করতেই আগেভাগে নোবেল শান্তি পুরস্কার দিয়ে কব্জায় আনার চেষ্টা হয়েছিল, অনেকটা তেমন)।

কোন পন্থাই কাজ করল না। সেই প্রিয় শিক্ষককে বিদায় দিয়েছি কিছু গ্রন্থ উপহারে, বন্ধু রাজু ও বান্ধবী মৌসুমীর হারমোনিয়ামের টানে ‘দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইলো না….’ পরিবেশনায়। জীবনানন্দের ‘আট বছর আগের একদিন…’ আবৃত্তি ঘরে তিনি বিদায় নেন। সেই তিনি এখন একটি মন্ত্রণালয়ের অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা।

ফেসবুকে স্যারের সাথে হয় কথা। লেখালেখিকে তালাক দেননি। একটি ছদœনামে বই-পত্রও বের করে যাচ্ছেন। সসম্মানে ও মেধার পূর্ণতায় দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। স্যারের গায়ে দুনীর্তির দাগ লাগার খবর শুনিনি। …………

স্যারের কথা মনে পড়ে ভালোয় হল। হিসাব বিভাগে কাজ করা সেই পরিচিত মুখের বয়ানও উপরোক্ত দুটি দাগের সাথে যায়। ক্ষমতার অপব্যবহার-দুর্নীতি- ভোগ চক্র।
আবার শুনতে শুরু করলাম———-

আমার এলাকার মানুষ বলেন- ‘আপনি বেশি দান করেন না , আমাদের কাউকে চাকরি দেন না, এলাকায় কোন প্রতিষ্ঠান দেন নি। আপনি আর উনি তো সমান পদে চাকরি করেন শুনলাম।’
কোন দানের বেলায়-তিনি দিতেন কড়কড়ে সবচেয়ে দামী কয়েকটা নোট, আমি হাতড়ে বের করতাম ওই দামীর ছোট ভাইকে, তাও এক-দুটো। চাকরির দেয়ার হিম্মতে-টাকার প্রভাবে প্রতাপ আসে, এরই সূত্র ধরে তার একটি ফোনে, এক কলমের সুপারিশে কাজ হয়, আর আমি তো ৯টা-৫টার চাকুরিকরনেওয়ালা মাত্র, দেনেওয়লাতো দূর অস্ত।

কোন প্রতিষ্ঠান গড়তে- তিনি একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে পেরেছেন, যার অবদানে একজন আরেকজনের নিমিত্তে এগিয়ে আসে, একজন এটা করে দিলে- আরেকজন ওটা করে দেয়, এভাবে গড়া হয়ে যায় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান, এলাকায় পরিচিত হওয়া যায় বিদ্যানুরাগী, সমাজসেবী, দানবীর হিসেবে, পোস্টারে ওই সব পদবীতে ছাপা হয় তার নাম। আমি অপাঙতেয়।

ওই বাড়ির পাশাপাশি আমাদের বাড়ি। ওইখানে বিলাস উঠছে উপরের দিকে। আর আমাদের বাড়িতে চলছে নিম্ন মধ্যবিত্তের চালচিত্র। বিভিন্ন উপলক্ষে ওই বাড়ির মুরব্বীর হাতভর্তি কড়কড়ে টাকা। আমার মুরব্বীগণ সেই টাকা বিলানোর আনন্দ বঞ্চিত। আমার অক্ষমতায় মনক্ষুন্ন হন হয়তো।

ধরা যাক, শেয়ার বা অন্য কোন ব্যবসায় কিছু লগ্নি করলাম। কিন্তু মার খেলে তো আরো বিপদে পড়বো। নি:স্বতর হব। এতদিন জানতাম সাফল্যের শর্টকাট কোন পথ নেই। তবে দুর্নীতিই মনে হয় সেই শর্টকাট পথ। আমাদের এই সমাজে তো টাকার বাহারকেই সফলতার চিহ্ন বলে মেনে নেয়া শুরু করেছে। বিশেষ করে দান-দক্ষিণায় এগিয়ে থাকলে সেই হিরো। সে দানের টাকা যেখান থেকে আসুক না কেন। এমনকি ধর্ম যেখানে মূল্যবোধ গড়ে, নীতি-নৈতিকতা শেখায় সেই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানও যেন তার প্রশংসায় হাসে।

তাই আমি হার মানলাম। চাকরি জীবনের শেষ ধাপে এসে। লাখ-কোটির যে ফাইল হিসাব শাখা থেকে যায় সেখানে অনায্য কাটা-কুটি শুরু করে দিলাম। আমি তখন সিনিয়র। কেউ কথা বলতো না। আমার কর্তাকে হিসাবের মারপ্যাচ বুঝালে ভয়ে কুকঁড়ে যেতেন। আমাকে দমানোর চেষ্টা তুলে নিতেন। নানা ধরনের বিল নেয়ার যে লোকজন আমাকে পাশ কাটিয়ে বড় কর্তার কাছে যেতেন তারা আমার চারপাশে ঘুর ঘুর করা শুরু করে। উপহারসামগ্রীতে আমার মনোরঞ্জন চেষ্টা পুরোদমে।

প্রথম ভেবেছিলাম এসব উপরি আমার পাওনা। পরিশ্রমের ফসল। বেশি চাইব না। আর একটু বেশি পেলে দান-খয়রাত করে দেব। এলাকার গরীব-দু:খীদের জন্য কিছু করব। এইজন্য এই টাকা, এই বিলাস গ্রহন আমার জন্য সমীচীন। পরে একদিন এসে বুঝি- টাকার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত চাহিদার গ্রাফও দ্রুত বাড়ে। যে আমি একটি সামান্য দোকান দেয়ার হিম্মতে ছিলাম সে আমি এখন এক খন্ড জমি, বিলাসী ফ্ল্যাট পেরিয়ে অভিজাতে প্লট নেয়ার চিন্তায়। আর কিছু দিন পর অবসরে যাব।

সেই তিনি অবসরে গেলেন। তবে টাকার মালিক (দুর্নীতিবাজ) হয়ে। যদিও এলাকায় তিনি বাহ্যিকে হিরো। তবে তৃতীয় নয়নে সবাই বুঝেন- কেমন কিসিমের তিনি। কেউ কেউ বলেন, লোকটা খুব ভালো ছিলেন, কেন শেষ সময়ে এসব করলেন?

দান-প্রতিদান কেবল কি টাকায় মিলে? এর পরিণতি কি কেবল হিরোগিরি। আসুন পাঠ করি- ধর্ম থেকে। ভালোবাসা কি কেবল অঢেল টাকায় থাকে?- দেখি একটু খতিয়ে। ইতিহাস পরিণতির কি শিক্ষা দেয়, একটু দেখি তো-

একদিন প্রিয় রাসুল (দ.) রোমের বিশাল বাহিনীর আক্রমন প্রস্তুতির মোকাবেলায় ইসলামের জন্য সাধ্যমত দান করতে বলেন। হযরত উসমান (রা:) ৯০০ উট, ১০০ ঘোড়া, ও এক হাজার দিনার দান করলেন। হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ (রা:) ৪০ হাজার দিরহাম দিলেন। হযরত ওমর (রা:) নিজের বিপুল সম্পদের অর্ধেক হাজির করলেন। রাসুল (দ.) বললেন, ‘পরিবারের জন্য কি রেখে এসেছ?’ জবাবে হযরত ওমর (রা:) বললেন,‘ অর্ধেক রেখে এসেছি।’

ইতিমধ্যে হযরত আবু বকর (রা.) ঘরের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীসহ সমুদয় ধন-সম্পদ নিয়ে উপস্থিত হলেন। তাতে ছিল অল্প কিছু খেুজর, কিছু কানাকড়ি, ব্যবহার্য জিনিসপত্র। বেশি কিছু দিতে না পারায় মন ছোট করে ছিলেন হযরত আবু বকর (রা.)। নবী মোস্তফা (দ.) বললেন-পরিবারের জন্য কি রেখে এসেছ? তিনি বললেন, পরিবারের জন্য আল্লাহ ও রাসুল (দ.)কেই রেখে এসেছি, অন্য সব নিয়ে এসেছি। দানের প্রতিযোগিতায় হযরত আবু বকর (রা.)-এর পাল্লা সবার চেয়ে ভারী হয়ে গেল….।

ডেলা আর জিম অতি দরিদ্র দম্পতি। কষ্টেসৃষ্টে দিন চলে তাদের। যদিও দু’জনের মধ্যে ভালোবাসার কমতি নেই। ক্রিসমাসের আগে দু’জনই একে অন্যকে কিছু উপহার দিতে চায়। কিন্তু তারা যে দরিদ্র। ডেলার কাছে আছে মাত্র এক ডলার সাতাশি সেন্ট। একেক সময়ে একটি দু’টি করে পয়সা-পেনি বাঁচানো হয়েছে। মুদি দোকানি, সবজি বিক্রেতা আর কসাইয়ের সঙ্গে তীব্র দরকষাকষি করে। বারবার গুনে দেখেছে ডেলা, হাতে মাত্র এক ডলার সাতাশি সেন্ট। অথচ পরদিন ক্রিসমাস। স্বামী জিমকে কী উপহার দেবে সে। তাদের সম্পদ বলতে জিমের স্বর্ণের হাতঘড়ি আর ডেলার সোনালি চুল। চুলগুলো তার হাঁটুর নিচে নামে এবং পোশাক হয়ে প্রায়ই যেন শরীরকে ঢেকে দেয়। জিমের খুব পছন্দ তার হাতঘড়িটা। আর ডেলার বাহারি চুল।

জিম ভাবে, ডেলার বাহারি সুন্দর চুলের জন্য একটি ভালো চিরুনি কিনে দিতে হবে। আর ডেলা ভাবে, আহা বেচারা জিমের হাতঘড়ির জন্য যেভাবেই হোক একটি প্লাটিনামের চেইন কিনে দিতে হবে। জিম ভাবে, টাকা নেই তো কী হয়েছে! সে নিজের অতিপ্রিয় হাতঘড়িটা বিক্রি করে ডেলার জন্য কচ্ছপের খোল দিয়ে তৈরি একটি চিরুনি কিনবে। আর ডেলা ভাবে, যেভাবেই হোক জিমকে খুশি করতে হবে। তার ঘড়িটার জন্য একটি প্লাটিনাম চেইন কিনতে ডেলা তার বাহারি চুলগুলো বিক্রি করে দেয়। দু’জনেই ভাবে, আজ তারা প্রিয়জনকে চমকে দেবে। একে অপরকে উপহার দিতে গিয়ে ডেলা দেখে জিম তার হাতঘড়িটা বেচে দিয়েছে। আর জিম দেখে, ডেলা তার অতিপ্রিয় চুলগুলো বিক্রি করেছে। ও হেনরির বিখ্যাত প্রেমের গল্প ‘দ্য গিফট অব দ্য ম্যাগি’ প্রেমের জন্য দান-প্রতিদানের এক অনন্য প্রতীক। দানে সামান্য, মানে অনন্য…..।

মৃত্যু শয্যায় মহাবীর আলেকজান্ডার তার সেনাপতিদের ডেকে বলেছিলেন,’আমার মৃত্যুর পর আমার তিনটা ইচ্ছা তোমরা পূরণ করবে। আমার প্রথম অভিপ্রায় হচ্ছে,শুধু আমার চিকিৎসকরাই আমার কফিন বহন করবেন। আমার ২য় অভিপ্রায় হচ্ছে, আমার কফিন যে পথ দিয়ে গোরস্থানে যাবে সেই পথে আমার অর্জিত সোনা ও রূপা ছড়িয়ে থাকবে। আর শেষ অভিপ্রায় হচ্ছে, কফিন বহনের সময় আমার দুইহাত কফিনের বাইরে ঝুলে থাকবে।’

তার সেনাপতি তখন তাকে এই বিচিত্র অভিপ্রায় কেন করছেন প্রশ্ন করলেন। দীর্ঘ শ্বাস গ্রহণ করে আলেকজান্ডার বললেন, ‘আমি দুনিয়ার সামনে তিনটি শিক্ষা রেখে যেতে চাই।

এক. আমার চিকিত্সকদের কফিন বহন করতে এই কারনে বলেছি যে, যাতে লোকে অনুধাবন করতে পারে যে চিকিত্সকেরা কোন মানুষকে সারিয়ে তুলতে পারে না। তারা ক্ষমতাহীন আর মৃত্যুর থাবা থেকে রক্ষা করতে অক্ষম।’

দুই. ‘গোরস্থানের পথে সোনা- দানা ছড়িয়ে রাখতে বলেছি মানুষকে এটা বো সোনা- দানার একটা কণাও আমার সঙ্গে যাবে না। এগুলো পাওয়ার জন্য সারাটা জীবন ব্যয় করেছি কিন্তু নিজের সঙ্গে কিছুই নিয়ে যেতে পারছি না। মানুষ বুঝুক এসবের পেছনে ছোটা সময়ের অপচয়।’

তিন. ‘কফিনের বাইরে আমার হাত ছড়িয়ে রাখতে বলেছি মানুষকে এটা জানাতে পৃথিবীতে খালি হাতে এসেছিলাম, আবার খালি হাতেই পৃথিবী থেকে চলে যাচ্ছি. . . . .।’

 

ফজলুর রহমান, ফ্রিল্যান্স লেখক

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G