আরাকান আর্মি’র আস্তানার সন্ধান
জেলা প্রতিবেদক
বান্দরবানের সীমান্তবর্তী থানচি উপজেলার দুর্গম এলাকাগুলো থেকে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ‘আরাকান আর্মি’র সশস্ত্র সদস্যদের হটিয়ে দিতে গতকাল শুক্রবার তৃতীয় দিনের মতো সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) যৌথ অভিযান চালিয়েছে।
বুধবার রাত ৮টা থেকে সেনাবাহিনী ও বিজিবি জওয়ানরা আরাকান আর্মি লুকিয়ে থাকতে পারে এমন জায়গাগুলোতে চিরুনি অভিযান শুরু করেন।
তবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় অভিযানের অগ্রগতির কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছে না। ওই দিনই সকালে বিজিবির টহলদলের ওপর গুলি চালায় অস্ত্রধারীরা। এরপর তাদের সঙ্গে বিজিবির গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
যৌথ অভিযানের ব্যাপারে বিজিবির বান্দরবান সেক্টর সদর দপ্তর থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে নির্ভরযোগ্য একটি স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, গতকালের অভিযানে বিজিবির মদক ক্যাম্প থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের একটি পরিত্যক্ত আস্তানা খুঁজে পেয়েছে যৌথ বাহিনী। সেখান থেকে সশস্ত্র গোষ্ঠীর ব্যবহার্য বেশ কিছু সামগ্রী উদ্ধারের তথ্য পাওয়া গেলেও বিস্তারিত বিবরণ দিতে পারেনি সূত্রটি।
এদিকে রাঙামাটির রাজস্থলী থেকে গত বৃহস্পতিবার আটক করা আরাকান আর্মির সদস্য অং নং ইয়ং রাখাইনকে (২৫) গতকাল কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাকে যে ‘ডাক্তারবাড়ি’ থেকে আটক করা হয়েছিল সেই বাড়ির দুই তত্ত্বাবধায়ককে আটক করা হয়েছে। তারা হলো মং চ ওয়াং (৩৯) ও চ সুইং অং মারমা (৪২)।
থানচিতে অভিযান চলছে : উপজেলা চেয়ারম্যান ক্য হ্লা চিং জানিয়েছেন, এলাকাবাসীর উৎকণ্ঠা দূর করতে বিজিবির পক্ষ থেকে তাঁকেসহ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মদক ক্যাম্পে ডাকা হয়েছে। তিনি আরো জানান, গতকার সকালে যাত্রা করে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে কিছু পথ গিয়ে সেখান থেকে হেঁটে প্রায় ছয় ঘণ্টায় দুপুর নাগাদ তাঁরা সেখানে পৌঁছেছেন। সেখানে তাঁরা দুই-তিন দিন অবস্থান করতে পারেন।
এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গত বৃহস্পতিবার অভিযান পরিদর্শনে এসে বিভিন্ন আদিবাসী গ্রামের ‘গ্রামপ্রধান’ বা কার্বারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে সন্ত্রাসী নির্মূলে স্থানীয়দের সহযোগিতা চান।
স্থানীয় লোকজন জানায়, সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যরা বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আশপাশের বিভিন্ন গ্রামে অবস্থান নিয়ে জনগণের নিরাপত্তা এবং সন্ত্রাস দমন অভিযানে অংশ নিচ্ছেন। যৌথ অভিযানের কারণে বিচ্ছিন্নতাবাদী আরাকান আর্মির সদস্যরা সরে গিয়ে সীমান্তের কাছাকাছি দুর্গম জঙ্গলে লুকিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মদক এলাকার এক ব্যবসায়ী জানান, রাঙামাটির রাজস্থলীতে চিহ্নিত হওয়া আরাকান আর্মির মূল ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত সেই বাড়ির মালিক ডাক্তার রেং জেং জু ওরফে ডা. রেমেংসুকে গত সোমবারও মদক এলাকায় দেখা গেছে। তবে সশস্ত্র সংঘাতের পর টেকনাফ হয়ে তিনি অন্য কোথাও চলে যেতে পারেন বলে ওই ব্যবসায়ী জানান।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের আশপাশের এলাকাগুলোতে আরাকান আর্মির চার শতাধিক সশস্ত্র সদস্য ছাড়াও ‘আরাকান লিবারেশন পার্টি’ বা এএলপির তিন শতাধিক এবং ‘রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন’ বা আরএসওর ৫০০-৬০০ অস্ত্রধারী রয়েছে। আরাকান রাজ্যকে স্বাধীন করার জন্য গত বছর আরাকান আর্মি, আরাকান লিবারেশন পার্টি ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের মধ্যে একত্রে কাজ করার ব্যাপারে সমঝোতা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাজস্থলীর তাইতংপাড়া কলেজ গেট এলাকায় ডাক্তারবাড়ি হিসেবে পরিচিত একটি সুরম্য বাড়ি থেকে অংকে আটক করা হয়। সেখান থেকে উদ্ধার করা দুটি ঘোড়া, তিনটি মোটরসাইকেল, তিনটি ল্যাপটপ, দুটি ডিজিটাল ক্যামেরা, একটি হ্যান্ডিক্যাম, আরাকান আর্মির তিন সেট পোশাক ও ৩০ গজ থান কাপড়। ওই বাড়ির মালিক রেং জেং জু ওরফে ডা. রেমেংসুসহ দুজনকে আসামি করে থানায় মামলা করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে রাঙামাটি বিচার বিভাগীয় হাকিম আদলতে হাজির করার পর অং নং ইয়ংকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন হাকিম মুহাম্মদ আলী আক্কাস।
রাজস্থলী থানার ওসি অহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে অংকে রিমান্ডে আনার কোনো আবেদন তাঁরা আদালতে জানাননি।
ওসি আরো জানান, রহস্যময় সেই ডাক্তারবাড়ির দুই তত্ত্বাবধায়ক মং চ ওয়াং ও চ সুইং অং মারমাকে তাদের গ্রামের বাড়ি রাজস্থলীর মব্বই পুনর্বাসন পাড়া থেকে গতকাল সন্ধ্যায় আটক করা হয়।
প্রতিক্ষণ/এডি/তাফ