আলোচনা নয়, প্রতিরোধ
দেশে চলমান রাজনৈতিক সমস্যা নিরসনে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে কোনো আলোচনায় বসতে চায় না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। হরতাল-অবরোধ বন্ধে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে আলোচনা না করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন দলটির নেতারা।
‘ঠিকানায় ৭১ বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠনের উদ্যোগে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) মঙ্গলবার সকালে হরতাল-অবরোধসহ চলমান সকল নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে আয়োজিত আলোচনা সভায় এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আজ চারিদিকে মানুষ আর্তনাদ করছে। তাদের আহাজারিতে দেশের বাতাস ভারি হয়ে গেছে। তবে এসব করে শুধু আনন্দিত-পুলকিত হচ্ছেন যিনি, তিনি হলেন খালেদা জিয়া।’
তিনি বলেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) দিনের পর দিন অবরোধ-হরতাল দিয়ে সাধারণ মানুষকে বোমা ও পেট্রোলবোমা মেরে হত্যা করছে। এ পর্যন্ত ৪০ জনকে তারা হত্যা করেছেন।’
আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, ‘নারী-শিশুসহ মানুষের গায়ে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে হত্যার নজির বিশ্বের আর কোনো দেশে নেই। খালেদা জিয়া গতকাল (সোমবার) অবরোধ অব্যাহতের যে ঘোষণা দিয়েছেন তা মূলত হত্যাকাণ্ড অব্যাহত রাখার ঘোষণা। বেগম খালেদা জিয়া দেশনেত্রী নয়, পেট্রোলবোমা নেত্রী।’
খালেদা জিয়ার উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, ‘আপনি ঢাকায় অবস্থান করছেন। সাধারণ মানুষ আপনাকে ঘেরাও করে তাদের ক্রোধের আগুনে পোড়াবে।’
তিনি বলেন, ‘আজ বিএনপি-জামায়াত যে ভূমিকা পালন করছে তা চোর-ডাকাতদের চেয়েও জঘন্য।’
নাশকতাকারীদের শায়েস্তা করার জন্য হাছান মাহমুদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান। একই সঙ্গে দু-এক দিনের মধ্যে এ পরিস্থিতির নিরসন হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ‘একাত্তরে আমরা যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি, আজও তাদের বিরুদ্ধেই লড়াই করে যাচ্ছি। ১৯৯১-৯৬ এ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল বিএনপি। ওই সময় তাদের চরিত্র দেশের মানুষ দেখেছে। আবার ২০০১ সালেও জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠন করেছিল তারা। তখনও তাদের চরিত্র আমরা দেখেছি। বিএনপির রাজনৈতিক চরিত্র নষ্ট হয়ে গেছে। খালেদা জিয়া কিংবা বিএনপি জামায়াতের পেটে ঢুকে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘তাদের এ হত্যা-আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়াকে মামলা থেকে রক্ষা করা এবং একাত্তরের ঘাতকদের সহায়তা করা। জনগণকে জিম্মি করে দাবি আদায় করার রেওয়াজ বাংলাদেশে চালু করতে দেওয়া হবে না।’
সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের সঙ্গে কোনো আলাপ কিংবা সংলাপ নেই। বিএনপি তার রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলেছে। বিদেশে আইএস কিংবা লাদেনের সঙ্গে যেমন আলোচনা হয় না, তেমনি তাদের সঙ্গেও কোনো আলোচনা নেই। একাত্তরে ইয়াহিয়া-ভুট্টর সঙ্গে আলোচনা করে যেমন কোনো লাভ হয়নি তেমনি তাদের সঙ্গেও আলোচনা করেও কোনো লাভ হবে না।’
তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাউকে ছাড় দেবে না। সন্ত্রাসী কাজে যারা অর্থের যোগানদাতা, যারা হুকুম দিয়েছেন তারাও দায়ী। খালেদা জিয়া ও জামায়াতের নেতাদের প্রতিটি হত্যার দায় নিতে হবে। সন্ত্রাসীদের দমন করতে পৃথিবীব্যাপী যে পদ্ধতি প্রচলিত আছে, বাংলাদেশে সন্ত্রাসী দমনে সেই পদ্ধতিই ব্যবহার করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে প্রতিটি পাড়ায়-মহল্লায় সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি গঠন করা হয়েছে। সন্ত্রাসীদের দমন করা হবে। আর বেশি দিন নয়, আর মাত্র কয়েকদিন পরই এ অবস্থার নিরসন হবে।’
সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুটো ধারা প্রবাহিত। একটি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের, আরেকটি মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের। একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির বিপক্ষে আজও সে লড়াই চলমান রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘২০ দলীয় সন্ত্রাসীদের নেত্রী, জাময়াতের নেত্রী খালেদা জিয়া গতকাল (সোমবার) বলেছেন, অবরোধ চলবে। মূলত এ ঘোষণার মাধ্যমে তিনি তাদের নেতাকর্মীদের মানুষ হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন। খালেদা জিয়া নারী ও শিশুসহ মানুষ হত্যার কাণ্ডজ্ঞানহীন যে মহা উৎসবের মেতেছেন তা প্রতিহত ও প্রতিরোধ করা হবে।’
সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক এ কে এম ফজলুল হকের সভাপতিত্বে আলোচনায় সংগঠনের অন্যান্য নেতারা অংশগ্রহণ করেন।