উত্তাল সাগর থেকে ধূসর মরুভূমি
ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডট কম:
অরাল নামের একটি সাগর । এই সাগরের বুকে এক সময় মুক্তোর মালার মতো বিরাজ করতো ১৫৩৪ টি দ্বীপ । আটষট্টি হাজার বর্গকিলোমিটার (২৬,৩০০ বর্গমাইল) এলাকা নিয়ে এককালের সোভিয়েত ইউনিয়নের কাজাখাস্তান আর উজবেকিস্তানের মাঝখানে টলটলে পানিতে ভরা পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম এই লেকটি এতো বিশাল ছিল যে সবাই এটিকে ডাকত সাগর বলেই।
“আমু-দরিয়া” আর “সির-দরিয়া” নদীর বয়ে আনা পানিতে তৈরী হয়েছিলো তার টলটলে শরীর । তীরে বসতি ছিলো , ছিল জেলেদের হৈ-হৈ , শিশুদের হুড়োহুড়ি । বাতাসে ছিল মাছের আঁশটে গন্ধ। বন্দরে বন্দরে ছিল মাছ ধরা জাহাজের আনাগোনা । আজ নেই – আজ তার বুকে শুধুই ধূঁ-ধূঁ বালুচর ।
আমু-দরিয়া আর সির-দরিয়া’র ভালোবাসা থেকে লোভী মানুষেরা তাকে বঞ্ছিত করেছে । প্রিয়া অদর্শনের কষ্টে শুকিয়ে গেছে সে । এখন সেখানে কেবল মৃত্যুই খেলা করে যায় । বাতাস তার ভারী হয়ে আছে দূর্গন্ধে । একদিন তার নরম বুক চিরে , ঢেউ তুলে যে জলযান সাঁতরে বেড়াতো এ বন্দর থেকে সে বন্দরে, আজ তারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে ধুঁ-ধুঁ বালুর বুকে এক রিক্ত হাহাকার নিয়ে । কালের স্বাক্ষী, মানুষের অপরিণামর্দীতার স্বাক্ষী হয়ে ।
১৯৬০ সাল থেকে উড়াল সাগরের ধুঁকে ধুঁকে মরার শুরু । মাছেদের আঁশটে গন্ধে আসা ঝকঝকে “রুবল” নয়, সোভিয়েত ইউনিয়ন সরকারের চাই কড়কড়ে “ডলার” । সাদা সোনা চাই তাদের, হোয়াইট গোল্ড । বিশ্বজুড়ে যার চাহিদার শেষ নেই । তাই সোভিয়েত মাটিতে ফলাতে হবে তুলোর গাছ । আর লক্ষ লক্ষ হেক্টর জমি জুড়ে গড়ে তোলা সেই তুলোর গাছগুলোকে রক্ষা করতে আমু-দরিয়া আর সির-দরিয়া’র পানি বইলো অন্যখাতে । তাদের স্রোত ধারা ঠেলে দেয়া হলো উজবেকিস্তানের উষর মরুভূমিতে গড়ে তোলা “কটন ফিল্ডে”র জন্যে তৈরি সেচ প্রকল্পে ।
নদীর স্রোত আর গড়ালো না উড়াল সাগরের বুকে । ভালোবাসার উষ্ণ জলের পথ চেয়ে চেয়ে সাগরের বুক গেল শুকিয়ে । একদা বিশাল সাগরের বুকে গড়ে উঠলো আর এক মরুভূমি । আর সাক্ষী হয়ে রইল পৃথিবীর বুকে মানব সৃষ্ট সবচেয়ে ভয়ংকর পরিবেশ বিপর্যয়ের ।
প্রতিক্ষণ/এডি/পাভেল