একুয়েডরে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪১৩
ভূমিকম্পে ইকুয়েডরে মৃতের সংখ্যা ভয়াবহ ভাবে বেড়েই চলেছে। সর্বশেষ জানা গেছে, দেশটিতে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে কমপক্ষে ৪১৩ জন মানুষ নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরো আড়াই হাজারের মত মানুষ আহত হয়েছেন । বিবিসি জানায়, এদিকে শনিবারের ওই ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর সোমবারও ইকুয়েডরের পশ্চিম অঞ্চলে ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ১। তবে এতে কোনো হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির খবর জানা যায়নি। ইকুয়েডরের ভূমিকম্পে কয়েকজন বিদেশিসহ এ পর্যন্ত ৪১৩ জন নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়েছে। এদের মধ্যে কানাডার দুইজন এবং যুক্তরাষ্ট্র ও আয়ারল্যান্ডের একজন করে নাগরিক রয়েছেন। এছাড়াও সোমবার রাতে উপকূলীয় শহর মান্তার কাছে একটি হোটেলের ধ্বংসস্তূপ থেকে দুই শিশু বালিকাসহ ছয়জনকে জীবিতকে উদ্ধার করা হয়েছে। ওই শিশুদুটির একজনের বয়স তিন বছর ও অপর জনের নয় বছর।
ভূমিকম্পের উপকেন্দ্রের কাছে পর্যটন শহর পেদারনালেস ও পোর্তোভিয়েজো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রশান্ত মহাসগারের তীরে পামগাছ ঘেরা ছিমছাম শহর পেদারনালেস ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে প্রেসিডেন্ট কোরেয়া বলেন, “মৃতের সংখ্যা আরো বাড়ার আশঙ্কা করছি আমি, কারণ ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ অব্যাহত রেখেছি আমরা। ধ্বংসস্তূপে জীবিতরা আটকা পরে আছেন, এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, তাদের উদ্ধারকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।” দেশের দুর্গত এলাকাগুলো পরিদর্শন শেষে প্রেসিডেন্ট রাফায়েল কোরিয়ে শনিবারের ওই ভূমিকম্পকে ৭০ বছরের মধ্যে সবচাইতে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এর ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠতে কয়েক শ কোটি ডলারের সহায়তা প্রয়োজন বলেও তিনি জানিয়েছেন।
এদিকে দ্য অর্গানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেটস্ এর মহাসচিব লুয়িস আলমাগরো জানিয়েছেন, পুনর্নির্মাণ কাজের জন্য সংস্থাটির জরুরি তহবিল থেকে একুয়েডরকে সহায়তা দেওয়া হবে। ভূমিকম্পের পর থেকে পোর্টোভিয়েজো ও পেদার্নালস শহর দুটির শত শত মানুষ খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছে। উদ্ধারকাজ চালানোর জন্য সাড়ে ১৩ হাজারের মত উদ্ধারকর্মী নামানো হয়েছে, এদের মধ্যে প্রায় ৪০০ জন একুয়েডরের প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে এসেছেন। ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা দুটো হচ্ছে পোর্টোভিয়েজো ও পেদার্নালস।
শনিবারের ওই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল পেদার্নালস। শহরের মেয়র গাব্রিয়েল এলসিভার বলেছেন, ভূমিকম্পে গোটা শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এখানে সেখানে পড়ে আছে মৃতদেহ। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন,‘আমরা এর ভয়াবহতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। কিন্তু আমাদের একার পক্ষে কিছুই করা সম্ভব নয়। এই দুর্যোগের মধ্যেও শহরটিতে লুটপাট হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এর সত্যতা স্বীকার করে জর্জ ইসকুইভেল নামের এক ব্যক্তি রয়টার্সকে বলেছেন,‘এই দুর্যোগের মধ্যেও আমি লুণ্ঠনের মত জঘন্য কাজ করেছি। খাবার কেনার জন্য আমার টাকার দরকার ছিল। ভূমিকম্পে আমার বাড়ি ধ্বংস হয়েছে। শহরে পানি নেই, আলো নেই।’ এদিকে ইকুয়েডরের ভূমিকেম্পর পর সোমবার প্রতিবেশী দেশ কলম্বিয়াতেও ভূমিকম্পের খবর পাওয়া গেছে। তবে জাপান ও ইকুয়েডরের ভূমিকম্পের মধ্যে কোনো যোগসূত্র নেই বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ইকুয়েডরে ভূমিকম্প আঘাত হানার কয়েক ঘণ্টা আগে জাপানে ৭.৩ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল।
প্রতিক্ষণ/এডি/রাসিব