অনেকছোটবেলা থেকেই খেলা দেখে আসছি। ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন, লং টেনিস, এক’শ- দু’শ মিটার দৌঁড়, সাঁতার, ভলিবল আরও কতশত খেলা। খেলা দেখা এবং তারপর মাঠে খেলতে যাওয়া দুটোই করেছি। এইচ.এস.সি পর্যন্ত পুরোদমে ক্রিকেট খেলেছি, তবে খেলা দেখা আজও বন্ধ হয়নি। এস.এস.সি পরীক্ষার কোনো এক রাতে ভাইয়াদের খাটের নিচে লুকিয়ে সারারাত ভারত-পাকিস্তানের খেলা দেখেছি। আর সকালে যথারীতি পরীক্ষাও দিয়েছি! ঝিরঝিরে অস্পষ্ট ডিশের লাইনকে স্পষ্ট করার জন্য স্টিলের মগ থেকে শুরু করে এ্যালুমিনিয়ামের তৈরি ডেকচির ঢাকনাও ব্যবহার করেছি। এতকিছুর পরও বোলারের দৌঁড়ে আসার দৃশ্যটা বড় বেশি অস্পষ্ট মনে হতো। তবুও চোখদুটো টিভি পর্দায়; একটুতো বোঝা যায় !
তবে যখন থেকে ক্রিকেটে বাংলাদেশ খেলতে শুরু করলো তখন একটু একটু করে অন্য দেশের খেলা দেখার প্রতি আগ্রহ কমে যেতে লাগলো; ফকফকা রোদে হঠাৎ ঘন মেঘের আগমন। বৃষ্টি নেই তবে রোদও নেই। এভাবে আমার মনের আকাশে একদিন ঝুম বৃষ্টি হল। তারপর থেকে এখানে স্বপ্নফসল বোনে এদেশের ক্রিকেটকে নিয়ে। কখন যে চারাগাছগুলো দেখতে দেখতে এত বিশাল বটবৃক্ষসমেত রূপ ধারণ করলো; নিজে দেখে নিজেই চক্ষুচরকগাছ! এভাবে এদেশের পিচ্ছিল ক্রিকেট আর ক্রিকেটাররা হোঁছট খেতে খেতে একসময় হাঁটতে শিখলো; আমারই চোখের সামনে। আর আজ তারা অনুর্বর অসফল নিষ্পেশিত অথচ সুপ্ত-গুপ্ত চোরাবালিতে নিমেশেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে; একবারও হারিয়ে যাওয়ার ভয় নেই চোখেমুখে, শুধু হারিয়ে দেবার তীব্র জেদ। এখন তো পালিয়ে যাবার বয়স বা সময় কোনটাই নেই। শুধু এগিয়ে যাওয়ার গল্প। আর একঝাঁক গুচ্ছগুচ্ছ কল্পগাঁথার দিন। যে মাঠের প্রতিটি সবুজ ঘাস সাক্ষ্য দেবে এক একটি কিচ্ছাকাহিনীর। যা কখনও কিংবদন্তিতুল্য হবে না, রাতের আঁধারের মতো ম্রিয়মান হবে না; খুব ভোরের কুসুমসূর্যের মতো কমলা আলো ছড়াবে চোখ থেকে চোখে। এরপর কাঁচা হলুদের হালকা আভা স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতরো হয়ে অদেখার চোখেও তীক্ষ্ণ আলো ছড়াবে, দেখে নিও।
বনের বাঘ সেই কবে বন ছেড়ে লোকারণ্য মাঠে এসে দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে; একে একে ঘায়েল করছে ক্যাঙারু, সিংহ, ময়ূর আর রাজ রাজরাদের। আর এ ভয়ে চুপিসারে সবার অগোচরে বাঘের মাসি শহর ছেড়ে দিব্যি পাড়ি জমিয়েছেন গভীর অরণ্যে। সে খবর কেই বা রাখে?
একসময় এমন দিন ছিল, যখন চোখের পানি ফেলতে ফেলতে খেলা দেখতাম, হাসির সুযোগ পেতাম না বললেই চলে। জয় তো পরের কথা, লড়াইটাও দেখতাম না। মনে মনে কানের কাছে এসে ফিসফিস করে মন বলতো, “ওরে বোকা, তুই আর ক্রীড়া সাংবাদিক ছাড়া এমন হতচ্ছাড়াদের খেলা আর কেউ দেখছে না। উঠে পড়্। আর দেখিছ না।” আমি বলতাম,“কেউ না দেখলে ওদের ভুলগুলো কে শুধরে দেবে? কে ওদের সাহস যোগাবে?”
অনেক বছর ধরেই তো খেলা দেখছি, তাই পরিবর্তনটাও আমার চোখে বেশ স্পষ্ট। বাংলাদেশ ক্রিকেট থেকে বাঘের মাসিকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করে দেওয়া হয়েছে অনেক অনেক আগে। এখন বাঘ থাকে মাঠে, বাঘের মাসি (বিড়াল) থাকে বনে।