ঐতিহ্যের তাল গাছ

প্রকাশঃ জানুয়ারি ৩০, ২০১৫ সময়ঃ ৮:৫০ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৮:৫০ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডটকম:

images (1)তাল গাছ এক পায়ে দাড়িয়ে
সব গাছ ছাড়িয়ে
উঁকি মারে আকাশে……..
বাঙালি দর্শনে অনেক গাছ থাকলেও তাল গাছের কথা উঠে এসেছে বারবার। যে যা বলিস ভাই, আমার তালগাছ টি চাই। কথাটির প্রচলন আছে বহুকাল থেকে। আসলে তালগাছ নিয়ে গ্রামবাংলায় অনেক প্রবাদ ও জনশ্রুতি প্রচলিত। কিন্তু বাস্তবতার ভাঁড়ে ভবানী, অন্ত:সারশূন্য লোকগাথাই হয়ে গেছে বাস্তবতা।

হতে পারে তালগাছ ও মৃত্যু সংক্রান্ত কিছু কুসংস্কার যা গ্রামের দিকে আছে । আর তা বাস্তবের সাথে কোথাও কোথাও মিলে গেছে। আসলে তালগাছ ফল দিতে দেরী করাতে এমনটা হতে পারে। আর গ্রাম্য বিশ্বাসের মূল প্রতিপাদ্য ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ডরায় টাইপের। যেহেতু অধিকাংশ মানুষ তাল গাছ লাগিয়ে এর ফল খেয়ে যেতে পারেন না। তাই বিশ্বাস জন্মেছে এই গাছ লাগানোটাই অশুভ। আর অবাক হলেও সত্য বেশির ভাগ মানুষ মধ্য কিংবা শেষ বয়সে এসে তালগাছ লাগাতে পছন্দ করেন।

তালগাছ জনমনে এতো আবেগ দিয়ে রাজনীতিবিদদের বিবেকশূন্য করেছে তার সম্পর্কে আমাদের জানার পরিধিটাও অনেক কম। মরুজ কিংবা প্লাবন সমভূমির দেশ সবখানেই বিচিত্র ধরণের প্রায় আড়াই হাজার প্রজাতির তালগাছের দেখা মেলে। ফলে বিশ্বজুড়ে এমন কোনো দেশ নাই যেখানে তালগাছের দেখা মিলবে না। কিন্তু সেখানকার তালগাছ যিনি লাগিয়েছিলেন তিনি এর ফল খেতে পেরেছেন কিনা তা নিয়ে নিশ্চিত করে বলা যাবে না।

উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা মনে করেন সব তালগাছই আসলে আবার গাছ না।
Nur A Alam Siddique মজা করে জানালেন তাল গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Borassus flabellifer. এবং তালগাছ দীর্ঘজীবী। পৃথিবীর বহু দেশে তালগাছ আছে। এই গাছ কমবেশি ১০০ বছর বাঁচে। আর এই দীর্ঘজীবনের প্রায় পুরোটা সময়ই ফল দেয়। তাল গাছ সম্পর্কে একটা মজার তথ্য জানিয়ে রাখি, তাল গাছ হচ্ছে সাইকাস জাতিও উদ্ভিদ, অর্থাৎ আমরা যে সব তাল গাছ দেখি তা আসলে দুই ধরনের । পুরূষ, আর স্ত্রী প্রজাতির। শুধু স্ত্রী তাল গাছে তাল হয়, পুরূষ তাল গাছে তাল হয় না।

images (2)এদিকে বিজ্ঞানীরা বলছেন তাল গাছের পাতা দুই ধরণের। একটা প্রচিলত তাল পাতার মত, অন্যটি ঠিক সুপারি পাতার মত দেখতে। অনেক উদ্ভিদ বিজ্ঞানী দাবি করছেন নারকেল কিংবা সুপারিগাছ তালগাছ গোত্রের। জেরোসিরি কিংবা মরুজ ক্রমাগমনের এক পর্যায়ে তাল কিংবা সুপারির উদ্ভদ হয়েছে। আর অবস্থা বিশেষে তাল, সুপারি কিংবা নারকেল এরা একই অবস্থায় ছিলো। ইয়াংকি ইন্ডিয়ান থেকে শুরু করে ফ্লোরিডা ও ক্যালিফোর্নিয়া অঞ্চলে তালগাছকে বেঞ্চমার্ক হিসেবে ব্যবহার করা হতো।

রেড ইন্ডিয়ানরা তালগাছকে তাদের পরিচিতিমূলক মনে করে বলে জানা যায়। অন্যদিকে তালগাছের রস যেমন সুস্বাদু পানীয় তেমনি এর থেকে গাঁজন ও পচনে তৈরি হয় বিভিন্ন ধরণের চোলাই মদ। কুইন্ডিও ওয়াক্স পাম নামে পরিচিত কলম্বিয়ার তালগাছটিকে এখন পর্যন্ত বিশ্বের সর্বোচ্চ বলে মনে করা হয়। প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো এই গাছটির উচ্চতা প্রায় ১৯৭ ফুট।
বিশ্বের প্রথম দিকে গড়ে ওঠা মেসোপটেমিয়া সভ্যতায় তালগাছের বহুল ব্যবহার সম্পর্কে জানা গেছে।

বিশেষ করে ফল তারা খাদ্য হিসেছে গ্রহণ করেছে। তালগাছের আঁশ নানা কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। এদিকে তালের কাণ্ডকে তারা গৃহস্থালীর নানা কাজ, গৃহনির্মাণ এমনকি ক্যানোজাতীয় নৌকা তৈরিতেও ব্যবহার করেছে। জলপ্রত্নতাত্ত্বিক গবেষকগণ বিশ্বের নানা স্থান থেকে তালগাছের তৈরি ক্যানো জাতীয় নৌকা আবিষ্কার করে মানব সংস্কৃতির সাথে এর অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক খুঁজে বের করেছেন। অন্যদিকে এই তালগাছ অনেক সাহিত্যিকের সাহিত্য কিংবা কবির কাব্য চর্চার পাথেয়।

ঐ দেখা যায় তাল গাছ
ঐ আমাদের গাঁ
ঐ খানেতে বাস করে ……

প্রতিক্ষণ/এডি/মাসুদ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G