ওড়নার দু-চার কথা
তাজিন আক্তার, প্রতিক্ষণ ডট কম.
মেয়েদের ফ্যাশন ঠিকমত উপস্থাপন করতে ওড়না ভীষণ প্রয়োজনীয় একটি অনুষঙ্গ। এই এক ফালি কাপড়ের আকৃতি একটু ছোট-বড় করে অথবা একটু ভিন্ন ঢঙে বেঁধে বা ঝুলিয়ে পরে সবার থেকে আলাদা করে ফুটিয়ে তুলতে পারেন নিজস্ব স্টাইল। কয়েক বছর আগেও কামিজ বা সালোয়ারের সঙ্গে মানিয়ে মেয়েরা ওড়না ব্যবহার করত। তবে হাল-ফ্যাশনের যুগে আজকাল সেই রীতি বদলে গেছে।
এখন ফ্যাশনের রেওয়াজটাই যেন কিছুটা এলোমেলো। হালকা রঙের কামিজ তো উজ্জ্বল গাঢ় রঙের ওড়না। আবার উজ্জ্বল রঙা সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে হালকা রঙের ওড়না প্রায়ই দেখা যায়। এই কাপড়টি যে শুধু সালোয়ার-কামিজের অনুষঙ্গ তা কিন্তু নয়, এটি আমাদের পোশাক ও ব্যক্তিত্বে এনে দিতে পারে ভিন্ন মাত্রা।
ওড়নার ওপর ভিত্তি করেই বানানো যায় সালোয়ার-কামিজ। সালোয়ার কামিজের সঙ্গে মিলিয়ে ওড়না নিতে হয়- ফ্যাশনের এ ধারণা এখন বদলে গেছে অনেকাংশে। বরং ওড়নার সঙ্গে মিলিয়েই তৈরি করতে পারেন সালোয়ার-কামিজ। পোশাক সচেতন বাঙ্গালী সুপ্রাচীনকাল থেকেই ফ্যাশন ও সাজসজ্জার বিষয়ে সচেতন ছিল।
বাংলার ইতিহাসে প্রাচীন যুগের অবসানের পর মুসলিম নবাবদের আগমন, পশ্চিম-এশিয় সংস্কৃতি এবং আরও পরে ইউরোপীয় সংস্কৃতির সংমিশ্রণের ফলে পোশাকের উপর এর প্রভাব পড়ে। ওড়নাও-এই বিবর্তন থেকে বাদ যায়নি। সময়ের আবর্তনে এখন ওড়না হয়ে উঠেছে পোশাক শৈলীর একটি উপাদান।
ফ্যাশনের মজাটাই অন্য রকম। একটু এদিক-ওদিক করে নিলেই তৈরি হয়ে যায় নতুন স্টাইল। যেমন এতদিন কামিজ ও সালোয়ারের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হতো পুরো পোশাকের ধাঁচটি। নতুনত্ব আনতে এখন করা হচ্ছে উল্টো কাজটি। ওড়নার কাপড় কেমন তার ওপর নির্ভর করছে সালোয়ার-কামিজের কাপড়।
দামি ও ভারী কাপড়ের ওড়নার সঙ্গে সালোয়ার-কামিজের কাপড়ও হতে হবে মানানসই। অ্যান্ডি-সিল্ক, ডুপিয়ান, অ্যান্ডি-সুতি, মসলিন, শিফনের ওড়নার সঙ্গে সুপার বলাকা, সিল্ক, অ্যান্ডি-সিল্ক অথবা মসলিনের কাপড়ের কামিজ ভালো মানাবে।
অন্যদিকে সুতির ওড়না, শিফনের ওড়নার সঙ্গে সুতির কামিজই মিল খাবে ভালো। ফ্যাশন ডিজাইনার বিপ্লব সাহা বলেন, “বর্তমানে ওড়নাটি হাইলাইট করে সালোয়ার-কামিজ তৈরি করা যায়। যেকোনো মেয়েকেই এ স্টাইলে স্মার্ট লাগবে। এখানে রং মিলিয়ে পরার বিষয়টি নিয়েও ভাবতে হয় না। মানাবে কি মানাবে না, সেটি নিয়েও চিন্তা করতে হয় না।” টাইডাই, ভেজিটেবল ডাই, স্ক্রিনপ্রিন্টের কাজ করা ওড়নাগুলোর কিছু সুবিধা আছে।
কামিজের সঙ্গে মিলিয়ে বা না মিলিয়েও পরা যায়। নীল ও সবুজ ওড়না যেমন সাদা বা হলুদরঙা সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে মানাবে। তেমনি এটি নীল রঙের কামিজের সঙ্গেও বেশ যায়। তবে যে পোশাকে ওড়নাই হবে প্রধান সেখানে কামিজের কাজ হতে হবে একেবারেই হালকা। রঙের সঙ্গে মানানসই করতেও যেন কিছুটা ভিন্নতা চলে এসেছে।
কিছুদিন আগেও যে দুটি রং এক সঙ্গে পরার কথা হয়তো চিন্তাও করা যেত না, আজকাল তরুণীরা হয়তো সেই রঙগুলোর মিশেলেও ওড়না কাঁধে ঝুলিয়ে দিব্যি বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। একই রঙা সালোয়ার-কামিজ ওড়নার চেয়ে সালোয়ার-কামিজের রঙের বিপরীত রঙা কোনো ওড়না পরাই যেন আধুনিক ফ্যাশনে দাঁড়িয়ে গেছে।
আবার কখনও সালোয়ার বা কামিজের প্রিন্ট, ব্লক বা নকশার ভেতরের কোনো একটি রং বেছে নিয়ে সেই রঙেরই ওড়না পরছেন তরুণীরা। আর জিন্স-ফতুয়া পরলেতো এক রঙের বা ভিন্ন কোনো রঙের ওড়না বেছে নিলেই মানিয়ে যায়।
জিন্স, ফতুয়া, টি-শার্ট, শার্ট, সালোয়ার-কামিজ যে পোশাকই পরুন না কেন, ওড়না তাতে একটি পরিপূর্ণ ও মার্জিত রূপ দেয়। তবে সব পোশাকে বড় ওড়না মানায় না। তবে মানিয়ে যায় ছোট ওড়না।
এখন বিভিন্ন ধরনের ছোট ওড়না পাওয়া যাচ্ছে। যেমন মসলিন শিফন, সিল্ক, হ্যান্ড প্রিন্ট, শার্টিন প্রিন্ট, বাটিক, টিশু, নকশা করা ইত্যাদি। ছোট ও চিকন ওড়নাগুলো লম্বা ফতুয়া, টপস, পাঞ্জাবি, শার্টের সঙ্গেই বেশি মানায়। এ ছাড়া শর্ট কামিজ ও নরমাল কামিজের সঙ্গে এখন কুঁচকানো ছোট ওড়নাগুলো বেশ চলছে।
পাওয়া যাবে:
প্রবর্তনা, আড়ং, দেশি দশ শো-রুম, সপুরা সিল্ক, নগরদোলা, দেশাল, ওয়েসটেকসসহ বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে এসব ওড়না পাওয়া যাবে। এ ছাড়া চাঁদনী চক, শাহ আলী মার্কেট, মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট, গুলিস্তান ঘুরতে ঘুরতে পেয়ে যেতে পারেন আপনার পছন্দের ওড়না বা স্কার্ফটি।
দরদাম :
সুতির স্কার্ফগুলো পাবেন ২০০-৩৫০ টাকা, খাদির ওড়না ১৫০-৪০০ টাকা, শার্টিন ৭০০ টাকা, মাফলার ২৫০-৫০০ টাকা, মসলিন ৫০০-৭০০ টাকা, হ্যান্ড প্রিন্ট ৮০০ টাকা, বলাকা সিল্ক ৬৫০-৮৫০ টাকা, সফট সিল্ক শিফন ২৫০-৫০০ টাকা,
হাতের কাজ ১০০০ টাকা, ঘরানার স্কার্ফ ও ওড়না ৬৫০-৪০০ টাকা, জুট কটন ১৫০-৩৫০ টাকা ও মসলিনের ৩৫০-৬৫০ টাকায়। এ ছাড়া বিভিন্ন মার্কেটে ছোট ওড়নাগুলো ২০০-৪০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।
তাজিন/প্রতিক্ষণ/এডি/রাজু