‘কিছু দুষ্টলোকের’ কারণে সারা দেশে ইয়াবা ছড়িয়ে পড়েছে: বদি
ইয়াবা চোরাকারবারিদের আত্মসমর্পণ করতে বলার পর টেকনাফকে ‘ইয়াবামুক্ত’ করতে কয়েকশ লোক ডেকে দোয়া মাহফিল করলেন ঐ এলাকার সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান বদি।
শনিবার টেকনাফ পৌরসভার উপজেলা আদর্শ কমপ্লেক্স মাঠে এই মাহফিলে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের বর্জনেরও ঘোষণা দেন তিনি।
ইয়াবা চোরাচালানের অভিযোগ নিয়ে বিতর্কিত বদি বলেন, “টেকনাফকে ইয়াবামুক্ত করে কলঙ্কের দাগ মুছতে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেওয়া মাদক নির্মূলের কর্মসূচি সফল করতে আলেম সমাজের মাধ্যমে মহান আল্লাহের কাছে দোয়া চেয়ে মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।”
গতবছর শেষ দিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করা ইয়াবা কারবারিদের হালনাগাদ তালিকায় যে ৭৩ জনকে ‘শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল, তার শীর্ষে ছিলেন কক্সবাজার-৪ আসনের তখনকার সাংসদ আবদুর রহমান বদি।
টেকনাফ ও উখিয়া নিয়ে গঠিত এই আসনের বর্তমান সাংসদ বদির স্ত্রী শাহীন আক্তার, শপথ নিয়েই তিনি নিজের এলাকায় মাদক নির্মূলের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
এরমধ্যে টেকনাফে নিজেদের বাড়িতে এক বৈঠকে ইয়াবা কারবারিদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বলেন বদি ও তার স্ত্রী। তা না হলে পরিণতি ‘ভয়াবহ’ হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তারা।
এরপর শতাধিক ‘তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী‘ ইতোমধ্যে কক্সবাজার শহরে জড়ো হয়ে আত্মসমর্পণের জন্য ‘নিরাপত্তা হেফাজতে’ এসেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
জানুয়ারির শেষে বা ফেব্রুয়ারির শুরুতে তাদের আত্মসমর্পণের আনুষ্ঠানিকতা সারা হতে পারে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানিয়েছেন।
দোয়া মাহফিলে আব্দুর রহমান বদি বলেন, “টেকনাফবাসীর সঙ্গে ইয়াবার বদনাম বা কলঙ্ক জড়িয়ে আছে। এমনকি টেকনাফের বাসিন্দা পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করতে হচ্ছে সকলকে।
“টেকনাফের বাইরে কক্সবাজার জেলা শহরসহ দেশের কোথাও গেলে সকলকে বদনামের ভাগীদার হয়ে কুণ্ঠিত হতে হয়। কারণ, ইয়াবার জন্য যুব সমাজ ও জাতি ধ্বংসের পথে। বিপথে পা রাখায় অনেকের পরিবারে আজ কান্নার আহাজারি চলছে। এদের কেউ হারিয়েছেন বাবা, কেউ স্বামী আবার কেউবা সন্তান ও ভাই।”
‘কিছু দুষ্টলোকের’ কারণে সারা দেশে ইয়াবা ছড়িয়ে পড়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সরকার ও প্রশাসনের এত উদ্যোগের পরও ইয়াবা চালানের অনুপ্রবেশ কেন বন্ধ হচ্ছে না, তা বড় উদ্বেগের বিষয়। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সকলকে আরো উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে।”
ইয়াবা কারবারে জড়িতদের বর্জনের আহ্বান জানিয়ে বদি বলেন, “যারা ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত তাদের কোনো অনুদান মসজিদ-মাদ্রাসাসহ ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানে গ্রহণ না করতে আলেম সমাজের পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের প্রতি অনুরোধ জানাই।
“ইয়াবা ব্যবসায়ীদের বলি, প্রশাসনের কাছে আত্মসমর্পণ করুন। অন্যত্থায় তাদের সার্বিকভাবে বর্জন করা হবে।”
বদি বলেন, “টেকনাফকে ইয়াবামুক্ত করা আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়। এ জন্য সমাজের সকল স্তরের মানুষকে এক কাতারে আসতে হবে। ইয়াবামুক্ত করার জন্য সকলকে শপথ নিতে হবে।”
দোয়া মাহফিলে টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলম, ভাইস চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ও টেকনাফ পৌর মেয়র মোহাম্মদ ইসলামসহ কয়েকশ আলেম- ওলামা এবং নানা শ্রেণিপেশার মানুষ ছিলেন।
প্রতিক্ষণ/এডি/অনি