কৃষ্ণপক্ষে হুমায়ূন বধ করলেন শাওন!

প্রকাশঃ জুলাই ২০, ২০১৬ সময়ঃ ১২:১৯ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ২:১৬ অপরাহ্ণ

শারমিন আকতার:

krisnopokkho

হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত নাটক, চলচ্চিত্র দেখে মনের আনন্দে নির্ভেজাল হাসির রোল পড়েছে চারদিকে। অনেকের মুখে এমন কথাও শোনা গেছে, ‘মন খারাপ; চিন্তা কী, হুমায়ূনের নাটক, সিনেমা অথবা বই পড়; তাহলে মন ভালো হয়ে যাবে। গ্যারান্টি দিচ্ছি।’

নিরেট আর অতি বাস্তব সত্যকে এত সহজভাবে উপস্থাপন করার দক্ষতা আগে কারো মধ্যে লক্ষ্য করা যায়নি। তিনিই হুমায়ূন, যার একদল অন্ধভক্ত রয়েছে। তবে সংখ্যার বিচারে তা গণনা করা একটু কঠিনই বটে। এই ভক্তরাই আবার বড় নাখোস হয়েছিলেন, যখন তাদের অতি প্রিয় ব্যক্তিটি জীবন সায়াহ্নে নতুন সংসার জীবন শুরু করেছিলেন।

অভিমান এতটাই ছিল যে, বেশকিছুদিন অনেক ভক্তরাই তাঁকে বা তাঁর লেখাকে বর্জন করার মতো মারাত্মক অভিমান করে ছিল। সেই দলে আমিও ছিলাম। এভাবেই কেটে গেল বেশ কিছুটা সময়।

হঠাৎ একদিন বাতাসের পালে চড়ে উড়ে এল এক উড়ন্ত চিঠি। আমাদের সবার খুব প্রিয় লেখক আজ জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। মুহূর্তের মধ্যেই এতদিনের অভিমানের বরফ ভেঙে গেল। যে যার যার মতো করে খবর নিতে শুরু করল। দেখতে দেখতে এভাবে কিছু সময় পার হয়ে গেল।

অবশেষে এক চাঁদনী পসর রাতে ভিনদেশে মহাকালের অতল গহীনের টানে হারিয়ে গেলেন নক্ষত্রময় জ্বলজ্বলে বিদঘুটে রহস্যময় আঁধারের দিকে। সেদিন হুমায়ূন ভক্তরা বুঝলো, কী ভালো বাসেন তাঁকে! সবার দুচোখ থেকে শ্রাবণের অঝোর ঝারায় ঝরলো এতকালের সমস্ত ভালবাসামিশ্রিত অভিমানের কান্না। তিনিই আমাদের হুমায়ূন; যার প্রতিটি কথা বেদবাক্যসম। আর তাঁর জন্য ভালবাসা, আগুনে পোড়ানো সোনার মতো। যতই দিন যাচ্ছে, তা আরও খাঁটি হচ্ছে।

এতকাল এটাই ছিল খুব স্বাভাবিক একটা দৃশ্য হুমায়ূনের জন্য। তবে সময় পাল্টে গেছে। যে মুহূর্তে আমাদের সবার আনন্দের খোরাকদাতা কিংবদন্তী হুমায়ূন আহমেদ মারা গেলেন; ঠিক তখন থেকে আমরা হারালাম নতুন গল্প, নাটক, চলচ্চিত্র আর অসাধারণ কিছু মোহাবিষ্ট গান। হুমায়ূনভক্তরা তাঁর কালের সাক্ষি হয়ে যাওয়া সোনার তরী থেকে অতি সযতনে প্রতিটি কীর্তি একে একে তুলে নেন। আর ক্ষণিকের মুগ্ধতায় আবিষ্ট হয়ে পড়েন ক্ষণিকালয়ে।

এমনই এক সময়ে তাঁর রেখে যাওয়া গল্প-উপন্যাস নিয়ে নাটক-চলচ্চিত্র করা শুরু করলেন হুমায়ূনপত্মী শাওন। সবার দৃষ্টি এবার তার দিকে। যদি আবারও শাওনের হাত ধরে জেগে উঠেন নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন! নতুন করে আবারও আশার ভিত তৈরি হবে হবে করছিল।

হুমায়ূন আহমেদের লেখা আর শাওনের পরিচালনায় নির্মিত হল বহু আকাঙ্ক্ষিত তৃষিত চলচ্চিত্র ‘কৃষ্ণপক্ষ’। এলাম, দেখলাম, জয় করলাম। কিন্তু এরকম কোনো কিছুই ঘটল না চলচ্চিত্রটি দেখার পর। জেগেও উঠল না আমাদের অতি প্রিয় হুমায়ূন! বরং এ চলচ্চিত্র দেখে মনের ভেতর একটা চর ভাঙার ভয় তৈরি হল। সে চর হুমায়ূনের হাতের জাদুর পরশে বানানো।

তাহলে এবার কী হবে? ‘আমি মৃত্যুর চেয়ে বড়, এই শেষ কথা বলে যাবো আমি চলে’- হুমায়ূন ভক্তদের মনের গহীনে লুকিয়ে রাখা এ বিশ্বাসের দালান কি তাহলে ভেঙে পড়বে হুড়মুড় করে? হতে পারেন তিনি হুমায়ূনপত্মী; তাই বলে কি হুমায়ূনের বানানো সাম্যজ্য তিনি তাসের ঘরের মতো গুড়িয়ে দেবেন? যদি তিনি বেঁচে থাকতেন, তাহলে কি এ অন্যয্যতা মেনে নিতেন?

কৃষ্ণপক্ষ একটা পরিপূর্ণ বাণিজ্যিক বাংলা সিনেমা হিসেবে সার্থক হতে পারে কিন্তু হুমায়ূনের নিজস্ব হাতে পরিচালিত বৈশিষ্ট্যের সম্পূর্ণ পরিপন্থী সংলাপ, মার্জিত দৃশ্যায়নের অভাব এবং প্রচলিত বাংলা সিনেমার মতো সস্তা দৃশ্য ছিল এখানে উল্লেখযোগ্য। যেমন- ১. নায়িকা মাহিয়া মাহি নায়ক রিয়াজের অসুস্থতার কথা শুনে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে হাসপাতালে চলে আসেন! । ২. নায়ক রিয়াজের বোনের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর মেয়েটির স্বামী তাকে একটা আদেশ দেয়। যা বাংলা সিনেমার বাজে সংলাপকেও হার মানায়। এখানে তা প্রকাশ করার যোগ্যতা রাখছে না। ৩. বৃষ্টি ভেজা মুহূর্তটিও স্থুল দৃশ্যায়নের অন্তভূক্ত  ৪. সম্পূর্ণ সিনেমাটিই একটা মেধা শূন্যতায় পরিপূর্ণ ও সৃজনশীলতাবিহীন। 

‘কৃষ্ণপক্ষ’ সিনেমাটিতে হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত স্টাইলের কোনো ছাপ ছিল না। উপস্থিত হলভর্তি দর্শকের বিদ্রুপ আর ব্যাঙ্গাত্মক হাসির রোল পড়ে গিয়েছিল সেদিনের ‘কৃষ্ণপক্ষ’ দেখে। বুকের ভেতর কেমন যেন চিনচিনে ব্যথা অনুভূত হয়েছিল। এই আমাদের হুমায়ূনপত্মীর কীর্তি! তিনি কি হুমায়ূনকে বিলুপ্তির খাতায় ফেলতে চান? মন জানতে চায়, তাহলে এতকাল এমন এক গুণী শিল্পীর সাথে অতি কাছাকাছি থেকে কী শিখলেন? আদৌ কি কিছু শিখেছিলেন? এই তার ভালবাসার নমুনা?

হুমায়ূন ‘ঘেটুপুত্র কমালা’র মতো অতি স্পর্শকাতর একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন। যেখানে সম্পূর্ণ ছবিতেই ছিল পরিমিতিবোধ এবং সতর্কদৃষ্টি। একটু এদিক-সেদিক হলেই শেষ। কিন্তু না, হুমায়ূন আহমেদ তা একবারের জন্য হতে দেয়নি। আমরা ভুলে যাইনি সেকথা।
তাই অনুরোধ করছি, দয়া করে হুমায়ূনের নামে আর কিছু গড়তে যাবেন না। আমাদের ভালবাসাকে হুমায়ূনের জন্য দেউলিয়া করে দিয়েছি; তা ধ্বংস করার পায়তারা করবেন না; যদি সামান্য ভালবাসা আমাদের প্রিয় হুমায়ূনের জন্য থেকে থাকে। এটা হুমায়ূন ভক্তদের অনুরোধ।

=========

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G