কোনো অবস্থাতেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবো না: ড. কামাল
কোনো অবস্থাতেই কাল রোববারের জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সরে দাঁড়াবে না বলে জানিয়েছেন জোটটির আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন। আজ শনিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘শেষ মূহূর্তে তারা (জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট) হয়তো বলবে, নির্বাচন করব না।’ তাঁরই প্রতিক্রিয়ায় ড. কামাল এ কথা বললেন।
আগামীকাল ৩০ ডিসেম্বর দেশের ২৯৯টি আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। ভোটকে কেন্দ্র করে আজ বিকেল ৪টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘রাত পোহালেই ভোট, দেশে এখন উৎসবের আবহ থাকার কথা; কিন্তু মানুষের মনে এখনো অনেক সংশয়, সন্দেহ। এ সংশয় দূর করা খুবই জরুরি। আমি সম্মানিত ভোটারদের অনুরোধ করব, আপনারা সকাল সকাল কেন্দ্রে যান, ভোট দিন, আপনারা ভয় পাবেন না, আপনারা গেলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যাবে। জনগণের শক্তির সাথে তারা পারবে না।
তরুণ সমাজ, তোমরা যারা প্রথমবার ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়েছ, তারা সময়মতো ভোট দিতে যাবে। মনে রাখবে, ‘‘যদি তুমি ভয় পাও, তবেই তুমি শেষ; তুমি যদি ঘুরে দাঁড়াও, তবেই বাংলাদেশ।’’’
এ ছাড়া, প্রিজাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ড. কামাল বলেন, ‘ভোট গ্রহণ আপনাদের দায়িত্ব । তাই নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করুন। সততার সাথে দায়িত্ব পালন করলে আপনাদের সম্মান বাড়বে। মনে রাখবেন ভোটারের মুখের হাসিই আপনার দায়িত্বের সার্থকতা। ভোটারদের মুখের হাসিই প্রমাণ করবে, আপনার দায়িত্ব পালনের সার্থকতা কতটুকু।’
এ সময় সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল বলেন, ‘সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলব, আপনারা কারো দলের নয়। আপনারা অতীতের মতো গৌরবের সাথে দায়িত্ব পালন করুন। আপনারা জনগণের ভোটাধিকার দেওয়ার সুযোগ করে দিন। নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করুন। আপনারা বিশ্বশান্তি রক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করে যে সফলতা পেয়েছেন, প্রশংসিত হয়েছেন, তা কোনোভাবে ব্যাহত হতে দিবেন না। সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচন কমিশন, রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সবাইকে বলব, আপনারা জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করুন। জনগণের অধিকার হরণ করলে অন্য কেউ আপনার বাবা, মা, ভাই, বোন, পরিবারের অধিকার হরণ করবে।’
এ ছাড়া, সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ঐক্যফ্রন্টের এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘আপনারা জনগণের সেবক, আপনারা কোনো দলের নয়। তাই আপনারা নিরপেক্ষভাবে সুন্দরভাবে দায়িত্ব পালন করুন। তাই জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগে সহায়তা করুন।’
প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ড. কামাল বলেন, ‘আপনারা আপনাদের পরিবারের সদস্যদের বলেন, যেন সকাল সকাল ভোট দিতে যায় এবং নিজের ভোটাধিকার নিশ্চিত করুন। তাদের ভোটের আনন্দ থেকে বঞ্চিত করবেন না। আসুন আমরা সবাই নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করি, ভোট আমাদের নাগরিক অধিকার। কারণ জনগণ দেশের মালিক।’
এক প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেন, আমাদের মাঝে কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নেই। আমরা এক ছিলাম, এক আছি।
জামায়াতে ইসলামী থাকলে ঐক্যফ্রন্টের দায়িত্ব নিতাম না এমন বক্তব্যে প্রমাণ হয় কি না কোনো বিভেদ আছে? এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক বলেন, ‘আমাদের মাঝে কোনো বিভেদ নাই। আমাদের ঐক্য আরো সুদৃঢ় হয়েছে।’
জনগণ ভোট দিলে ফলাফল কেমন হবে জানতে চাইলে ড. কামাল হোসেন বলেন, জনগণ আমাদের পক্ষে রায় দেবে। আমরা বিশ্বাস করি জনগণ আমাদের পক্ষে রায় দেবে সরকার কোনো ২ নম্বরি না করলে।
এ সময় গ্রেপ্তার হওয়া বিএনপি নেতাকর্মীদের কথা জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘গত ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার পর থেকে গতকাল ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিএনপির মোট ১১ হাজার ৫০৬ জন নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাদের নামে গায়েবি ও মিথ্যা মামলা হয়েছে ৯৫৭টি। শুধু গতকালকেই বিভিন্ন জেলায় মামলা দায়ের হয়েছে ৫৯টি। গ্রেপ্তার করা হয়েছে এক হাজার ১৭৭ জন নেতাকর্মীকে। আহত হয়েছেন ১৩ হাজার ২৫২ জন এবং মারা গেছেন নয়জন।’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন আজ শনিবার বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন।
দলের দুই নেতার প্রকাশ হওয়া ফোন আলাপ নিয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, আপনি যদি আপনার বউয়ের সাথে কথা বলেন, দেখবেন কয়দিন পর সেটিও প্রকাশ হয়ে গেছে। আর আপনারা রেকর্ডটা শুনলে দেখবেন এটা একটা ক্ষোভের কথা। আর এখন যে পরিস্থিতি আমরা নির্বাচনে আছি, তাতে ক্ষোভের কিছু থাকতেই পারে। তারা সবাই নির্বাচনে থাকবে কেউ নির্বাচন বর্জন করবেন না।’
যদি হামলা হয়, নির্যাতন হলে নির্বাচনে থাকবেন কি না, জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম খান বলেন, যদির উপর কোনো মন্তব্য থাকতে পারে না। এমন অনেক যদি আছে। তারপরও পরিবেশ বিচার করে ঐক্যফ্রন্ট বসে সিদ্ধান্ত নিবে।