রাকিব হোসেন
ঈদ মানেই আনন্দ । সারাদিন হৈ হুল্লোড়, আড্ডা, ঘোরাঘুরি। দীর্ঘদিন পর পরিবার আত্মীয় স্বজনদের সাথে একত্রিত হয়ে ঈদ করা অন্য রকম এক আনন্দের। কিন্তু এবার কিছুই করা হবেনা। পরীক্ষা থাকায় ক্যাম্পাসে ঈদ করতে হবে। তাই খুব খারাপ লাগলেও কিছু করার নেই,সামনে পরীক্ষা।
ঈদের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কথাগুলো বলছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ব বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী গোলাম মোস্তফা। তিনি থাকেন চবির আলাওল হলে। শুধুই গোলাম মোস্তফা নন পরীক্ষার কারনে বাড়িতে যাওয়া হচ্ছে না চবির বেশ কয়েকটি বিভাগের শিক্ষার্থীর। কেবল পরীক্ষার কারনেই যে বাড়ি যাচ্ছেন না তারা তা কিন্তু নয়। কারো সামনে পরীক্ষা,কারো বা চলছে,কারো বাড়ি দূরে,কেউবা যাচ্ছেনা টিউশনির কারনে।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ দিনের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষনা করায় ফাঁকা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। নেই শিক্ষার্থীদের আনাগোনা,নেই আড্ডা,গল্প,গান,নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে ঝুপড়িগুলো,ফ্যাকাল্টি ভবনে ঝুলছে তালা, দেড়টা আর আড়াইটার ট্রেন ধরার জন্য কেউ আর সিট ধরে বসে নেই,জিয়া ভাইয়ের ফটোকপি দোকানে নেই ভীর। এত কিছুর মাঝে ব্যাতিক্রম আবাসিক হলগুলো। যেখানে সবাই ঈদের প্রস্ততি নিতে ব্যন্ত। সেখানে হলের করিডোর দিয়ে হাঁটলেই কানে বাজবে পরীক্ষার্থীদের গুনগুন শব্দ। পরীক্ষার কারনে বাড়ি যাওয়া হচ্ছে না প্রায় দু-শতাধিক শিক্ষার্থীর।
এ ব্যাপারে পারভেজ বলেন,ঈদের পরে পরীক্ষ। বাড়িতে গেলে যাওয়া আসায় পরীক্ষার অনেক সময় নষ্ট হবে। তাই ক্যাম্পাসে ঈদ করতে হচ্ছে।
বাড়ি অনেক দূরে এবং বন্ধ কম হওয়ায় বাড়ি যাচ্ছেন না আন্তজার্তিক সম্পর্ক বিভাগের কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন,বাড়ি রংপুর। এতো ভোগান্তি সহ্য না করে ক্যাম্পাস এ ঈদ করবো। ক্যাম্পাসে ঈদ করছেন এমন অনুভূতি ব্যক্ত করতে এক রাশ হাসি মুখে নিয়ে চবি সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মন্ডল মোহাম্মদ আরিফ বললেন “ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সাথে ঈদ করবো। ছোটবেলা থেকে পরিবারের সাথে ঈদ করছি। এবার ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সাথে ঈদ যেন নতুন মাত্রা যোগ করবে।
ঈদের পরে ছাত্রের পরীক্ষা তাই বাড়ি যাওয়া হচ্ছে না প্রীতিলতা হলের আবাসিক শিক্ষার্র্থী তাসমিন নাহারের। তিনি জানালেন ঈদের কদিন পরেই ছাত্রের পরীক্ষা। দায়বদ্বতার জায়গা থেকে এ সময় তার পাশে থাকতে হচ্ছে। মা বাবা ছেড়ে ঈদ করাটা আনেক কষ্টের,কিন্তু কিছু করার নেই।
বাড়িতে যাচ্ছে না বলে থেমে থাকবে না ঈদ আনন্দ। তা কিন্তু নয়। নিজের মত করে প্রস্ততি নিয়ে রেখেছেন তারাও। ঈদের দিনও কেউ ছুটবেন শহরের বন্ধুদের বাসায়,কেউবা হানা দিবে বিনোদন স্পটেগুলোতে। কেউবা ঈদের দিন হলে বিভিন্ন ইনডোর গেমের আয়োজন করেছে। এই বিয়য়ে আন্তজার্তিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আমিনুল বলেন,ঈদের দিন আমরা বন্ধুরা মিলে লুডু,দাবা খেলার আয়োজন করেছি। কেউবা মাংস কিনে রাতে নিজেরাই রান্না-বান্নার আয়োজন করবে।
আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাড়ি না যাওয়া শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে ঈদের দিন বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। দুপুরে খাবারের থাকবে পোলাও,মাংস,ডিম। ঈদের পরের দিন থাকবে গরুর মাংস।
এ বিষয়ে আলাওল হলের পভোস্ট প্রফেসার ড.শফিউল আলম বলেন,ক্যাম্পাসে অনেক শিক্ষার্থী ঈদ করবে। পরিবারকে ছেড়ে ঈদ অনেক কষ্টের। তাদের কথা চিন্তা করে হল থেকে ঈদের দিন ও পরের দিন বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রতিক্ষণ/এডি/এফজে