খানজাহানের ধলাপাহাড়ও চলে গেল

প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১৫ সময়ঃ ৮:৪৮ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৩:৪৬ অপরাহ্ণ

জেলা প্রতিবেদক, প্রতিক্ষণ ডটকম

khan 23বাগেরহাটের হযরত খানজাহান আলীর মাজারে ধলাপাহাড় নামের কুমিরটি মারা গেছে।

বৃহস্পতিবার ভোরে মাজার সংলগ্ন দীঘিতে প্রায় ৯ ফুট লম্বা কুমিরের মৃতদেহ ভাসতে দেখা যায়।

কয়েক বছর আগে ধলাপাহাড়ের সঙ্গী কুমির কালাপাহাড় মারা যায়।

তবে কি কারণে কুমিরটি মারা গেছে তা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। কুমিরের মৃত্যুর সংবাদ শুনে মাজারেরর খাদেমসহ শত শত কৌতূহলী মানুষ ভিড় জমায় সেখানে। শত বছরের ধলাপাহাড়ের মৃত্যুর খবরটি প্রথমে নিশ্চিত করে মাজার দীঘির উত্তর পাড়ের  ফকির মোবারক আলী।

মাজারের প্রবীণ খাদেম ফকির হুমাউন কবির জানান, হযরত খানজাহান (রহ.)-এর আমল থেকে বিশাল এ মাজার দীঘিতে কালাপাহাড়-ধলাপাহাড় নামে খ্যাত কুমিরের পরস্পর বংশধর চলে আসছে। মাজারের খাদেমদের অনেকই এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন। কুমিরের মৃত্যুর খবর পেয়ে জেলা প্রশাসন, পুলিশ, বনবিভাগ ও বাগেরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ৪ সদস্যের মেডিক্যাল টিম সেখানে পাঠানো হয়।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুখেন্দু শেখর গায়েনের নেতৃত্বে  ৪ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড কুমিরটির ময়না তদন্ত শেষে কুমিরের চামড়াসহ মৃতদেহটি জেলা প্রশাসন ও বনবিভাগের কাছে হস্তান্তর করেছে।

মেডিক্যাল টিমের প্রধান ডা. সুখেন্দু শেখর গায়েন  জানান মৃত কুমিরটি ৯ ফুট লম্বা ও ৬ ফুট  চওড়া। আর মাদি কুমির সর্বোচ্চ ১১ ফুট লম্বা হয়ে থাকে। সেটিকেই পূর্ণ বয়স্ক বলা হয়। আর পূর্ণ বয়স্ক কুমির ১৩০ থেকে ১৭০ বছর পর্যন্ত বেছে থাকে। সে হিসাবে এ কুমিরটির বয়স শত বছরের কাছাকাছি হবে।

তিনি আরও জানান, কুমির  ‘প্যান ইন্টি টাইটিস’ অতিরিক্ত ফ্যাটেনিংয়ে ও অন্য কোন  কারণে মারা যেতে পারে। এটা ময়না তদন্ত রিপোর্ট না হলে নিশ্চিত করে বলা যাবে না।

খানজাহান আলী মাজারের খাদেম ফকির সুমন জানান, আমি খানজাহান (রহ.)-এর সময়কার কুমিরের  বংশধর ৪টি কুমির দেখেছি। ইতিমধ্যে ৩টি কুমির মারা গেছে। সর্বশেষ বংশধর এ কুমিরটি মারা গেল এ বলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।

তিনি আরও জানান, দেশ-বিদেশের হাজার হাজার পর্যটক এ কুমির দেখতে মাজারে ভিড় জমাতো। খানজাহান আলী মাজারের অন্যতম আকর্ষণ ছিল এ কুমির।

তিনি দাবি করেন, আশির দশকে এরশাদ সরকারের সময় এ মাজার দীঘি থেকে মিঠা পানির কালাপাহাড় ধলাপাহাড়ের বংশধর ৯টি কুমিরের বাচ্চা তৎকালীন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে  রাজশাহী চিড়িয়াখানায় নেয়া হয়।

এছাড়া ২০০৪ সালের ২৬শে জুন ভারত সরকার মাজারের জন্য উপঢৌকন হিসেবে দেয়। সেখান থেকে ২টি কুমির সুন্দরবনের করমজলে আর ২টি কুমির মারা যায় একটি নিজেরা মারামারি করে আর অন্যটি মাজার দীঘিতে মাছ শিকারিদের জালে ফাঁস লেগে। বাকি ২টি কুমির এখনও মাজারের দীঘিতে আছে বলে খাদেমরা নিশ্চিত করেছেন ।

খানজাহান আলী খ্রিষ্টীয় ১৪ শতকের প্রথম দিকে সুলতানী শাসনামলে বাগেরহাটে খলিফতাবাদ নগর প্রতিষ্ঠা করেন। এই এলাকায় এসে দিঘীটিতে তিনি কুমির দুটি ছাড়েন, যা স্থানীয়দের কাছে কালাপাহাড় ও ধলাপাহাড় নামেই ছিল পরিচিত।

প্রতিক্ষণ /এডি/নাইম

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G