গড়ন অনুযায়ী ফ্যাশন
ফারজানা ওয়াহিদ
আমাদের সবার গায়ের রং এক রকম নয়। কারো ফর্সা, কারো কালো, কারো তামাটে বা কারো শ্যামলা। কেউ হয়তো চিকন আবার কেউ বা মোটা। কিছু কিছু রং আমাদের সবাইকে মানিয়ে যায়। আবার কিছু কিছু রং গায়ের রঙের সাথে একটু মিলিয়ে পরতে হয়। ফর্সা মেয়েটিকে যে কোন ড্রেসেই সুন্দর দেখায়, সবকিছুই যেন মানিয়ে যায় যাদের গায়ের রং ফর্সা। আর কালো মেয়েদের কোন রঙেই ভালো লাগেনা। কালো গায়ের রং হলে সব রঙের পোশাক পরা যাবে না। এমন কথাই প্রচলিত আমাদের দেশে।
যারা চিকন তাদের সব রং মানিয়ে যাবে বা সব ডিজাইন পরতে পারবে, তাও নয়। ঠিক যারা কিছুটা মোটা ধাঁচের তারাও সব কিছুই পরতে পারে, শুধু একটু সাজিয়ে গুছিয়ে পরতে হবে।
সবার ধারণা গায়ের রং যদি উজ্জ্বল হয়, সব রং-ই পরা যায়, জামার ডিজাইন যেমনই হোক না কেন। বাস্তবে ব্যাপারটি কিছুটা ভিন্ন। ব্যক্তিভেদে পোশাকের রং নির্বাচন করা উচিত। ফর্সা রঙের মেয়েদের গাঢ় রঙের চেয়ে হালকা রঙে বেশি মার্জিত লাগে। ফর্সারও ধরণ আছে। সাদা ফর্সা, গোলাপি ফর্সা, হলদে ফর্সা। সাদা ফর্সাদের হালকা রঙের পোশাকে বেশি ভালো লাগে। গাঢ় হালকার মিশ্রণেও ভালো মানায়। গোলাপি বা লালচে ফর্সাদের মাঝামাঝি গাঢ় রং কিংবা হালকা দুটোই মানায়। হলদে ফর্সাদের মোটামুটি সব রং-ই মানিয়ে যায়।
শ্যামলা যাদের গায়ের রঙঃ
যেকোন রং নির্বাচন করার আগে আয়নায় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে নিন, আপনাকে মানাচ্ছে কিনা। এমন রং নির্বাচন করা উচিত যাতে আপনাকে উজ্জ্বল দেখাবে। শ্যামলা রঙের মেয়েদের জন্যে বাসন্তি, হলুদ, ডিমের কুসুম হলুদ, হালকা কমলা, মেরুন, সাদার সাথে লালের কম্বিনেশন, হালকা সবুজ এই রঙগুলো সহজেই মানিয়ে যায় আর উজ্জ্বল লাগে। কালচে বেগুনি অর্থাৎ ঘন গাঢ় বেগুনি, নীল, গাঢ় ঘন কালচে সবুজ ইত্যাদি রং পরলে গায়ের রং আরও ডার্ক মনে হতে পারে। তবে কালচে নেভি ব্লুতে শ্যামলাদের ভালো লাগে।
কালো যাদের গায়ের রঙঃ
গায়ের রং একটু কালোর দিকে হলে অনেকেই পোশাকের রং নির্বাচনের ক্ষেত্রে অনেক ঝামেলায় পড়েন। হয়তো ভাবেন কোন রং-ই মানাচ্ছে না। আসলে ব্যাপারটা তা নয়। যেকোন রং-ই আপনি পরতে পারেন, তবে পরার আগে আয়নায় পোশাকটি গায়ের উপর ধরে একটু দেখে নিন, আপনাকে কেমন মানাচ্ছে। গায়ের রং কালো হলেও চেহারা আকর্ষণীয় আর একটু চিকন ধাঁচের হলে যেকোন পোশাকেই আকর্ষণীয় লাগে। যদি ডার্ক রঙের পোশাক পরতে চান তবে সাজসজ্জা টা একটু হালকা করতে হবে, কম গয়না পরতে হবে। ওড়না যদি রংচঙে হয়, জামাটা হালকা রঙের হতে পারে। এভাবে নিজের মতো করে মিলিয়ে নিতে হবে। যেকোনো রং-ই বুঝে পরা যেতে পারে। তবে খুব চোখে লাগে এমন কোনো রং ব্যবহার না করাই ভালো। কটকটা লাল রং টা সাধারণত দৃষ্টিকটু লাগে।
একটু ভারী কাপড়ের ফোলা কাপড় পরতে হবে। গায়ে লেগে থাকে এমন কাপড়ের সালোয়ার কামিজ পরবেন না। শাড়ির ক্ষেত্রেও এমন শাড়ি পরবেন যা একটু ফুলে ফেঁপে থাকে। ভারী কাজের, গাঢ় রঙের পরতে পারেন। এতে স্বাস্থ্য একটু ভালো দেখাবে। ছাপার পোশাকের ক্ষেত্রে বড় বড় ছাপার ড্রেস নির্বাচন করুন। কিন্তু কখনই গায়ে লেগে থাকে এমন পোশাক পরবেন না,এতে আরও রোগা দেখাবে।
মাঝারি যাদের গরনঃ
মাঝারিরা সব ধরনের পরতে পারলেও এমন সালোয়ার কামিজ পরবেন না যা বেশি ফুলে থাকে। এতে করে খানিকটা মোটা লাগতে পারে। শাড়ির ক্ষেত্রে বেশি ফুলে থাকে এমন শাড়ি, যেমন – টিস্যু বা মসলিন পরলে স্বাস্থ্য ভারী মনে হবে। তারা মোটামুটি সব কাজের সব প্রিন্টের শাড়িই পরতে পারেন।
মোটা যাদের গরনঃ
ফুলে থাকে এমন মচমচে কাপড়ের সালোয়ার কামিজ পরবেন না। শাড়ির ক্ষেত্রে গোলগাল মেয়েরা অবশ্যই ফুলে থাকে এমন শাড়ি কিংবা খুব ভারী কাজের যেসব শাড়ির পুরো জমিনে কাজ ভর্তি এমন শাড়ি পরবেন না। এতে আরও মোটা দেখাবে। মোটা গড়নের মেয়েরা শরীরের সাথে লেগে থাকে এমন শাড়ি নির্বাচন করবেন। বেশি গাঢ় রঙের শাড়ি পরলেও মোটা লাগবে। ভারী জরি পাড় ধরনের শাড়িতেও মোটা লাগবে। কাতান পরলে শুধু পাড় আঁচলে কাজ করা বা মাঝে হালকা ছিটা ছিটা কাজ করা শাড়ি পরুন। সিফন হলে কিছুটা ভারী কাজের পরতে পারেন। কেননা এ শাড়িগুলো শরীরে লেগে থাকে। টিস্যু, মসলিন, ফুলে থাকা শাড়ি মোটেই পরবেন না। প্রিন্টের শাড়ি যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন। মোট কথা নিজেকে বেশি মোটা লাগে এমন শাড়ি কখনো পরা উচিত নয়।
উচ্চতা অনুযায়ীঃ
আপনার উচ্চতা কম হলে সালোয়ার বা প্যান্ট খুব বেশি ঢোলা পরবেন না, তাতে আরও খাটো দেখাবে। টাইটস, লেংগিস বা জেংগিস পরতে পারেন কামিজের সাথে। উচ্চতা কম হলে পশ্চিমা পোশাক পরতে হয় খুব সাবধানে। একেবারে ছোট টপস, গেঞ্জি, শার্ট পরবেন না। মাঝারি ঝুলের ফতুয়া, গেঞ্জি, টপস ইত্যাদি পরুন। আড়াআড়ি স্ট্রাইপ বা বড় প্রিন্টের পোশাক পরবেন না। লম্বালম্বি সরু স্ট্রাইপের পোশাক বেছে নিন। লম্বা যারা তারা একটু খাটো পোশাক পরতে পারেন। একেবারে লং না পরে সেমি লং পোশাক পরতে পারেন। আড়াআড়ি স্ট্রাইপ বা বড় জংলী প্রিন্টের পোশাক বেছে নিন।
প্রতিক্ষন/এডমি/এফজে