হঠাৎ করে খুব বৃষ্টি শুরু হলো। তখন প্রায় রাত ১২টা ২৫। আমি বৃষ্টির শব্দ শুনে ঘুম থেকে উঠে গেলাম। আমার পাশে শুয়ে আছে আমার মামাতো বোন তিশা। ওর বয়স ১০ বছর। ছুটিতে গ্রামে বেড়াতে গিয়েছিলাম।
গ্রামের পরিবেশে রাত ১২টা মানে গভীর রাত। বৃষ্টি পড়ছেতো পড়ছে। থামবার কোন লক্ষণ দেখছিনা। বৃষ্টির শব্দ কখনো ভালো করে শুনিনি। কিন্তু গ্রামে এসে বুঝতে পারছি বৃষ্টি কেমন করে শব্দ করে। কিন্তু আমারতো ঘুম আসছেনা।
বৃষ্টি, চারদিকের অন্ধকার আর আমার ঘুম না আসা ; এসব মিলে এক বিদঘুটে, অদ্ভুত রকমের ভয় লাগছে মনের ভেতর। তার ওপর আবার শুনেছি নানার বাড়ির পাশে একটা বড় পুকুর আছে আর তার পাশে আছে একটা বটগাছ!
প্রথম দিন থেকে খেয়াল করলাম, বাইরে থেকে মাঝে মাঝে কান্নার শব্দ আসে। একটি মেয়ে খুব জোরে জোরে কান্না করছে। প্রতি রাতেই এ কান্নার শব্দটা আমি শুনতে পাচ্ছি।
একদিন আমি, মা এবং আমার কয়েকজন মামাতো বোনেরা মিলে ঠিক করেছি আজ যদি সেই শব্দটা শোনা যায় তাহলে আমরা সেই বটগাছের নিচে যাব। এরপর আমরা অপেক্ষা করছি কিন্তু কান্নার শব্দ সেদিন আর শুনতে পাইনি। তখন সবাই শুয়ে পড়লাম। কিন্তু কিছুক্ষণ পর দেখি, একটা মেয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটি দেখতে বেশ লম্বা আর চুলগুলোও বেশ বড়।
আমাকে হাত দিয়ে ডাকছে। আমি ভালো করে বুঝতে পারিনি, ঘুমের কারণে আমার সবকিছু ঝাপসা লাগছিল। একবার মনে হচ্ছে, কিছু দেখছি আবার মনে হচ্ছে কিছুই দেখছিনা। হঠাৎ চিৎকার দিয়ে উঠলাম!!
আমার চিৎকার শুনে মামাতো বোনরা ঘুম থেকে উঠে গেল। এরপর ওরা আমাকে জিজ্ঞেস করল কী হয়েছে? কিন্তু ভয়ে আমি কিছুই বলতে পারছিলাম না। তবে পরদিন সবাইকে খুলে বললাম পুরো ঘটনাটা। তারপর আমরা এক হুজুরের কাছে গেলাম। হুজুরকে সব খুলে বললাম। তিনি সব শুনে আমাকে কিছু দোয়া শিখিয়ে দিল পড়ার জন্য।
পরে গ্রামের সবাই বলছিল, প্রতি রাতে যে মেয়েটি কান্না করে, সে নাকি ঐ বটগাছের সাথে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে। তার পরিবারের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে। পরে গ্রামের ইব্রাহিম হুজুর এসে গ্লাসের পানিতে দোয়া পড়ে ফু দিয়ে বটগাছের নিচে পানিটা ঢেলে দিল। অবাক করা ব্যাপার হলো, এরপর থেকে গ্রামের কেউ আর তার কান্নার শব্দ শুনতে পায় না।
একথা সেকথা ভাবতে ভাবতে কখন বৃষ্টিটা বন্ধ হয়ে গেল বুঝতেই পারিনি। দূরে কোন মসজিদ থেকে মিষ্টি কন্ঠে মুয়াজ্জিনের আযান শুনতে পাচ্ছি। তাহলেতো ভয় পাওয়ার আর কোন কারণই নেই!