গোপালগঞ্জে অবাধে বালু বিক্রি
হেমন্ত বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি:
বালু ও মাটি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা উপেক্ষা করে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলায় খাল খননের নামে শ্যালো মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে অবাধে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এএস কনস্ট্রাকশনের বিরুদ্ধে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বালু উত্তোলনের কারণে ভাঙনের হুমকির মুখে পড়েছে খালের পাড়ে বসবাসকারীদের ঘরবাড়ি এবং ঐ এলাকার আশপাশের ফসলি জমি।
জানা যায়, কাশিয়ানীর বলুগা খালের তালতলা থেকে আড়য়াকান্দি পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার খননের প্রকল্প গ্রহণ করে পাউবো। এই ১০ কিলোমিটারের জন্য ৩টি প্যাকেজে টেন্ডার দেওয়া হয়। এরমধ্যে ২ কোটি ৩৪ লাখ টাকায় রামদিয়া থেকে আড়য়াকান্দি পর্যন্ত তিন কিলোমিটারের কাজ পেয়েছে মেসার্স এএস কনস্ট্রাকশন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, খনন কাজে পাউবো’র সরবরাহকৃত নকশা, পরিমাপ ও বিধিমালা কোনোটিই সঠিকভাবে মানা হচ্ছে না। খালের যে স্থানে বালু পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে শ্যালো মেশিন বসিয়ে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করে সরকারি জায়গায় না ফেলে টাকার বিনিময় স্থানীয়দের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বালু ফেলার জন্য খালের তীরে পাউবো’র পর্যাপ্ত পরিমাণ জায়গা রয়েছে। কিন্তু সেখানে বালু ফেলা হচ্ছে না। টাকা নিয়ে তা স্থানীয় প্রভাবশালীদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। এমনকি, খালের তীরে বসবাসকারী দরিদ্র লোকদের কাছ থেকেও সরকারি জায়গা ভরাট করে দিয়ে টাকা নেওয়া হচ্ছে।
কাশিয়ানী উপজেলার আড়য়াকান্দি গ্রামের সমশের আলী বলেন, ‘রামদিয়া বাজার থেকে আড়য়াকান্দি পর্যন্ত বলুগা খালের প্রায় ২০টি স্থানে শ্যালো মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এসব বালু পাইপ লাইনের মাধ্যমে প্রভাবশালীদের বাড়ির ভিটা, পুকুর, খাল-নালা, রাস্তা, মার্কেট, দোকানপাট ভরাটের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।’
রামদিয়া বাজারের ব্যবসায়ী করম আলী শেখ বলেন, ‘সরকারের কোষাগারে রয়েলিটি জমা দিয়ে ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পত্তিতে বালু নেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু এখানে নীতিমালা উপেক্ষা করে প্রতিদিন হাজার হাজার ঘনফুট বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে।’
উপজেলার সাফলীডাঙ্গা গ্রামের আবুল হোসেনের অভিযোগ, ‘খাল ড্রেজিং করা হচ্ছে না। খালের যে স্থানে বালু উঠছে, সেখানেই শুধু মেশিন বসানো হচ্ছে। বিপুল পরিমাণ বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি, ঘরবাড়ি ভাঙনের হুমকির মুখে পড়েছে।’
পাউবো’র জায়গায় বসবাসকারী রাজিয়া বেগম (৪০) বলেন, ‘আমরা গরীব মানুষ; সরকারি জায়গায় থাকি। বাড়ির সামনের গর্তটা ভরাট করে দিতে ঠিকাদারের লোকদেরকে বলেছি। কিন্তু সরকারি জায়গা ভরাট করে দিতেও তাদের ফুট প্রতি ৫ টাকা করে দিতে বলেছে। পাশাপাশি মেশিন চালকদের খাবার দিতে হবে বলেও দাবি করেছে।’
সাফলীডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রহমান (৬০) জানান, তার বাড়ি সংলগ্ন খালে দুই সপ্তাহ ধরে বালু উত্তোলন করছে ঠিকাদারের লোকেরা। তিনি নিষেধ করলে তাকে উল্টো ‘দেখে নেওয়া’র হুমকি দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্স স্টাডিজের পরিবেশকর্মী বিধান টিকাদার বলেন, ‘বালু ও মাটি ব্যবস্থাপনা বিধিমালায় শ্যালো মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এতে ভূমিকম্পের প্রবণতা সৃষ্টি হওয়ার আশংকা থাকে।’
গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. সাঈদ-উর-রহমান বলেন, ‘বালু ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন অনুযায়ী বালু বিক্রির অধিকার ঠিকাদারদের নেই।’
গোপালগঞ্জ পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দিন বলেন, ‘শ্যালো মেশিন দিয়ে খাল খনন করা যাবে না। উত্তোলন করা বালু সরকারি জায়গার বাইরে ফেলাও যাবে না। আমি ঠিকাদারদের এ নিয়ে সাবধান করে দিয়েছি। নির্দেশনা না মানলে মেশিনসহ তাদের আটক করে জেলে পাঠাবো।’
প্রতিক্ষণ/এডি/সাই