ঘুরে আসুন অনন্য সুন্দর গুঠিয়া মসজিদ(ভিডিও সহ)

প্রকাশঃ আগস্ট ৭, ২০১৫ সময়ঃ ১০:২৪ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৯:০১ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ghuthia 3আনন্দ, ভালোলাগা আর রূপময় স্বপ্নীল পৃথিবীতে ক্ষণিকের জন্য হারিয়ে যেতে মন ছুটে চলে অজানা কোনো সৌন্দর্যের হাতছানি দেয়া পাহাড়, নদী, সাগর কিংবা অরণ্যে।বড় একঘেঁয়ে মনে হয় যখন জীবন। মন চায় কোনো শিল্পের কারুকার্যে মন রাঙাতে। আর সে মনের খোরাক জোগাতেই দূর থেকে দূরে ছুটে চলা। সে চলার পথের একটি জায়গা বরিশাল জেলার গুঠিয়া ইউনিয়ন। সেখানে শিল্পের ছোঁয়ায় তৈরি করা হয়েছে ‘বায়তুল আমান জামে মসজিদ ও ঈদগাহ কমপ্লেক্স’। স্থানীয় লোকদের কাছে এটি পরিচিত ‘গুঠিয়া মসজিদ’ নামে। বরিশাল মহানগরী থেকে ২২ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে বানারীপাড়া সড়কসংলগ্ন উজিরপুর উপজেলায় এই গুঠিয়া গ্রামের অবস্থান।

বরিশাল-বানারীপাড়া সড়ক ধরে এগোলেই উজিরপুর উপজেলা । সড়কের পাশে গুঠিয়ার চাংগুরিয়া গ্রাম। এ গ্রামেই আছে দক্ষিণাঞ্চলের বৃহৎ গুঠিয়া মসজিদ।

২০০৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর উজিরপুরের গুঠিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা শিক্ষাণুরাগী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এস. সরফুদ্দিন আহম্মেদ সান্টু চাংগুরিয়ার নিজ বাড়ির সামনে প্রায় ১৪ একর জমির উপর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের মধ্য দিয়ে ব্যক্তিগত ভাবে গুঠিয়া বাইতুল আমান জামে মসজিদ-ঈদগাহ্ কমপ্লেক্স এর নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করেন। তিন বছর মেয়াদের মধ্যে উক্ত নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিলেন এস. সরফুদ্দিনের ছোট ভাই মোঃ আমিনুল ইসলাম নিপু।guthia 2

তিনি ২০০৬ সালে উক্ত জামে মসজিদ- ঈদগাহ্ কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেন। তার নির্মানাধীন সময়কালের মধ্যে তিনি একটি বৃহৎ মসজিদ-মিনার, ২০ হাজার অধিক ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন ঈদগাহ্ ময়দান, এতিমখানা, একটি ডাকবাংলো নির্মান, গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা, লেক-পুকুর খনন কাজ সহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপণ-ফুল বাগান তৈরি ও লাইটিং ব্যবস্থা সম্পন্ন করেন। ঐ নির্মাণ কাজে প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার নির্মাণ শ্রমিক কাজ করেছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়। পরে গুঠিয়ার নামেই মসজিদটি পরিচিতি লাভ করে। চাংগুরিয়া গ্রামের ব্যবসায়ী এস সরফুদ্দিন আহমেদ এটির নির্মাণ ব্যয় বহন করেন।

মসজিদ ও ঈদগাহ কমপ্লেক্স নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২০ কোটি টাকা। সময় লেগেছে চার বছর এক মাস। ২০ কোটি টাকা ব্যায়ে ১৪ একর জমির ওপর নির্মিত মসজিদ ও ঈদগাহ কমপ্লেক্সের মূল গেট দিয়ে প্রবেশ করলে ডান পাশে রয়েছে একটি পুকুর, পুকুরটির চার পাশ বিভিন্ন রঙের ফুল ও গাছ দিয়ে সাজানো হয়েছে। দর্শনার্থীদের চলাচলের জন্য পুকুর পাড়ের রাস্তা পাকা করে দেয়া হয়েছে। মোজাইক দিয়ে তৈরি শান বাঁধানো ঘাটের বাদামগাছের নিচে বসে বাতাসের শীতল ছায়ায় শরীর জুড়িয়ে নিতে পারেন মুসল্লিরা। ঘাটের ঠিক উল্টো দিকে মসজিদের প্রবেশপথে বসানো হয়েছে দু’টি ফোয়ারা। রাতে আলোর ঝলকানিতে ফোয়ারাগুলো আরো দৃষ্টিনন্দন হয়ে ওঠে।

মসজিদের তিন পাশে খনন করা হয়েছে কৃত্রিম খাল। মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের তিন-চারটি মসজিদের আদলে, তবে হুবহু একই রকম নয়। এটির প্রতিষ্ঠাতা সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু তার কয়েকজন স্থপতি বন্ধুকে নিয়ে যান শারজাহ, দুবাই, তুরস্ক, মদিনা শরিফ, ভারত ও পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। স্থপতিরা বিদেশী বিভিন্ন স্থাপত্য কর্মময় মসজিদের আদলে গুঠিয়ায় এ মসজিদটি নির্মাণ করেন।

মসজিদের সামনের পুকুরটি এমনভাবে খনন করা হয়েছে, যাতে পুকুরের পানিতে মসজিদটির পুরো প্রতিবিম্ব দেখা যায়।

২০টি গম্বুজের স্থাপত্যকলায় সাজানো হয়েছে বায়তুল আমান জামে মসজিদ ও ঈদগাহ কমপ্লেক্স। মাঝখানের কেন্দ্রীয় গম্বুজের চার পাশে বৃত্তাকারে ক্যালিওগ্রাফির মাধ্যমে লেখা হয়েছে পবিত্র আয়াতুল কুরসি। গোটা মসজিদের ভেতরের চার পাশজুড়ে ক্যালিওগ্রাফির মাধ্যমে লেখা হয়েছে সুরা আর রাহমান। ভেতরের চার কোণের চার গম্বুজের নিচে, প্রবেশ তোরণের সামনে এবং ভেতরের দর্শনীয় কয়েকটি স্পটে শোভা পাচ্ছে আল কুরআনের বিভিন্ন আয়াতসংবলিত ক্যালিওগ্রাফি। এসব সুদৃশ্য ক্যালিওগ্রাফি এবং আলপনা করা হয়েছে বর্ণিল কাঁচ, মূল্যবান মার্বেল পাথর, গ্রানাইট ও সিরামিক দিয়ে। ভেতরের নয়টি গম্বুজে বিশালাকৃতির নয়টি অত্যাধুনিক ও মূল্যবান ঝাড়বাতি বসানো হয়েছে।guthia

মসজিদটির মিনারের উচ্চতা ১৮৩ ফুট। মসজিদটির মেঝেতে বসানো হয়েছে ভারত থেকে আনা সাদা মার্বেল পাথরের টাইলস। মসজিদটির ভেতরে এক হাজার ৪০০ মুসল্লি একসাথে নামাজ আদায় করতে পারেন। বাইরের অংশে আরো পাঁচ হাজার মুসল্লি একত্রে নামাজ পড়তে পারেন। মুসল্লিদের সুবিধার্থে স্থাপন করা হয়েছে বিদেশ থেকে আনা অত্যাধুনিক সাউন্ড সিস্টেম।

মসজিদের উত্তর পাশে দুই তলাবিশিষ্ট ভবনে রয়েছে কমপ্লেক্সের অফিস, খতিব ও মুয়াজ্জিনের কোয়ার্টার, এতিমখানা ও হাফেজিয়া মাদরাসা।
মসজিদটির পূর্ব-দক্ষিণ কোণে আড়াই একর জায়গায় রয়েছে কবরস্থান। পুরো কমপ্লেক্সের আঙিনাজুড়েই রয়েছে ফুলের বাগান, গাড়ি পার্কিং ও হেলিপ্যাড। নিরাপত্তার জন্য কমপ্লেক্সের তিন দিকে মনোরম লেক তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া কাঁটাতারের বেষ্টনী তো আছেই।

বিদ্যুৎ লাইনের পাশাপাশি রয়েছে ১৫০/১৫ কেভিএ শক্তিসম্পন্ন নিজস্ব দু’টি জেনারেটর, যার কারণে মসজিদটি রাতে অনেক বেশি নয়নাভিরাম মনে হয়। কারণ এর ভেতরে-বাইরে এমনভাবে আলোকসজ্জা করা হয়েছে, যা দর্শকদের নিয়ে যায় অপার্থিব জগতে। যা দেখে মনে পড়বে মহান স্রষ্টা আল্লাহর কথা, আপনা থেকেই মাথা নুয়ে আসতে চাইবে মহান প্রভুর দিকে।
২০০৬ সালের ২০ অক্টোবর জুমার নামাজ আদায়ের মাধ্যমে এ মসজিদটির উদ্বোধন করেন ছারছিনা দরবার শরীফের পীর মাওলানা শাহ মোহাম্মদ মোহেববুল্লাহ। মসজিদটি উদ্বোধনের পর থেকেই অগণিত দর্শনার্থী ভিড় জমান এর আঙিনায়।

বরিশাল শহর থেকে সরাসরি বাসে কিংবা সিএনজিতে করে বায়তুল আমান জামে মসজিদ ও ঈদগাহ কমপ্লেক্স চলে যেতে পারবেন।

প্রতিক্ষণ/এডি/নির্ঝর

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G