চবি সাংবাদিকতা বিভাগের নতুন চেয়ারম্যান আজাদ

প্রকাশঃ জানুয়ারি ১৬, ২০১৭ সময়ঃ ৯:০০ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৪:০৭ অপরাহ্ণ

রাকিব হাসান:

Azad sir

বর্তমান সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ছাত্রবৎসল শিক্ষক খুব কমই আছেন। সীমাহীন স্নেহ ও নি:স্বার্থ ভালবাসার টানে যাঁর কাছে প্রতিনিয়ত ছুটে যান ছাত্র-ছাত্রীরা। উদার মনে সবাইকে কাছে টেনে নেওয়ার মতো দূর্লভ গুণের কারণে তাঁর সাবেক শিক্ষার্থীরা এই চরম ব্যস্ততার যুগেও নিয়মিত তার খোঁজ রাখেন; চট্টগ্রামে ছুটে আসেন। নির্বিঘ্নে মন খুলে যাঁর সাথে আলোচনা করা যায়, তিনিতো কাছের না হয়ে পারেন না। মানসিকভাবে ভেঙে পড়া কোনো শিক্ষার্থীকে কীভাবে জীবন যুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করতে হয়,স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে হয়, সেটাও তিনি বেশ ভালোই জানেন।

শিক্ষার্থী কোন ঘরানার, কোন মতের-দলের বা আদর্শের সেটা না ভেবেই বিপদে অভিভাবকের মতো পাশে দাঁড়ান তিনি। আর সেকারণেই গত এগারো বছর ধরে অগণিত শিক্ষার্থীর শ্রদ্ধা আর ভালবাসা অর্জন করেছেন। নিজ গুণেই বিভাগের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের কাছে এখনও তিনি সমান জনপ্রিয়। হাসিখুশি ও বিনয়ী এই শিক্ষক-ই এবার হাল ধরছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়- যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের। আজ ১৬ই জানুয়ারী থেকে বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন সেই সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ।

উল্লেখ্য, ১৯৭৮ সালে ১০ই সেপ্টেম্বর বৃহত্তর সিলেটের হবিগঞ্জ জেলার আজমিরী গঞ্জের শিবপাশা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম হয় শিক্ষক আবুল কালাম আজাদের। তিনি ১৯৯৪ সালে ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ থেকে এস.এস.সি ও একই কলেজ থেকে ১৯৯৬ সালে এইচএসসি পাশ করেন। সামরিক বাহিনীর চাকচিক্যময়-শৃঙ্খলিত জীবন টানেনি এই ফৌজিয়ানকে। তাই সেপথে না গিয়ে বন্ধনহীন বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনকে স্বাগত জানান তিনি। প্রাণের টানেই ১৯৯৭ সালে ভর্তি হন চবি যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী হিসেবে।

15170881_1340078582682825_6896368999023329850_n
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদের সাথে বিভাগের সাবেক                                        শিক্ষার্থী ও একুশে টেলিভিশনের ক্রাইম রিপোর্টার রাকিব হাসান

নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে অবশেষে ২০০৪ সালে নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিয় বিভাগেই যোগ দেন শিক্ষক হিসেবে। দীর্ঘ ১১ বছর অধ্যাপনার পর বিভাগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন আবুল কালাম আজাদ। তাঁর এই দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে মোরশেদুল ইসলামের পর যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক আরেকজন শিক্ষার্থী হিসেবে তিনি বিভাগের সভাপতির পদ অলংকৃত করলেন। যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অনেক অর্জনের মধ্যে এটাকেও অন্যতম অর্জন হিসেবে দেখছেন বিভাগের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ কখনও থেমে থাকেননি। ক্রমেই নিজেকে বিস্তৃত করেছেন জ্ঞান অন্বেষণে এবং নিবৃত করেছেন পাঠদানে। আত্মপ্রত্যয়ী এই শিক্ষক তাঁর বিভাগের উন্নয়নে নিজের মেধা ও যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখবেন বলে মনে করেন শুভাকাঙ্খিরা।

এ পর্যন্ত দেশী ও বিদেশি জার্নালে তাঁর পনেরোটিরও বেশি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লিখছেন এবং টিভি টকশোতে অংশগ্রহণ করছেন।

তাঁর উল্লেখযোগ্য গবেষণা প্রবন্ধ: Professional stress in journalism: A study on electronic media journalists of Bangladesh প্রকাশিত হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রর জার্নাল Advances in journal and communication- এ। এছাড়া কানাডা থেকে প্রকাশিত বিখ্যাত গবেষণা জার্নাল এশিয়ান প্রোফাইলে প্রকাশিত হয়েছে Health Communication activities of NGOS in public health in Bangladesh: An Analysis শীর্ষক প্রবন্ধ। এর বাইরেও গণমাধ্যম বিষয়ে তার গবেষণা প্রবন্ধ দেশি এবং বিদেশী জার্নালে নিয়মিতভাবেই প্রকাশিত হচ্ছে।

যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে মিডিয়া রাইটিং : ইংলিশ, ব্রডকাস্ট জার্নালিজম, ইন্টারকালচারাল কমিউনিকেশন, কমিউনিকেশন পলিসি এন্ড প্লানিং, পাবলিক রিলেশন্স, ইন্টারপারসোনাল কমিউনিকেশন-সহ নানা কোর্স তিনি পড়িয়ে আসছেন।

Azad sir and students
ছাত্রছাত্রীদের সাথে শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ

এছাড়া টিচিং মেথোলজি, রিসার্চ মেথোলজি, টিভি রিপোর্টিং এন্ড এডিটিং, অনলাইন জার্নালিজম ইত্যাদি বিষয়ে তিনি আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন।

যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ নিয়ে তাঁর পরিকল্পনা কী জানতে চাইলে তিনি প্রতিক্ষণকে জানান, ‘‘বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের সহযোগিতা ও আন্তরিকতার ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধভাবে যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগকে আর্ন্তজাতিক মানের ‘সেন্টার অব এক্সিলেন্স’ হিসেবে গড়ে তোলা তাঁর প্রধান লক্ষ্য। এছাড়া তাঁর জার্মান সফরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি সবাইকে নিয়ে খুব অল্প সময়ের মধ্যে বিভাগে অনলাইন নিউজ পোর্টাল চালু করতে চান। এছাড়া সাংবাদিকতার শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের লক্ষ্যে ভবিষ্যতে ক্যাম্পাস রেডিও এবং ক্যাম্পাস টিভি চালু করবেন বলেও জানান তিনি। সর্বোপরি সাংবাদিকতা বিভাগকে আর্ন্তজাতিক মানের করে গড়ে তুলতে সবার সহযোগিতাও প্রত্যাশা করেন বিভাগের নতুন সভাপতি আবুল কালাম আজাদ।

যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ অলংকৃত করায় প্রতিক্ষণ পরিবারের পক্ষ থেকেও এই শিক্ষকের প্রতি প্রাণঢালা অভিনন্দন ও নিরন্তর শুভেচ্ছা।

প্রতিক্ষণ/এডি/শাআ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G