জীবন বাঁচানোর পরিবর্তে রক্ষা করলো যুদ্ধবিমান
ডেস্ক রিপার্ট, প্রতিক্ষণ ডটকম:
ক্রিস্টোফারের বয়স ৪৪ এবং দুই সন্তানের পিতা। ২৩ বছর ধরে তিনি রয়াল নেভিতে পাইলট হিসেবে কর্মরত। ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে সংবর্ধনার আগে লন্ডন ল্যানচেস্টার হাইজে চিফ অফ দি জেনারেল স্টাফ জেনারেল স্যার নিকোলাস তাকে এয়ারফোর্স ক্রস মেডাল পরিহিত করে সম্মানিত করেন। সাধারণত যুদ্ধক্ষেত্রে জীবন বাজি রেখে দুঃসাহসিক এবং বীরত্মপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য কাউকে এ পদক দেয়া হয়ে থাকে।
নিজের জীবনের পরিবর্তে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিবাহী একটি বিমান রক্ষার চেষ্টা এবং অবশেষে তা সফলভাবে অবতরন করাতে পারায় ক্রিস্টোফার রীতিমত হিরো বনে গেছেন ইউটিউবে। মেডাল পাওয়ায় অনেকটা বিস্মিত ক্রিস্টোফর কৌতুক করে জানান, ঘটনার পর তিনি মাত্র তিনটি ফোন পেয়েছিলেন এবং তার মধ্যে একজন তার স্ত্রী ও আরেকজন তার মেয়ে। কিন্তু কি ছিল সেই ঘটনা?
সি ফিউরি টি২০ এটা ছিল একটা যুদ্ধ বিমান। এই ৭০ বছরের পুরনো বিমানটি নিয়ে আকাশে ওডেন এক পাইলট। তিনি বিমানটি নিয়ে কখনো আকাশের দিকে সোজা উঠে যাচ্ছিলেন, কখোন নিচের দিকে ডাইভ দিয়ে মানুষের মাথার উপর দিয়ে উড়ে গিয়ে আবার উপরে উঠে যাচ্ছিলেন। আবার কখোন পাক খাচ্ছিলেন মধ্য আকাশে।
আর এই বিমানটি ১৯৪৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নির্মিত। ব্রিটিশ রয়াল এয়ারফোর্সের জন্য এটিই ছিল সর্বশেষ নির্মিত প্রপেল চালিত যুদ্ধবিমান। যুক্তরাজ্য রয়াল নেভি এবং এয়ারফোর্স কর্ণওয়ালে একটি এয়ারশো আয়োজন করে । হাজার হাজার দর্শক উপস্থিত হন এয়ারশো উপভোগের জন্য। সেখানেই এই বিমানের বিশেষ মহড়া চলছিল।
তবে এই জাতীয় এ্যারোবেটিক শো চলাকালে হঠাৎ পাইলট টের পেলেন বিমানটির ইঞ্জিনের জোর কমে আসছে। তিনি মিমানটি ল্যান্ড করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। দ্রুত ল্যান্ডিং গিয়ার নিচে নামালেন। এমন সময় কন্ট্রোল অফিস থেকে তাকে জানানো হল তিনি বিপদের সম্মুখীন। বিমানটি তখনো মধ্য আকাশে। এসময় হঠাৎ করে বিমানের ইঞ্জিন একেবারে বন্ধ হয়ে গেল। এয়ারশোতে উপস্থিত হাজার হাজার দর্শক বিস্ময়ের সাথে দেখতে লাগল বিমানটি ধাম করে নিচে নেমে আসছে। পেছন থেকে ধোয়া বের হচ্ছে।
বিমানের পাইলট লে. কমান্ডার ক্রিস্টোফর গোটকির তৎক্ষনাত মনে আসল তিনি বিমান থেকে ঝাপ দিয়ে নিজের জীবন বাঁচানোর পরিবর্তে ঐতিহাসিক যুদ্ধবিমানটি রক্ষা করবেন। তাই কিভাবে বিমানটি নিরাপদে ল্যান্ডিং করা যায় সেদিকে মনোযোগ দিলেন। দ্রুত গতিতে নিচে নেমে আসতে থাকা বিমানটিকে তিনি রানওয়েমুখী করলেন কোনমতে।
অবশেষে জীবনের ঝুকি নিয়ে তিনি নিরাপদে বিমানটি অবতরন করাতে সক্ষম হলেন। অবতরনের আগে বের হওয়া বিমানের দুটি চাকার একটিকে দেখা যায় ভাঙ্গা ঠ্যাংয়ের মত ঝুলছে। ভাঙ্গা চাকা মাটিতে টাচ করা মাত্র কাত হয়ে পাখা মাটিতে ঠেকে গিয়ে কিছুটা ভারসাম্য রক্ষিত হল। এরই মাঝে ভেঙ্গে গেল অন্য চাকাটিও।
তবে এই পাইলটের ভাগ্য ভালো যে, বুকে ভর দিয়ে কিছুদূর বিমানটি সামনে অগ্রসর হলেও সেটি বিদ্ধস্ত বা ভস্মিভূত হয়নি। তবে বিমানটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগস্ত হয়েছে। মধ্য আকাশে বিমানটির ইঞ্জিন বিকল হওয়ার পরও তিনি সেখান থেকে ঝাপ না দিয়ে বিমানটিকে নিরাপদে অবতরন করাতে সক্ষম হওয়ায় সেনা প্রধান তাকে এয়ারফোর্স ক্রস মেডাল দিয়ে গর্বিত করেন। সংবর্ধনা পান পান প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন কাছ থেকেও।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে জার্মান বাহিনীর পরাজয় ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে সি ফিউরি টি২০ নামক এ যুদ্ধবিমানটি নির্মান করা হয়। ব্রিটিশ রয়াল নেভিতে এটাই ছিল সর্বশেষ নির্মিত প্রপেল চালিত এক ইঞ্জিন বিশিষ্ট যুদ্ধ বিমান। যা রক্ষার জন্যই এই বিশেষ অবদান।
প্রতিক্ষণ/এডি/রাইমান