জীবন সংসারের কেন’র কি কোনো উত্তর আছে?

প্রকাশঃ অক্টোবর ২৩, ২০১৬ সময়ঃ ৮:২৪ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৬:১৩ অপরাহ্ণ

শারমিন আকতার:

question-1038491_960_720

পৃথিবীতে ‘কেন’ শব্দটা আছে বলেই আজ এত সমৃদ্ধ হচ্ছি আমরা। বিজ্ঞান এগিয়ে গেছে এই ‘কেন’প্রশ্নটা বিজ্ঞানীরা করেছে বলেই। এখনও কোনো শিক্ষার্থী ‘কেন’দিয়ে প্রশ্ন করলে শিক্ষকরা খুব খুশি হয়ে যান; এই ভেবে যে, তার শিষ্য জানার চেষ্টা করছে। বাচ্চাদের হাজারো ‘কেন’র জবাব দিতে দিতে বাবা-মা ক্লান্ত। আবার মনে মনে এও ভেবে তৃপ্তি পান, ‘আমার বাচ্চাটা বেশ মেধাবী হবে বলেই মনে হচ্ছে’। কারণটাও সেই দিনরাত এক করে ফেলা ‘কেন’র কারণে।

এই ‘কেন’ প্রশ্নটা করছে বলে আজ যাদের এত বাহবা দেওয়া হচ্ছে; জীবন সংসারের গ্যারাকলে পড়ে তারাই যখন এই ‘কেন’ প্রশ্ন করে তখন ‘কেন’ সবাই এত বিরক্ত হয় বলতে পারেন? সব ‘কেন’র কি আসলেই জবাব দেওয়া যায়? সমাধান দেওয়া কি আদৌ সম্ভব হয়? যেমন ধরুন, সংসার জীবনে হাজারো ‘কেন’ থাকে এবং আছে। কিন্তু এই ‘কেন’র কি কোনো জবাব কেউ কখনও দিতে পেরেছে?

সত্যি এটাই, সংসার জীবনের হাজারও ‘কেন’র কোনো জবাব নেই। কখনও ছিল না, এখনও নেই; আর ভবিষ্যতেও থাকবে না। জীবন সংসার এমনই এক আমাজন অথবা ভুতুরে ভুতের গলি; যা দেখবেন, বুঝবেন, শুনবেন কিন্তু ‘কেন’ নামক প্রশ্ন করে সঠিক কোনো জবাব পাবেন না। হয়তো একদিন আমাজন কিংবা ভুত নামক রহস্যেরও কূল কিনারা খুঁজে পাবেন ভবিষ্যৎ ডুবুরী’রা। কিন্তু জীবনের আমাজন রহস্যের ভৌতিক সমাধান কি কখনও আসবে? 

এখানে ভালো মানুষগুলোকে ‘কেন’ কষ্ট পেয়ে যেতে হয় জানেন? ‘কেন’ একসময় এই কষ্টের ভেতর থাকতে থাকতেই তাদের অকাল মৃত্যু হয়? যেই ‘কেন’দের কারণে এত দু:খ; সেই ‘কেন’রা ‘কেন’ শান্তিতেই জীবন কাটাই, বলতে পারেন? অযোগ্য, অপদার্থরা দিব্যি সুখের ও শান্তির গেরস্থালী করে যাচ্ছে। আর ‘যিনি রাঁধেন তিনি চুলও বাঁধেন’ এমন মানুষগুলো ‘কেন’ সারাটা জীবন শুধু কষ্ট বয়ে বেড়াবে, বলতে পারেন? ‘কেন’ জীবন সমাজের রঙ্গমঞ্চের নিখুঁত অভিনেতা-অভিনেত্রীরাই শান্তির সাদা পায়রা হাতে ঘুরে বেড়াবে এ দিক থেকে ওদিক? অথচ সাদা মনের মানুষগুলো শুধু চিল-শকুনের খাদ্য হয়েই থাকবে। উত্তর দিতে পারবেন ‘কেন’?

কেউ দু-চার পয়সা দিয়ে সংসারের হাল ধরে রেখেছে। আবার কেউ কোটি টাকা দিয়েও সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। কী অদ্ভূত তাই না? এই ‘কেন’র কোনো উত্তর আছে আপনার কাছে? আবার রক্ত রক্তকে, মানে ভাই ভাইকে কিংবা ভাই বোনকে সহ্য করতে পারে না, অথচ বোনে বোনে কী গলায় গলায় মিল! একদিকে রক্তের বাঁধনকে ছিঁড়বার কী প্রাণান্তকর চেষ্টা; আর অন্যদিকে সেই একই রক্তের বাঁধনকে বেঁধে রাখবার কী আপ্রাণ প্রচেষ্টা। বোন যদি বোনের সাথে থাকতে পারে; তাহলে ভাই ‘কেন’ তার চিরচেনা রক্তকে অস্বীকার করে? মা ‘কেন’ ভালো শাশুড়ী হতে পারে না? ছেলের বউ ‘কেন’ শাশুড়ীকে নিজের মায়ের মতো ভাবতে পারে না? নিজের মেয়ে ছাড়া অন্য মেয়েদের বাবা’রা কেন মেয়ের মতো ভাবতে পারে না? দশ টাকার জন্য একজন মানুষ ‘কেন’ আরেকজন নিরীহ মানুষের জীবন কেড়ে নেয়? বলতে পারেন?

ছেলেবেলার বুদ্ধিভিক্তিক ‘কেন’ চিহ্নটি বেলা বাড়ার সাথে সাথে দূর নক্ষত্রের মতো অনেক দূরে সরে যায়; তবে একেবারে চলে যায় না। তাইতো চাইলেই কোনো প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া যায় না। জীবন বড় কঠিন। তবে এড়িয়ে যাবেন সে মন্ত্রও জানা নেই। তাই ‘কেন’ প্রশ্নটি বারবার তাড়িয়ে বেড়াবে বুনো ষাঁড়ের মতো করে; শুরু থেকে একেবারে শেষ পর্যন্ত। এটাই জীবন।

 ========

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G