জেনেটিক ডিসঅর্ডার প্রতিরোধে সচেতনতার প্রয়োজন

প্রকাশঃ অক্টোবর ২৩, ২০১৫ সময়ঃ ৬:৫৯ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৬:৫৯ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

gdso-011জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্ম গ্রহণকরা শিশুরা সামাজের বোঝা নয়, তারাও আমাদের মতোই মানুষ। জীণ ত্রুটির কারণে তারা সূর্য রশ্মির বীকিরণের ফলে সৃষ্ট জটিলতায় আজ তাদের জীবন আবদ্ধ ঘরের চার দেয়ালের মাঝে। শুক্রবার উত্তরার কোয়ান্টাম হোটেল এণ্ড রিসোটে “জেনেটিক ডিসঅর্ডার আক্রান্ত শিশু: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ” শীর্ষক সেমিনার এবং মুক্ত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তবে এসব কথা বলেছেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও প্রধান নিয়ন্ত্রক আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জনাব মজিবর রহমান।

 

তিনি আরো বলেন, জেনেটিক ডিসঅর্ডার একটি জীন গঠিত রোগ।এই রোগের আক্রান্তদের জন্য সূর্যের আলো অত্যন্ত ক্ষতিকর। কিন্তু বাংলাদেশে এই রোগ সম্পর্কে মানুষের মাঝে অনেক কুস্কার রয়েছে। এই বংশীয় জীন প্রণালী থেকে উদ্ভূত। এরোগটি সম্পর্কে এখনো কোনো গবেষণা ধর্মী প্রতিবেদন তৈরি না হওয়ায়। এসব অনেক সময়ে রোগী সম্পর্কে কোনো ধারণাই নিতে পারেন না ডাক্তার কারণ বাংলাদেশ সাধারণ মানেরই জীন নিন্ময়ের কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই ডাক্তার রোগী উভয়েই রোগটি সম্পর্কে অন্ধকারেই থেকে যাচ্ছেন। “জেনেটিক ডিসঅর্ডার অর্গানাইজেশন”এমন উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই।

 

সচিব আরো বলেন, শিশু’র জন্মের পূর্বে গর্ভবতী মা ও পরিবারকে কাউন্সিলিং করানোর মাধ্যমে এই রোগ প্রতিরোধ করা যায়। একই সাথে যারা এই রোগে আক্রান্ত তাদের পরিবারকেও সচেতন করা যায়। এই কাজটি সরকারের একার নয়, এজন্য প্রয়োজন সরকারের পাশাপাশি রাষ্ট্রের সাধারণ নাগরিকদের এগিয়ে আসা।

 

মজিবর রহমান বলেন, আমাদের দেশে এখন এনজিও মানেই এখন ক্ষুদ্রঋণ, সঞ্চয়, জামানত ইত্যাদি। কিন্তু জেনেটিক ডিসঅর্ডার সাপোর্ট অর্গানাইজেশন-এর মতো বাংলাদেশে অন্যান্য এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলোও যদি সরকারকে এসকল সমস্যা মোকাবেলার জন্য সাহায্য করে তাহলে এই সমস্যার কিছুটা হলেও সমাধান হবে বলে আমি দৃড়ভাবে আশাবাদী।

 

তিনি বলেন, এই সংগঠনটির সমাজকর্মীগণ সমাজের ভুক্তভোগী পরিবারের বোবা কান্না ও অব্যক্ত ব্যাথার সহমর্মি সংগঠন। আজকের সভার বিশিষ্ট জনদের বক্তব্যে এই উপেক্ষিত অংশের দু:খ, ব্যধনা ও সমস্যার কথা শুনে আমি আবেগে আপ্লুত হয়েছি। তাদের বক্তব্যের সাথে আমার একাত্মতা প্রকাশ করছি। আমার জানা মতে, জেনেটিক ডিসঅর্ডার সাপোর্ট অর্গানাইজেশন ছাড়া অন্যকোন দেশী সংগঠন নেই যারা সমাজে জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্ম গ্রহণকরা শিশু ও তাদের পরিবারের প্রতি এগিয়ে এসেছে। এ জন্য এ সংগঠনটি বিশেষভাবে ধন্যবাদ পাওযার যোগ্য। তবে তাদের কাজকে টেকসই করার জন্য প্রয়োজন সমাজের সচেতন ব্যাক্তিদের সহযোগিতা ও সমর্থন।

 

জেনেটিক ডিসঅর্ডার সংগঠনের বার্তাসমূহ সংশ্লিষ্ট পরিবার ও তাদেরকে সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক এমন ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিকট পৌঁছে দেয়া আমাদের সকলের নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব।

 

এ সংগঠনের চেয়ারম্যান ডাঃ জামাল ও নির্বাহী পরিচালক জনাব তারেকসহ অন্যান্য সদস্যগণ নিজ উদ্যোগে সংগঠনটিকে এ পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে এসেছেন জেনে আমি সংগঠনের ব্যাপারে অত্যন্ত আশাবাদি। এদের মত মানুষের কর্মপ্রয়াসেই সমাজে সৃষ্টি হয় নতুন আশার আলো। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে এ সংগঠনটিকে টেকসই এবং সমাজে বিসৃত এলাকায় কর্মসূচী সম্প্রসারণ করার জন্য কয়েকটি পরামর্শ দিতে চাই—-

 

পর্যায়ক্রমে জরিপের মাধ্যমে এলাকা ভিত্তিক জেনেটিক আক্রান্ত শিশু ও তাদের পরিবারের তালিকা তৈরি ও আর্থ সামাজিক অবস্থা নির্ণয়।

আক্রান্ত শিশু ও তাদের পরিবারের জন্য পরামর্শসেবা বা কাউন্সিলিং সার্ভিস প্রবর্তন।

এ রোগিদের চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য একটি স্বেচ্ছাসেবী চিকিৎসক দল গঠন এবং মাসে এক বা একাধিকবার বিনামূল্যে বা সাশ্রয়ী মূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান।

এ সকল রোগিদের নিবিড় পরিচর্যার জন্য (ঈধৎব এরাবৎ) বা সেবা প্রদানকারী দলগঠন ও তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান।

দরিদ্র পরিবারের পিতা-মাতাদের জন্য আয় বর্ধক কর্মসূচী চালু করণ।

সামাজিক সচেতনতার জন্য এডভোকেসী প্রোগ্রাম তথা নিয়মিত সেমিনার, ওয়ার্কশপ, প্রচারপত্র, প্রিন্ট ও ডিজিটাল মিডিয়ায় সাক্ষাৎকারের আয়োজন ও আর্টিক্যাল প্রকাশ করা।

 

সর্বোপরি এ কার্যক্রম সমূহ প্রবর্তন ও সচল রাখার জন্য স্থানীয় সম্পদ আহরণ তথা ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক দান-অনুদান, সিএসআর অনুদান, ধর্মীয় অনুদান(জাকাত-ফেতরা) ইত্যাদি সংগ্রহের মাধ্যমে একটি তহবিল গঠন করা।

 

উক্ত সেমিনার এবং মুক্ত আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, চেয়ারম্যান আইচি মেডিকেল কলেজ এ- হাসপাতাল, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইষ্ট ওয়েষ্ট মেডিকেল কলেজ এ- হাসপাতাল মিসেস উলফাত জাহান মুন, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও শিক্ষানুরাগী প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মামস্ এম এ আউয়াল মডেল স্কুল জনাব মো. আবদুল আউয়াল, বিশিষ্ট কলামিষ্ট ও নির্বাহী পরিচালক গ্রীণ গোল্ড সোসাইটি আবু বকর সিদ্দিক,১১নং সেক্টর কল্যাণ সমিতির নেতা এম এ মজিদ, ব্যবসায়ী হাসানুজ্জামান আকন্দ স্বপন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, ডাঃ মো. জালাল উদ্দিন বিভাগীয় প্রধান চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগ, ইষ্ট ওয়েষ্ট মেডিকেল কলেজ এ- হাসপাতাল এবং চেয়ারম্যান জেনেটিক ডিসঅর্ডার সাপোর্ট অর্গানাইজেশন (জিডিএসও)।

 

 

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে উপস্থাপন করেন তাসদীক জী. চৌধুরী। অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন নির্বাহী পরিচালক জেনেটিক ডিসঅর্ডার সাপোর্ট অর্গানাইজেশন (জিডিএসও) এবং সম্পাদক উত্তরানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম আলহাজ্ব মো. তারেকউজ্জামান খান।

প্রতিক্ষণ/এডি/বিএ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G