‘জ্বিনের আছরে মারা গেছে তনু’

প্রকাশঃ এপ্রিল ৭, ২০১৬ সময়ঃ ২:৩৯ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৪:১১ অপরাহ্ণ


12439186_743613029108407_318159584431958393_nতনুর ময়নাতদন্ত ও সুরতহাল রিপোর্ট নিয়ে কত কথা আলোচনা বিশ্লেষণ। তনুকে কিভাবে কোথায় হত্যা করা হয়েছে, হত্যার আগে ধর্ষণ করা হয়েছে কি-না হাজারো প্রশ্ন আকাশে বাতাসে। 
অথচ খুনী ধরার ব্যাপারে কোনো কথা নেই, অগ্রগতি নেই। উল্টো তনুর বাবা মাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে কয়েক দফা

আসামী ধরার ক্ষেত্রে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। ক্যান্টনমেন্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থানে সংঘটিত হত্যাকান্ডের ময়নাতদন্ত নিয়ে শুরু হয়েছে কানামাছি খেলা। আর দশটা
হত্যাকান্ডের ময়নাতদন্তের চেয়ে এই ময়নাতদন্ত আরো গুরুত্বের সাথে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রতিবেদন যে অপরাধীদের আড়াল করতে দায়সারাভাবে করা হয়েছে তা স্পষ্ট। প্রথম ময়নাতদন্তে যদি প্রক্রিয়াগত ভুল হয়, তাহলে তা সংশোধণ করার জন্য ১০ দিন সময় নেওয়ার কারণ কী? অথচ ১০ দিন পরে লাশের শরীরে ডিএনএ এভিডেন্স পাওয়া মুশকিল। আর তনুর গোসল করানো লাশের দ্বিতীয় ময়নাতদন্তে তেমন কিছু যে মিলবে না তা সবাই বোঝে।

আর প্রথম ময়নাতদন্তে যদি স্পার্মের অস্তিত্ব পাওয়া না যায় তাহলে দ্বিতীয়বার কবর থেকে লাশ তোলা হলো কেনো? তা কি আন্দোলন থামাতে কেবলি আইওয়াশ নয়?

ঘটনা এমন নয় যে তনু ঘুমের ঘোরে মারা গেছে। আর ময়নাতদন্তে মৃত্যুর কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না চিকিৎসক। একটি রক্তাক্ত শরীরে জখমের দাগ প্রাথমিক ময়নাতদন্তে চোখে ধরা পড়ার কথা।
জখম না থাকলে সারা শরীর রক্তাক্ত হলো কি করে? অথচ ময়নাতদন্তে দাগের উল্লেখ নাই, প্রোটিনের উল্লেখ নাই, স্পার্ম সেল পাওয়া যায় নাই, তো পাওয়াটা গেছে টা কী? ধর্ষণ ইস্যুতে আসল জিনিস বাদ দিয়া করা হয় টক্সিকলজি টেস্ট। কিন্তু কেনো?

নির্যাতিত নারীর যোনিতে ‘নন-মোটাইল’ স্পার্ম সাত দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। আর এই ‘নন-মোটাইল’ স্পার্ম দিয়াও ধর্ষক সনাক্ত সম্ভব। এমনকি পুরুষের ভ্যাসেকটমি করা থাকলে বা বাইরে ইজাকুলেশান হলে বা ইজাকুলেশান না হলেও কনডম ব্যবহার হলে বিশেষ পদ্ধতিতে (ফিশ-এর মাধ্যমে) তিন সপ্তাহ পরেও ধর্ষক সনাক্ত করা সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

কয়েক মাস আগে হঠাৎ ফোন আসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আমার সহপাঠী বন্ধু সিফাত আত্মহত্যা করেছে। বিশ্বাস করিনি। সিফাত আত্মহত্যা করার মেয়ে না। কিন্তু ফরেনসিক রিপোর্ট বেরুলো আত্মহত্যা।
এরপর পুলিশের তদন্তে উঠে আসে সিফাতকে খুন করা হয়েছে। সাজানো প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য চিকিৎসককেও অভিযুক্ত করে পুলিশ। আশা করি তনুর কথিত ময়নাতদন্তও একদিন ভুল প্রমাণিত হবে।

তনু হত্যার বিচারে নাকি নতুন আইন করতে হবে। এ নিয়ে রাষ্ট্রের শীর্ষ কর্তাদের মধ্যে শুরু হয়েছে বিতর্ক। আর তা থেকেই বিচারের সদিচ্ছা বুঝা যায়। আচ্ছা, তনু এভাবে মরলো কেন? মেয়েটা বড় অসুবিধায় ফেললো কর্তাদের।

জ্বিনে ধরার একটা গল্প দিয়ে শেষ করি। এক বিধবা নারীকে জ্বিনে ধরেছে। জ্বিন ছাড়াতে তাকে নেয়া হয় সাধু বাবার আস্তানায়। রাতের আঁধারে জ্বিন ছাড়াতে গিয়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে ঐ নারী। পরে তার লাশ পাওয়া যায় আস্তানায়। সাধু বাবা তো ধর্ষণ-খুন করতে পারে না। তাই প্রচার করা হয়, সব দুষ্ট জ্বিনের কাজ। ভয়ংকর জ্বিন। হায়রে জ্বিন…

দেশের গোয়েন্দা বাহিনী খুব দক্ষ। তারা এক ঘন্টায় অপরাধী ধরে ফেলে। কিন্তু তনু হত্যায় কিছু করতে পারছে না। ময়নাতদন্তে কিছু মিলছে না। আমার মনে হয় তনুকে কোনো মানুষ খুন করেনি। তাকে মনে হয় জ্বিনই মেরেছে। দুষ্ট জ্বিন(!)। লাশ যেখানে পাওয়া গেছে, দেখেছেন সেখানে কেমন জংগল। জ্বিনের এলাকায় মানুষ ঢোকার কথা না।

তনু হত্যার বিচার হবে কি না তা নিয়ে মন্তব্য করবো না। তবে বিচার আশা করি না। আমরা তনু হত্যার বিচার চাই না। যা পাবো না তা আশা করে কি লাভ।

আসুন, আর আন্দোলন না করে আমরা সবাই বলি, তনু ধর্ষিত হয়নি। তনুকে কেউ মেরে ফেলেনি। জ্বিন-ভুত তনুকে মেরে ফেলে গেছে জংগলে।

হাসান মেসবাহ

সাংবাদিক

ইনডিপেনডেন্ট টিভি

  • এই লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজের। এখানে প্রতিক্ষণ ডট কমের কোন নিজস্ব বক্তব্য নেই।

========

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G