ঝরে যাওয়া শিমুল

প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৫ সময়ঃ ৪:২৪ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৪:২৬ অপরাহ্ণ

ফজলুর রহমান

shimulকেউ কাঁদছেন। কারো মাঝে কান্না লুকানোর চেষ্টা। চোখ অবাধ্য। জল সামলাবার এতো টিস্যু পাবো কোথায় ? বেদনার ছবি রুমালে কি লুকানো যায় ?

না। লুকানো গেল না। কান্নার ছোপ্ ছোপ্ ছাপ সবখানে। জল ছল্ছল্ চোখ সকলের। কখনো ফুঁপিয়ে। বুকের রক্তক্ষরণেও। মিলনায়তন ভরা নি:শব্দে একটাই শব্দ-‘শিমুল’।

শিমুল বিশ্বাস। ফোটার দিনে যে ফুল ঝরে গেলেন। অকালেই ঝরে যাওয়া ফুল নিয়ে হাহাকার। ঝরা ফুলের বেদনায় হতবাক চুয়েট পরিবার।

কবির কথার মতো গড়ে গেছেন নিজেকে-‘এমন জীবন করো হে গঠন, মরণে হাসিবে তুমি, কাঁদিবে ভূবন’। ঠিক এমনিভাবেই ভূবন কাঁদিয়ে গেলেন শিমুল বিশ্বাস। ১৬ ফেব্র“য়ারি রাতের প্রথমার্ধে।

ছাত্র-ছাত্রীদের বর্ণণায়,‘ এতো ভালো স্যার তিনি! কত্ত ভালো মানুষ !! বন্ধুর মতো অভিভাবক !!!’, কর্মচারীরা শ্রদ্ধায় বললেন, ‘ভাই ডেকে তিনি কত সহজে আপন করে নিতেন, কোথায় পাবো এমন একজন!’ কর্মকর্তাদের মুখে ভালোবাসার সুর, ‘ভালো মানুষ বেশিদিন বাঁচে না, এজন্যই কি আপনার চলে যাওয়া? না গেলেও তো পারতেন’।

সহকর্মী শিক্ষকগণ আফসোসে বললেন, ‘এত সরল দিলের সহকর্মী আর পাবো কি? সাধা-সিধের মাঝে কত বড় একজন ছিলে প্রিয় শিমুল!’ অভিভাবকতুল্য ব্যক্তিত্ব তো অভিমানে প্রশ্নই করে ফেললেন-‘ সৃষ্টিকর্তা আপনি তাকে তুলে না নিলেও পারতেন?’

চুয়েটের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ছাত্র। পুরকৌশল বিভাগের নাম্বার ওয়ান। প্রধানমন্ত্রী গোল্ড মেডেলের জন্য তিনি মনোনীত ছিলেন। মাকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল তার। পুরস্কার গ্রহনের ওই অনুষ্ঠানে যাবেন, মা-ছেলে পুরস্কার নিবেন। মা পাবেন অসীম কষ্টে মানুষ গড়ার প্রতিদান। ছেলের হাতে মিলবে নিরন্তর সংগ্রামের প্রাপ্তি। এজন্য মা-ছেলের যাওয়ার প্রস্তুতি হয়েছিল শুরু।

রবি ঠাকুর থেকে পাওয়া সেই কবিতাখানির মতো-‘ মনে কর, যেন বিদেশ ঘুরে/ মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দুরে। ……/ রোজ কত কী ঘটে যাহা তাহা—/ এমন কেন সত্যি হয় না আহা?/ ঠিক যেন এক গল্প হত তবে,/ শুনত যারা অবাক হত সবে—/’। শুনলেন সবাই। অবাক হয়ে জানলেন। শিমুলের আর হলো না যাওয়া। যদি আমাদের যাওয়া হয় গোপালগঞ্জের দিকে। ওইখানের বোলতলী গ্রামের অবস্থা কি? কি করেন মমতাময়ী দিপালী মজুমদার।

এইচএসসিতে পিতাকে হারানোর পর এই নারীই তো স্বপ্নসৌধ গড়েছিলেন একমাত্র ছেলেকে কেন্দ্র করে। অভিভাবকের ভার বহন করা মামা বাবুল কৃঞ্চ মজুমদার প্রিয় ভাগিনার এই মুখ দেখার জন্যই কি প্রস্তুত ছিলেন ! একমাত্র বোনের কান্নাসঙ্গীও যে নেই এখন কেউ।
বয়স কেবল ২৭।

চুয়েটের ডিজাস্টার এন্ড এনভায়রণমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক হয়ে কেবল ফুটতে শুরু করেছিলেন শিমুল। পুরো পুষ্পিত হওয়ার আগেই বিদায়। তার হয়ে খুলে থাকা শোকবই ধারণ করছে অনেক দু:খ গাঁথা। এই সবুজে সুন্দর চুয়েট ক্যাম্পাসের শিশির কণাগুলো যেন শিমুল স্মৃতিই জানান দিচ্ছে।

ফাগুন এসেছে। শিমুল ফোটার দিন। সেই ফুল ঝরে গেছে। একরাশ তাজা স্মৃতি রেখে। সকলের হৃদয় মন্দিরের প্রিয় বাসিন্দা হয়ে। প্রিয় কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ যেভাবে বলেছিলেন ‘এ কেমন ভ্রান্তি আমার’, সেভাবে বলতে ইচ্ছে করছে-

‘‘চলে গেলে মনে হয় তুমি এসেছিলে/
চলে গেলে মনে হয় তুমি সমস্ত ভূবনে আছো।’’….

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G