ঝালকাঠিতে কলার আবাদ বেড়েছে

প্রকাশঃ এপ্রিল ২৬, ২০১৭ সময়ঃ ৩:১২ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৩:১৭ অপরাহ্ণ

মোঃ আমিনুল ইসলাম, ঝালকাঠি প্রতিনিধি:

কলা ছোট-বড় সবারই প্রিয় একটি পুষ্টিকর খাদ্য। আমাদের দেশে সারাবছরই কলা পাওয়া যায়। খাবার জন্য কাঁচা কলা এবং পাকা কলা খুবই উপকারি। কলার চারা একবার রোপণ করলে ২/৩ মৌসুম চলে যায়। তাছাড়া পুষ্টিকর ফল হিসাবে আমাদের দেশে কলার চাহিদাও অনেক বেশি।

অন্যান্য ফসলের চেয়ে বেশি লাভজনক হওয়ায় ঝালকাঠিতে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কলার চাষ। কলা চাষ ঝালকাঠির বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে হয়ে থাকে। আবার ঝালকাঠির প্রত্যন্ত এলাকাসহ শহরতলীর আবাসিক বাড়ির পাশ্ববর্তি স্থানেও বিনা পরিচর্যায় রয়েছে কলা ক্ষেত। এসব স্থানে উৎপাদিত কলা নৌপথ ও সড়ক পথ হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে এবং পার্শ্ববর্তি দেশ ভারতেও।

কলা চাষ করে বেকারত্ব ঘুঁচিয়েছে অনেকেই। খরচ কম ও লাভ বেশী এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকাররা এসে কলা ক্রয় করে নিয়ে যায় বিধায় চাষীদের তেমন কোন ঝামেলা পোহাতে হয় না। ফলে দিন দিন ঝালকাঠিতে কলার চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঝালকাঠি জেলায় এবছর ১ হাজার ৩শ ৩০ হেক্টর জমিতে কলা চাষ হয়েছে। এর মধ্যে কাঁচা কলা ৫শ ৩০ হেক্টর, সবরি কলা ৪শ ৫৫ হেক্টর, সাগর কলা ১শ ৫৫ হেক্টর এবং বিভিন্ন জাতের ২শ ৩০ হেক্টর জমিতে কলা আবাদ করা হয়েছিলো। ঝালকাঠি জেলার ৪ উপজেলার সবচেয়ে বেশি কলা আবাদ হয়েছে কাঁঠালিয়া উপজেলায়। এখানে এ বছর ৫শ হেক্টর জমিতে কলার আবাদ করা হয়েছে। এছাড়াও সদর উপজেলায় ৪শ হেক্টর, নলছিটি উপজেলায় ২শ ৩০ হেক্টর, রাজাপুর উপজেলায় ২শ হেক্টর জমিতে কলার আবাদ করা হয়েছে।

কাঁঠালিয়া উপজেলার বানাই গ্রমের কলা ব্যবসায়ী মোঃ সাইফুল ইসলাম তালুকদার জানান, ঝালকাঠির জেলার প্রত্যন্ত এলাকা ঘুরে বিভিন্ন ধরণের কলা ক্রয় করি। কলার আঁকার ভেদে দাম নির্ধারণ করা হয়। বিচি কলা ১ পোন (৮০টি) ৭০-৮০ টাকা দরে ক্রয় করে ৯০-১শ টাকা, কাঠালি কলা আকার ভেদে ১ পোন ১শ টাকা থেকে শুরু করে ২শ টাকা পর্যন্ত দর দিয়ে ক্রয় করে ক্রয়ের উপরে ৪০-৫০ টাকা ব্যবসা রেখে আড়ৎদারের কাছে বিক্রি করি।

আড়ৎদার মোঃ সোলায়মান হাওলাদার বলেন, প্রায় ২০ বছর যাবত কলার আড়ৎদারী ব্যবসা করি। গ্রামাঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা কলা কিনে এনে আমার কাছে বিক্রি করে। সামান্য ব্যবসা রেখে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নৌ ও সড়ক পথে আসা পাইকারদের কাছে বিক্রি করি। কলার রক্ষণাবেক্ষণ বিষয়ে তিনি বলেন, গ্রামাঞ্চল থেকে কলা ব্যবসায়ীরা এসে আমার কাছে বিক্রি করে। আমি তাদের কাছ থেকে কলা ক্রয় করে নীচে কাঠের পাটাতন দিয়ে তার উপরে কলা স্তুপাকারে রাখি। উপর থেকে আবার কলাপাতা দিয়ে ঢেকে রাখি। পৌষ ও মাঘ মাস বাদে সারা বছরই এ ব্যবসা চলে।

কলার পাইকার মোঃ কলিম উদ্দিন জানান, আমরা আড়ৎদারের কাছ থেকে কলা কিনে নৌ ও সড়ক পথে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করি। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, যশোর, খুলনা ও সাতক্ষিরা এলাকায় বিক্রি ভালো হয়। বিশেষ করে সাতক্ষিরা মোকামে বিক্রির পরে ঐ স্থানের ব্যবসায়ীরা পার্শ্ববর্তি দেশ ভারতেও বৈধ উপায়ে বিক্রি করে।

ঝালকাঠির সদর হাসাপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডাঃ গোলাম ফরহাদ জানান, কলায় কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। এটি রোগ প্রতিরোধক এবং প্রতিষেধক ঔষধ হিসেবে খাওয়া সবার জন্যই উপকারী। এর পুষ্টিগুণও অত্যন্ত ভালো। কোন ধরণের কেমিকেল ছাড়া যদি প্রাকৃতিকভাবে পাকানো হয়ে থাকে।

ঝালকাঠির গাইনী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মৃণাল কান্তি বন্দোপাধ্যায় জানান, কলা সকলের জন্যই ফল হিসেবে উপকারী একটি খাদ্য। প্রাকৃতিকভাবে পাকানো কলা শিশু ও গর্ভবতি মহিলাদের জন্য উপকারী। অপরদিকে শুস্ক মৌসূমে শ্বাস-প্রশ্বাস, ধুলো-বালি দেহের ভিতরে প্রবেশ করে ক্ষতিকর দিকও কলা প্রতিরোধ করে।

প্রতিক্ষণ/এডি/সাই

 

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G