ঝিমিয়ে পড়া ডাকঘরগুলোকে সচল করার উদ্যোগ
ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডট কম.
ঝুমঝুম ঘণ্টা বাজছে রাতে, রানার চলেছে, খবরের বোঝা হাতে। রানার চলেছে রানার! কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কালজয়ী এই কবিতা পড়ে নি এমন লোক খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। বর্তমান সময়ের মোবাইল, ই- মেইল, ফেসবুক-টুইটারে দ্রুততম যোগাযোগের অবারিত সুযোগ থাকার কারণে দেশে ডাক বিভাগের কার্যক্রম বিলুপ্ত প্রায়। চিঠি, টেলিগ্রাম এক সময় মানুষে-মানুষে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম থাকলেও আজ এগুলোর প্রয়োজন ফুরিয়েছে। তাই আজ একটি চিঠি বা টেলিগ্রামের জন্য মানুষ দূরদূরান্ত থেকে ডাকঘরে এসে ধরণা দেয় না। আর এ কারণেই দেশের ডাকঘরগুলোর কার্যক্রমগুলো ক্রমশ সংকুচিত হতে হতে আজ সেগুলোর প্রায় অকেজো হয়ে পড়েছে। তাই দেশের ঐতিহ্যবাহী এই ডাক বিভাগকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য এর আধুনিকায়ন আজ সময়ে দাবি। দেশের ঐতিহ্যবাহী যোগাযোগের এই মাধ্যমকে নতুন করে সাজিয়ে তোলার লক্ষ্যে দেশের সাড়ে আট হাজার ডাকঘরের কার্যক্রমকে নতুনভাবে সাজাতে উদ্যোগী হয়েছে সরকার।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সূত্র জানায়, তথ্য ও প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে ডাক ব্যবস্থায় বাণিজ্যিক ব্যাংকিংসহ নানা ধরনের আধুনিক সেবা যুক্ত করার চিন্তা ভাবনা চলছে। গ্রামীণ ডাক ঘরগুলোতে ই-সেন্টার স্থাপনের মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া জনসাধারণকে এই সুবিধা দেওয়া হবে। বর্তমানে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, দরিদ্র নারীদের মাতৃত্বকালীন ভাতা, বিধবা ভাতা, পরিত্যক্ত মহিলা ভাতাসহ আরও কিছু ভাতা এখন পাওয়া যায় ডাকঘরগুলোর মাধ্যমে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মতো অটোমেডেট টেলার মেশিন (এটিএম) কার্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ প্রবর্তিত পোস্টাল ক্যাশ কার্ডের মাধ্যমে টাকা তোলা যাবে।
চলমান ‘পোস্ট ই-সেন্টার ফর রুরাল কমিউনিটি’ প্রকল্পের আওতায় এ সুবিধা পেতে যাচ্ছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠি। বাংলাদেশ ডাক অধিদফতর সূত্র জানায়, ডাকঘরের মাধ্যমে বাংলাদেশের গ্রামীণ জনসাধারণকে পোস্ট ই-সেন্টারের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে ই-কমার্স, এম-কমার্স, ইউটিলিটি বিল, মোবাইল মানি অর্ডার, পোস্টাল ক্যাশ কার্ড, মোবাইল ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিং এবং বিমা প্রিমিয়ামের সুবিধা দেওয়া হবে। এছাড়া গ্রামের সাধারণ জনগোষ্ঠিকে ভাতার টাকার জন্য ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের কাছে আর ধর্না দিতে হবে না। তারা এখন ডাকের মাধ্যমে টাকা ওঠাতে পারবেন। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. ফিরোজ সালাহউদ্দিন বলেন, ইন্টারনেটে যত আধুনিক সেবা পাওয়া সম্ভব তার সবই ডাক বিভাগে পাওয়া যাবে। খুব সহজে ই-মানি ট্রান্সফারও করা যাবে। গ্রামের পিছিয়ে পড়া মানুষ ইন্টারনেট-ভিত্তিক সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। বাণিজ্যিক ব্যাংকসহ নানা প্রকারের ব্যাংকিং সুবিধা মিলবে ডাকঘরে।’
তিনি আরও বলেন, প্রকল্পের আওতায় নানা ধরনের ইক্যুইপমেন্ট কেনা হবে। এর সব টাকা সরকারি তহবিল থেকে মেটানো হবে।’ ডাকঘরগুলোকে হালফিল প্রযুক্তিতে সজ্জিত করে এগুলোর সেবাদান কার্যক্রমকে ঢেলে সাজাতে ব্যয় করা হবে ৫৪০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এটা করা হবে ‘পোস্ট-ই-সেন্টার ফর রুরাল কমিউনিটি’ প্রকল্পের আওতায়। ডাক অধিদফতর জানায়, ২০১৭ সালের জুন নাগাদ ডাকঘরগুলোর মাধ্যমে যাবতীয় আধুনিক সুবিধা পাবেন পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠি। প্রধানমন্ত্রী দেশের সব ডাকঘরের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সব ভাতা ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে দ্রুত প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ডাকঘরগুলোতে ই-সেন্টার স্থাপনের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় এসব ভাতা দিতে সংশোধিত প্রকল্প উন্নয়ন প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রস্তুত করেছে ডাক অধিদপ্তর। ডিপিপি’তে পয়েন্ট অব সেল (পিওএস) মেশিনসহ অন্যান্য যন্ত্র ক্রয়ের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অপরদিকে ল্যাপটপ ছাড়ও প্রতিটি ডাকঘরে দু’টি করে প্রিন্টার, একটি করে স্ক্যানার, একটি মডেম, একটি ওয়েব ক্যামেরা, একটি ফটোপ্রিন্টার ও একটি স্মার্টফোন দেওয়া হবে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সূত্র জানায়, গ্রামীণ এলাকায় ডাক বিভাগের ৮ হাজারটি এক্সট্রা ডিপার্টমেন্টাল কেন্দ্র, ৪৮৮টি উপজেলা ও ১২টি সাব ডাকঘরকে ই-সেন্টারে রূপান্তর করা হবে।
এর মধ্য দিয়ে দেশব্যাপী প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত ডাক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আইসিটি ভিত্তিক সেবাসমূহ জনসাধারণকে পৌঁছে দেওয়া হবে।’ প্রকল্পটি জানুয়ারি ২০১২ থেকে ডিসেম্বর ২০১৫ মেয়াদে প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ ধরা হয়েছিল।কিন্তু ব্যাংকিংসহ নানা আধুনিক সেবা যুক্ত করায় প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানো হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনে সময় বৃদ্ধির প্রস্তাবে প্রকল্প পরিচালক এস এস ভদ্র স্বাক্ষরিত চিঠিতে দেখা গেছে, দেশব্যাপী প্রত্যন্ত অঞ্চলের ডাকঘরগুলোর মাধ্যমে জনসাধারণের কাছে আইসিটিভিত্তিক সেবাসমূহ পৌঁছে দেওয়া হবে। সেই লক্ষ্যে প্রকল্পের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানো হয়েছে। পিওএস মেশিন ব্যবহারের জন্য ডাকঘরে রাখা হবে ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ কার্ড, চিপ-বেইজপ কার্ড। পাওয়া যাবে বাণিজ্যিকসহ সব ধরনের আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা।
প্রতিক্ষণ/এডি/ পাভেল