ডিজিটাল প্রশ্নপত্র ফাঁসেও দায়মুক্তি
এম. জাকির হোসেন খান
‘প্রয়োজনে পরীক্ষার দিন মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেব, প্রয়োজনে ফেসবুকও বন্ধ করে দেব। প্রশ্ন ফাঁস করে কেউ পার পাবে না। কেউ এখানে হাত দেবেন না, দিলে হাত পুড়ে যাবে, হাত ভেঙ্গে দেব’, ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো আত্মঘাতী কর্মকাণ্ডের প্রেক্ষিতে এ সস্তা আবেগময় রাজনৈতিক বক্তব্যটি দিয়েছিলেন ক্ষমতাসীন শিক্ষামন্ত্রী। প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে এ হুমকি দিলেও একের পর এক প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে। উল্লেখ্য, টিআইবি’র গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, গত চার বছরে (২০১২-২০১৫) বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় মোট ৬৩টি প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাই এ হুমকি-ধামকি যে এক ধরনের প্রতারণা তা সম্প্রতি টিআইবি’র প্রশ্নপত্র ফাঁস সংক্রান্ত প্রতিবেদনে স্পষ্ট হয়েছে। টিআইবি’র প্রতিবেদন মতে, ‘গবেষণায় প্রশ্ন ফাঁস ও ফাঁসকৃত প্রশ্ন ছড়ানোর এবং বাজারজাতকরণে সম্ভাব্য অংশীজনের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। প্রশ্ন ফাঁসের সাথে জড়িত এক ধরনের সিন্ডিকেটের উদ্ভব ঘটেছে – যারা অর্থের বিনিময়ে প্রশ্ন ফাঁস করছে। মূলত ক্ষমতাসীন দলীয় ছাত্র সংগঠনের একাংশের নেতাকর্মী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কোচিং সেন্টার মিলে একটি সিন্ডিকেট প্রশ্ন ফাঁসের সাথে সক্রিয় এমন তথ্য পাওয়া যায়। এ প্রেক্ষিতে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন, মন্ত্রী কী ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের হাত ভেঙ্গে দিবেন? অন্ততপক্ষে এখন পর্যন্ত তার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০১১-২০১৫) এবং জাতীয় টেকসই উন্নয়ন কৌশলপত্র (২০১০-২০২১) অনুযাযী, দক্ষ ও নৈতিকভাবে শক্তিশালী মানসম্মত উন্নয়নের জন্য সকল পর্যায়ে মানসম্মত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা এবং সাধারণ শিক্ষার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে নৈতিক শিক্ষার প্রসার ঘটানো (জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলপত্র) করার কথা বলা হলেও বাস্তবে ক্ষমতাসীনদের অবস্থান উল্টো। টিআইবি’র গবেষণায় বলা হয়, ‘প্রধানত ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত গোষ্ঠীর একাংশের ফাঁসকৃত প্রশ্ন ছড়ানোর মাধ্যম হিসেবে কাজ করার তথ্য পাওয়া যায়। এসব ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের একটি অংশ ব্যাপকভাবে সরকারি নিয়োগ ও ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের সাথে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ থাকলেও কিছু অংশের পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের সাথেও সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে’। অপ্রতিরোধ্য প্রশ্ন ফাঁস প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্তৃত্বাধীন প্রশ্ন প্রণয়ন, ছাপানো ও বিতরণে এবং তদারকির সাথে সম্পৃক্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশ। অথচ টিআইবি’র প্রতিবেদন প্রকাশের পরই শিক্ষা মন্ত্রী এ প্রতিবেদনকে অসত্য এবং ভিত্তিহীন বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। টিআইবি’র তথ্য মতে, এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশের আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে প্রতিবেদনটি আলোচনা করতে চাইলেও তারা সে সুযোগ দেননি।
টিআইবি প্রতিবেদন অনুয়ায়ী, প্রশ্ন প্রণয়নের দীর্ঘ প্রক্রিয়া, ম্যানুয়াল পদ্ধতির সাথে অনেকের সম্পৃক্ততা থাকায় প্রশ্ন ফাঁসের ঝুঁকি বাড়ার কথা বলা হলেও মূল কারণ অপ্রতিরোধ্য দুর্নীতি। উল্লেখ্য, একই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘প্রশ্ন হাতে পাওয়ার পূর্বে, প্রশ্ন হাতে পাওয়ার পর এবং পরীক্ষায় প্রশ্ন মিলে যাওয়ার পর এককভাবে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা এবং দলগতভাবে ১০হাজার থেকে-২০ হাজার টাকা লেনদেনের হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়’। তাই প্রশ্ন ফাঁসকারীদের হাত ভেঙ্গে দেওয়ার বক্তব্যের মাধ্যমে সত্যকে ধামাপাচা দেওয়া যাবেনা বা প্রশ্ন ফাসের দায় ফেসবুকের কাধে চাপানোর সুযোগ নেই। যারা দিনের পর দিন প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জাতির ভবিষ্যতকে ফিঁকে করে দিলো তারা ধরা-ছোয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। অথচ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারের কারো ব্যাপারে কেউ মন্তব্য করলে সাথে সাথে তাকে গ্রেফতার করা হয়। কেউ কেউ মন্তব্য করেন, নকলপ্রবণ পরীক্ষা পদ্ধতি জাতির কাধে চাপানো হলো। একজন অভিভাবকের ভাষ্যে, ‘নিজে রাত জেগে মেয়েকে পড়িয়েছি। অথচ প্রতিটি পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্ন ফাঁস হয়ে যাওয়ায় মেয়ে এখন লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছে। পরীক্ষার পড়া রিভিশন দেয়ার চেয়ে বান্ধবীদের কাছ থেকে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন সংগ্রহতেই বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে’।
এ প্রেক্ষিতে সবার জিজ্ঞাসা সরকার আদৌ প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ করতে চায় কিনা? নাকি তারা মনে করছে, প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে জিপিএ-৫ এর সংখ্যা বাড়ানোর সুযোগ পেয়ে লাখ লাখ পরীক্ষার্থী, তাদের বন্ধু-বান্ধব ও পরিবারবর্গ সরকার সমর্থক হয়ে যাবে। শিক্ষকরা বিভিন্ন সময় জানিয়েছেন, কিভাবে বোর্ড থেকে এসএসসি, এইচএসসিসহ বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় অধিক নম্বর দিয়ে অধিক হারে জিপিএ প্রাপ্তির সংখ্যা দেখানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস বা শিক্ষকদের অধিক নম্বর প্রদানের বিষয়ে সরকারের মনোভাব হলো, গুণগত মান নয় সংখ্যা বাড়ানো। প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা মিডিয়াতে প্রকাশ পেলেই মন্ত্রী তাকে ‘গুজব’ বা দেশের স্বার্থ-বিরোধী এবং ক্ষেত্রবিশেষে প্রগতিশীল রাজনীতির বিরোধী কর্মকাণ্ড বলে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছেন। এভাবে দুর্নীতিবাজদের রেহাই দেওয়ার ফলে প্রশ্নপত্র ফাঁস একটি স্বাভাবিক ঘটনায় দাড়িয়েছে, যা এখন শৈল্পিক রুপে ‘ডিজিটাল পদ্ধতিতে’ ফেসবুকের মাধ্যমে হাতের নাগালে। আর সাময়িক লোভের বশবর্তী হয়ে ভবিষ্যৎ পরিণতির কথা না ভেবে শিক্ষার্থীদের অভিভাবক এবং শুভানুধ্যায়ীরা রাতের পর রাত প্রশ্নের পেছনে দৌড়াচ্ছেন। এর মাধ্যমে জিপিএ-৫ লাখ লাখ শিক্ষার্থীর হাতের নাগালের মধ্যে এলেও উচ্চ শিক্ষার সুযোগ ক্রমেই তাদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। ফলে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আসনের বিপরীতে পাবলিক পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ফল অর্জনকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা মাত্র ৫০-৬০ জন থাকলেও এসব ভর্তি পরীক্ষায় মাত্র ৪% থেকে ২০% শিক্ষার্থী নির্ধারিত পাশ নম্বর উঠাতে পারে।
অথচ বাংলাদেশের শিক্ষানীতি ও মুখবন্ধে নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছিলেন, ‘পরীক্ষা পদ্ধতি বা শিক্ষার্থীর শিক্ষার মান যাচাই বা শিক্ষার মূল্যায়ন পদ্ধতির মৌলিক পরিবর্তন করতে হবে। এ জন্য ক্লাশরুমের শিক্ষাকে সম্পূর্ণ সফল করতে হবে। শিক্ষার্থীদের তথাকথিত নোট বই, প্রাইভেট টিউশনী প্রভৃতি অনাকাঙ্খিত আপদ থেকে মুক্তি দিতে হবে। পরীক্ষা হবে শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও স্বাভাবিক পরিবেশে, পরীক্ষাকে শিক্ষার্থীরা ভীতিকর মনে করবে না, বরং আনন্দময় উৎসব হিসেবে গ্রহণ করবে। পরীক্ষাকে পরীক্ষার্থীরা তার শিক্ষা জীবনের সার্থকতার মূল্যায়ন ও স্বীকৃতি হিসাবে আনন্দের সাথে গ্রহণ করবে’। কথা এবং কাজের এ ধরনের অমিল এবারই নতুন নয়। প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে ফেসবুক ও মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করার চিন্তার মাধ্যমে উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চালানোর চেষ্টাই বা কেন করা হচ্ছে? ২০১৪ সালে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের মিল-অমিলের ফাঁদে পড়ে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেয়া ৩১ লাখ ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনের শুরুতেই অকল্পনীয় হোঁচট খায়, বিশেষ করে মেধাবী শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। ক্ষুব্ধ অভিভাবকদের ভাষ্য মতে, ‘সাজেশনের নামে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দিয়ে ছোট ছোট শিশুদের জীবনের একেবারে শুরুতেই অন্যায় করতে শেখানো হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে জাতির মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে’। লাখ লাখ শিক্ষার্থীর উচ্চ শিক্ষার ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে ফেলেও মন্ত্রী এখন বহাল তবিয়তে, দায়িত্ব নিয়ে পদত্যাগ করতে হয়না। শিক্ষার্থীদের মূল্যবান ভবিষ্যতের অপরিমেয় ক্ষতির দায় শিক্ষা মন্ত্রী এবং বুদ্ধিবৃত্তিক দাসদেরও নিতে হয়না।
প্রশ্নপত্রের ফাঁসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সর্বনাশ হলেও অভিযুক্ত ব্যক্তিরা আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। ২০১৪ সালে পিইসিই ও ২০১৫ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের সাথে জড়িতদের মধ্যে মাত্র চার জনকে গ্রেফতার করলেও প্রশ্নপত্র ফাস কি বন্ধ আছে? ১৯৯২ সালে ‘পাবলিক পরীক্ষা অপরাধ আইন ১৯৮০’ সংশোধনের মাধ্যমে মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁসের সাথে অভিযুক্তদের ১০ বছরের শাস্তির বিধান কমিয়ে ৪ বছর করা হয়, তবে টিআইবির প্রতিবেদন মতে ওই আইনের অধীনে এ পর্যন্ত কোনো অপরাধীকে শাস্তি প্রদানের নজির নেই। শুধু তাই নয়, ২০১২ সালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালার ম্যাধমে কোচিং বাণিজ্য তো বন্ধই হয়ইনি, উল্টো কোচিংগুলো সরাসরি এ প্রশ্নপত্র ফাসের সাথে জড়িত হচ্ছে। ২০১০ এর জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে শিক্ষা ব্যবস্থায় ডিজিটাল পদ্ধতি বা সৃজনশীল পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আরো বিজ্ঞানমনস্ক এবং জ্ঞানী হওয়ার কথা থাকলেও তা প্রশ্নপত্র ফাঁসে তা ব্যবহার হচ্ছে। শুধু তাই নয়, শিক্ষানীতি ২০১০-এ শিক্ষাকে পুরোপুরি রাষ্ট্রের দায়িত্বের আওতায় নিয়ে আসার কোন দিক-নির্দেশনা কি দেওয়া হয়েছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা যেমন, মাঠ, বিল্ডিংগুলো দখল মুক্ত রাখতে শিক্ষানীতিতে কোন দিক নির্দেশনা রয়েছে কি? উচ্চ শ্রেনী ও ধনীর শিক্ষার জন্য উচ্চ মান এবং সাধারণ নাগরিকদের জন্য নিম্নমানের শিক্ষার বিদ্যমান বৈষম্য কমানোর কোন প্রস্তাব শিক্ষানীতিতে কি আছে? প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত শিক্ষাকে বাণিজ্যিকীকরণের বর্তমান যে মহোৎসব চলছে তা রোধে এ শিক্ষানীতি কতখানি কার্যকর? ২০১৪ সালে টিআইবি’র গবেষণা প্রতিবেদনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে টাকার বিনিময়ে সার্টিফিকেট সংগ্রহ, ইউজিসির অনুমোদন ছাড়া বিভাগ খোলা ও শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগসহ বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের তথ্য প্রকাশ করলে তা খতিয়ে না দেখে উল্টো সংসদে দাড়িয়ে শিক্ষামন্ত্রী কর্তৃক টিআইবিকে প্রতিবেদন প্রকাশের ক্ষমা চাওয়ার লোক দেখানো কৌশল গ্রহন করেন। উচ্চ শিক্ষা কমিশনের মাধ্যমে মান নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা এখনো আলোর মুখ দেখেনি। দেশীয় কারিকুলামে প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো ঘটনার বিস্তারের ফলে অভিভাবকরা এখন ব্যয়-সাপেক্ষ ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষার দিকে ক্রমেই ঝুকবে।
বিরোধী ছাত্র সংগঠন দমনের মাধ্যমে, লুটপাটের ভাগ-ভাটোয়ারা নিয়ে আধিপত্য বিস্তারের নামে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসের কারণে যখন একের পর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সন্ত্রাসের লীলাভূমিতে পরিণত হচ্ছে এবং হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীর শিক্ষা জীবন হুমকির মুখে তখন মন্ত্রী নির্বিকার। উল্টো একদিকে ক্ষমতাসীনরা চেতনা সমুন্নত রাখার নামে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কার্যক্রমকে উৎসহিত করছেন, আর অন্যদিকে হোষ্টেল পুড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য দেখে চোখের পানি ফেলে জাতিকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, পুরস্কারের আশায় বাংলাদেশের ক্রমবিকাশমান পুস্তক শিল্প বা জ্ঞান ব্যবস্থাপনাকে সমূলে উৎপাটনের লক্ষে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মেও কোমলমতি শিশুদের মন-মগজে একটি ভিন্ন সংস্কৃতি ও চেতনা গড়ে ওঠার জন্য বিদেশিদের হাতে পুস্তক প্রকাশনার কাজ তুলে দিয়েছেন। একটি জাতিকে ধ্বংস করতে হলে তার শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করাই যথেষ্ট। জ্ঞান-ভিত্তিক অর্থনীতির সূচকে বাংলাদেশ ১০ পয়েন্টের মধ্যে মাত্র ১.৪৯ পয়েন্ট পেয়ে বিশ্বের ২৮টি উদীয়মান অর্থনীতির দেশের মধ্যে ২৭তম এমনকি মিয়ানমারেরও পেছনে অবস্থান করছে, যা সত্যিই আশংকাজনক।
‘অসৎদের মাধ্যমে নয় বরং অসততা দেখেও যারা অসৎদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনা তাদের মাধ্যমেই পৃথিবী ধ্বংস হবে’ – আলবার্ট আইনস্টাইনের এ কথাটি আমাদের জন্য শুধু বাস্তব সত্য নয়, জাতি হিসাবে আমরা প্রতিনিয়ত টের পাচ্ছি। একদিকে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে, অন্যদিকে প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজেদের সংগঠন দিয়ে জিম্মি করে অবৈধ অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহারের সুযোগ করে দিচ্ছে শাসক শ্রেণী।
(আমাদের বুধবার)