করোনা পরিস্থিতি নিয়ে নাকাল দেশবাসী। এর উপর এখন মরার উপর খরার ঘা এর মতো জেঁকে বসতে চলেছে এ্যাডিস মশার উপদ্রপ। ঘরে ঘরে ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে ডেঙ্গু রোগী। এখন বর্ষাকাল। তাই ঘরের চারপাশ পানিতে স্যাঁতসেতে হয়ে থাকে। এজন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে। এ্যাডিস মশার বিস্তার রোধ করাই ডেঙ্গু রোগের হাত থেকে বাঁচার প্রথম এবং অন্যতম উপায়।
সময়: বর্ষাকাল এলেই বাড়ে ডেঙ্গুর উপদ্রব। তাই বছরের অন্য সময়ে চেয়ে এ সময়ে একটু বেশি সতর্ক থাকতে হবে।
কীভাবে এডিস মশার বিস্তার হয়: এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গুজ্বর হয়ে থাকে। বৃষ্টিপাত, জলাবদ্ধতা ও বাতাসে অত্যধিক আর্দ্রতা এ মশার বংশ বিস্তারে সহায়ক। পরিত্যক্ত প্লাস্টিক দ্রব্যাদি, গাড়ির চাকার টায়ার, বাড়ির পানি সংগ্রহের ট্যাংক, ফুলের টব ও ফুলদানিতে জমে থাকা পানিতে এ মশা বংশ বিস্তার করে। এদের ডিম ফোটার জন্য পানির প্রয়োজন হয় বলে শুকনো মৌসুমে এ মশা কমে যায়। তাই বাড়ি ও তার চারপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণসমূহ:
১। প্রচণ্ড জ্বর
২। তীব্র মাথা ব্যথা
৩। বমি
৪। শরীরে লাল র্যাশ ওঠা
৫। মাংসপেশীতে ব্যথা
৬। চোখের পেছনে ব্যথা
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয়:
১। মশার প্রজনন স্থল ধ্বংস করা
২। ঘর ও আশপাশের যে কোনো পাত্রে বা জায়গায় জমে থাকা পানি পরিষ্কার করা যাতে এডিস মশার লাভা বিস্তার না করতে পারে।
৩। ফুলের টব, প্লাস্টিকের পাত্র, পরিত্যক্ত টায়ার, প্লাস্টিকের ড্রাম, মাটির পাত্র, বালতি, টিনের কৌটা, ডাবের খোসা, নারকেলের মালা, কনটেইনার, মটকা, ব্যাটারি সেল ইত্যাদি প্রতিনিয়ত পরিষ্কার করা; যাতে এডিস মশা বিস্তার না করতে পারে।
৪। রাতে বা দিনে ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করা
৫। স্বাস্থ্যকর পরিবেশ স্থাপন করা
৬। মশা নিধনের ওষুধ, স্প্রে কিংবা কয়েল ব্যবহার করা
৭। জানালাতে মশা প্রতিরোধক নেট ব্যবহার করা
চিকিৎসকের পরামর্শ:
এ বিষয়ে মেডিসিন ও ডায়াবেটিস রোগ বিশেষজ্ঞ কনসালট্যান্ট ডা. ফাহিম আহমেদ রুপম (সিটি স্কিন সেন্টার, শান্তিনগর, ঢাকা) বলেন, এ সময় জ্বর হলেই ডেঙ্গু হয়েছে এমন নয়। মাথাব্যথা, চোখের কোঠরে ব্যথা, মাংসপেশি ও শিরায় ব্যথা এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে লাল দানা বা র্যাশ ওঠা ডেঙ্গুর উপসর্গ।তিনি বলেন, এই জ্বর সাধারণত ২-৫ দিন স্থায়ী হয়। জ্বর সেরে যাওয়ার পর ২-৩ দিনকে ক্রিটিক্যাল পিরিয়ড বলে। কারণ এ সময় রোগীর অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হতে পারে।তিনি আরও বলেন, এই রোগ হলে রক্তক্ষরণ, পেটে প্রচণ্ড ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ওষুধ: এসপিরিন ও ব্যথানাশক ট্যাবলেট খাওয়া যাবে না। লক্ষণ দেখার সাথে সাথে চিকিৎসকের পরমর্শ নিন।
প্রতিরোধে যা করবেন: দিনে ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার বা রিপিলেন্ট স্প্রে ব্যবহার করতে হবে।
চিকিৎসা: পূর্ণ বিশ্রাম ও জ্বর থাকলে দিনে সর্বোচ্চ চারটি প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খেতে হবে। এ ছাড়া বেশি করে পানি ও পানীয় এবং স্বাভাবিক খাবার খেতে হবে। জ্বর ভালো হলে তিন দিন প্লাটিলেট কাউন্ট ও হেমাটাক্রিট করিয়ে চিকিৎসকে দেখাতে হবে।
এদিকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে আবাসস্থল নিয়মিত পরিষ্কার রাখার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বলেছে, এডিস মশা যেহেতু অভিজাত এলাকায়, বড় বড়, সুন্দর সুন্দর দালান কোঠায় বসবাস করে ও সেখানে থাকা স্বচ্ছ পরিষ্কার পানিতে ডিম পাড়ে তাই এসব আবাসস্থল নিয়মিত পরিষ্কার রাখা এ রোগের বিস্তার রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ।
আর মশার আক্রমণ থেকে বাঁচতে ঘরের দরজা ও জানালায় মশারির নেট লাগানোর ওপর জোর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রয়োজনে দিনের বেলায় অবশ্যই মশারি টাঙ্গিয়ে বা কয়েল জ্বালিয়ে ঘুমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
প্রতিক্ষণ/এডি/শাআ