ঢাকার নামকরণের ইতিহাস
ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডট কম:
ঢাকা বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীণ একটি শহর এবং বাংলাদেশের রাজধানী। ঢাকায় লোক বসবাস শুরু করে খ্রিস্টিয় ৭ম শতক থেকে। নবম শতকে সেন শাসন শুরু হওয়ার আগে ঢাকা বৌদ্ধ রাজ্য কামরূপ-এর অধীনে ছিল। সেন পরবর্তী যুগে ঢাকা তুর্কি ও আফগান শাসনাধীন হয়। এসময় ঢাকা দিল্লী সালতানাত নির্ধারিত শাসকদের দ্বারা শাসিত হয়।
১৬০৮ সালে ঢাকায় প্রথম মুঘলদের পা পড়ে। ১৬১০ সালে ঢাকার নামকরণ করা হয় জাহাঙ্গীর নগর। সম্রাট আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর মুঘল সাম্রাজ্যে দুর্বলতা দেখা দেয়ার সময়ে আঠারো শতকের শুরুতে ঢাকা থেকে রাজধানী সরিয়ে নেয়া হয় মুর্শিদাবাদে।
মুঘল পরবর্তীযুগে ঢাকা প্রায় ১৯০ বছর ব্রিটিশ শাসনাধীন থাকে। পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালে ঢাকা পূর্ব বঙ্গের রাজধানী হিসেবে পাকিস্তানের অন্তর্গত হয়। ১৯৫৬ সালের ২৩ মার্চ ঢাকাকে পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী হিসেবে মর্যাদা দেয়া হয়। ১৯৭২ সালের সংবিধান অনুযায়ী ঢাকাকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
ঢাকার নামকরণের সঠিক ইতিহাস নিয়ে ব্যাপক মতভেদ রয়েছে। কথিত আছে যে, মুঘল সুবেদার ইসলাম খাঁ তার নৌবহর নিয়ে ঢাকায় এসে দেখেন একদল পূজারি ঢাকঢোল সহকারে পূজার্চনা করছেন। তখন ঢাকিদের একত্রিত করে একসঙ্গে সবাইকে ঢাক বাজানোর আদেশ দেন ইসলাম খাঁ। শুরু হলো সমন্বিত বৃন্দবাদ্য। সুবেদারের অনুচরগণ উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিমে গিয়ে যতদূর পর্যন্ত এই ঢাকের আওয়াজ শুনতে পেলেন ততদূর পর্যন্ত হলো মুঘলদের বাংলা সুবার নতুন রাজধানী।
আবার অনেক ঐতিহাসিকের মতে, রাজা বল্লাল সেন (১১৬০- ১১৭৯খ্রি.) ঢাকেশ্বরী মন্দির স্থাপন করেছিলেন, যা পরবর্তীকালে বাংলার সুবেদারের দায়িত্বে থাকাকালে মানসিংহ (১৫৯৪ – ১৬০৬খ্রি.) সংস্কার করেন । এই ঢাকেশ্বরী মন্দিরের নাম থেকে ঢাকা নামের উৎপত্তি।
ঢাকার নামকরণ সংক্রান্ত আরও কিছু ঘটনার কথা লোকমুখে শোনা যায়। সেগুলো হলো –
১। একসময় এ অঞ্চলে প্রচুর ঢাক গাছ (বুটি ফুডোসা) ছিল।
২। ‘ঢাকাভাষা’ নামে একটি প্রাকৃত ভাষা এখানে প্রচলিত ছিল।
৩। রাজতরঙ্গিণী-তে ঢাক্কা শব্দটি ‘পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র’ হিসেবে উল্লেখিত হয়েছে অথবা এলাহাবাদ শিলালিপিতে উল্লেখিত সমুদ্রগুপ্তের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ডবাকই হলো ঢাকা।
সুত্র: ঢাকার বিবরণ, শ্রীকেদারনাথ মজুমদার এবং উইকিপিডিয়া।
প্রতিক্ষণ/এডি/পাভেল