সাদিয়া মম, একজন তরুণ কবি যতটা জ্বলে উঠতে পারে আঁধারের বুক চিরে তার চেয়েও কখনও মনে হল মাথা উঁচু করে জেগে উঠেছে তার কবিতাগুলো। অতি পরিচিতের প্রভাবকে পেছনে ফেলে নিজ পরিচয়ে পরিচিত হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা তার কবিতার ভেতর। চারপাশের সবকিছুকে দুচোখ ভরে দেখেছেন আর মনের ঘরে তাই এঁকেছেন কবিতার রঙে-রূপে। তার প্রতিটি কবিতাই যেন চলমান দৃশ্য। কবি হাঁটছেন তার কবিতার রাস্তা ধরে; সাথে হেঁটে চলেছেন তার শ্রোতারাও।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্রী সাদিয়া মম। বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় তার কবিতা প্রকাশিত হলেও ‘দরিয়ার চিঠি’ তার প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবুল হকের মতে, ‘মানুষের যাপিত জীবনের পাশাপাশি প্রেম ও প্রকৃতি, প্রত্যাশা ও আকুলতা বাণীময় হয়ে ওঠে তাঁর কবিতার ছন্দে ও উপমায়, আবেগ ও চিত্রকল্পে। তাঁর কবিতাকে নিছক প্রেমের কবিতা বলা যাবে না, প্রকৃতি সমাজ ও মানুষের মধ্যে যেসব হৃদয়বৃত্তি আভাসিত তাকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা আছে তাতে। তাই কংক্রিটের জঞ্জালে হারানো শৈশব, হারানো আনন্দ, হারানো সময় প্রায়শ মূর্ত হয়ে ওঠে তাঁর কবিতায়’।
এই কাব্যগ্রন্থে কবির স্মৃতিভারাতুর মনের ছবি ধরা পড়বে ‘মেয়ে বেলা’, ‘সোনালী অতীত’, ‘অতীত স্মৃতি’ ইত্যাদি কবিতায়। ‘অতল’ কবিতায় আভাসিত হয়েছে কবির স্বপ্নিল আকাক্সক্ষা। প্রকৃতির প্রাণসত্তার সঙ্গে অভিন্নতার অনুভব লক্ষ করা যায় ‘জোনাক কাব্য’ কবিতায়। ‘তুমি’ কবিতায় প্রেমবোধের মধ্যে স্ফূরণ ঘটেছে সংগ্রামী চেতনার। কখনো কখনো কবি জীবনপথিকের মতো জীবনের পথচলাকে নিরীক্ষণ করেছেন। এ ধরনের কবিতার মধ্যে পড়ে ‘বেলা’, ‘জীবন জোয়ার’, ‘বেলা-অবেলা’ ইত্যাদি। ‘যন্ত্রের পৃথিবী’ কবিতায় প্রেম-অপ্রেম দুটোকেই অনুভব করেছেন কবি। ‘দরিয়ার চিঠি’ কবিতায় প্রেম ও বিরহের দোলাচলে অনুরণিত হয়েছে হৃদয়। কোনো কোনো কবিতা আক্রান্ত রোমান্টিক বিচ্ছিন্নতাবোধে। যেমন : ‘কথোপকথন’, ‘একদিন’, ‘প্রেমহীনতা’ ইত্যাদি।
নানা বিচিত্র অনুভবে সমৃদ্ধ সাদিয়া বিনতে শাহজাহানের কাব্যগ্রন্থ। তাতে পাঠক অনুভব করবেন মুক্ত জীবনের জন্য আকুলতা (মুক্তি’), গতিময় জীবনের অস্তিত্বময়তার বোধ (‘যাপিত জীবন’), প্রকৃতির কোলে রোমান্টিক সৌন্দর্য সন্ধানের আর্তি (‘অন্বেষণ’, ‘খুঁজেছি তোমায়’), আনন্দময় শেশব-কৈশোর জীবনের প্রাণপ্রাচুর্য (‘ভালো আছি’) এবং প্রেম ও সৌন্দর্যের জন্য আকুল আকাক্সক্ষা (‘প্রিয় পুষ্পরাগ’)।
পাশাপাশি কবিকে দেখা যাবে সামাজিক দায়বদ্ধতার আঙিনাতেও। সুন্দরবিনাশী অপশক্তির অপচ্ছায়ার বিরুদ্ধে তিনি অবস্থান নেন ‘অমানিশা’, ‘বারুদের শহর’, ‘নিশুতি শুভ্র চাঁদ’ ইত্যাদি কবিতায়। ‘পূর্বাতীত’ কবিতায় পীড়িত হন স্বচ্ছন্দ জীবনের ওপর চেপে বসা যান্ত্রিকতায়। এমন পরিস্থিতিতে কবিকে দেখা যায় প্রতিকূলতা মোকাবেলায় প্রত্যয়ী হতে (‘সোনালী রোদ্দুর আমায় আহত করতে পারে না’)। বিশেষ করে কবি যে মানবতাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ তা বুঝতে পাঠকের দেরি হয় না। কারণ সব ক্রান্তিকাল ছাপিয়ে তার কবিতায় মূর্ত হয় মানবতার গান (‘মানবতার গান’)।
তরুণ কবি সাদিয়া মম সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত থেকে স্বভাব কবি হিসেবে তার স্বভাবজাত কবিতাকে প্রশ্রয় দেবে এটাই আশা করছি তার কাছে।
প্রতিক্ষণ/এডি/শাআ