ত্বকী হত্যার ২ বছর: আজও চার্জশিট হয়নি
জেলা প্রতিবেদক, প্রতিক্ষণ ডটকম:
আজ ৬ মার্চ নারায়ণগঞ্জের মেধাবী ছাত্র তানভীর মোহাম্মদ ত্বকী হত্যার দুই বছর পূর্ণ হচ্ছে।
গত বছরের ৫ মার্চ র্যাব জানিয়েছিলো, অচিরেই তারা আলোচিত এ মামলার চার্জশিট দেবে। কিন্তু এখনো তা দেওয়া হয়নি।
নিহতের পরিবার চার্জশিট দিতে দেরি হওয়ার জন্য নারায়ণগঞ্জের বতর্মান সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও তার পরিবারকে দায়ী করেছে।
সেই সঙ্গে মামলার চার্জশিট দ্রুত দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। তবে শামীম ওসমান এ মামলার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন। আর র্যাব বলছে, মামলার তদন্ত চলছে।
২০১৩ সালের এই দিনে শহরের শায়েস্তা খাঁ সড়কের বাসা থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয় তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। ৭ই মার্চ তার ‘এ’ লেভেল পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। পদার্থবিজ্ঞানে ৩০০ নম্বরের মধ্যে সে ২৯৭ পায়। এটা ছিল সারা দেশে সর্বোচ্চ নম্বর। ‘ও’ লেভেলে পরীক্ষাতেও সে পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নে দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছিল।
এমন ভাল একটি খবরের রেশ না কাটতেই ৮ ই মার্চ সকালে শহরের চারারগোপস্থ কুমুদীনি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের পূর্ব দক্ষিণ কোণে শীতলক্ষ্যা নদীর পাড় থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নির্মমভাবে ঘাতকরা তাকে হত্যা করে।
লাশ উদ্ধারের পর পুরো নারায়ণগঞ্জে শোকের ছায়া নেমে আসে। প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠে সর্বত্র। র্যাবের তদন্তে এবং আদালতে আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উঠে এসেছে ওসমান পরিবারের এক সদস্যের নাম।
ওই সদস্যের পরিকল্পনায় ও নেতৃত্বে তার টর্চার সেলে ত্বকীকে নির্মম নৃশংসভাবে হত্যার পর লাশ নদীতে ফেলে দেয়া হয়। র্যাব ওই টর্চার সেলে অভিযান চালিয়ে টর্চারকাজে ব্যবহৃত নানা উপকরণ উদ্ধার করেছিল। কিন্তু গ্রেফতার হয়নি মূল ঘাতকরা।
মামলার তদন্ত যেখানে থেমে আছে: উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০১৩ সালের ২০শে জুন ত্বকী হত্যা মামলাটি র্যাব-১১-এর কাছে হস্তান্তর করা হয়। র্যাব হত্যা মামলায় সুলতান শওকত ওরফে ভ্রমর ও ইউসুফ হোসেন লিটন নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করে।
এর মধ্যে ২৯শে জুলাই ইউসুফ হোসেন লিটন ও ১২ই নভেম্বর সুলতান শওকত ওরফে ভ্রমর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কে এম মহিউদ্দিনের আদালতে সুলতান শওকত ওরফে ভ্রমর তার দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উল্লেখ করা হয়, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের (বর্তমানে প্রয়াত) একমাত্র ছেলে আজমিরী ওসমানের নেতৃত্বে তারই অফিসে (উইনার ফ্যাশনে) ত্বকীকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
দুই আসামির জবানবন্দির পর র্যাব-১১, নারায়ণগঞ্জ ক্যাম্পের ওই সময়ের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে বিপুলসংখ্যক র্যাব সদস্য ৭ ই আগস্ট দুপুরে প্রয়ায় দুই ঘণ্টা শহরের আল্লামা ইকবাল সড়কে আজমিরী ওসমানের মালিকানাধীন উইনার ফ্যাশন কার্যালয়ে অভিযান চালায়।
শহরের এ কার্যালয়টি আজমিরী ওসমানের টর্চার সেল হিসেবে পরিচিত। ওই টর্চার সেল থেকে র্যাব একটি রক্তমাখা আকাশি রঙের জিন্স প্যান্ট, গুলির চিহ্নসহ সুটকেস ও সোফা, একটি পিস্তলের বাঁটের ভাঙা অংশ, তিনটি লাঠি, চারটি মোবাইল সেট, লাইলনের রশি, একটি কম্পিউটার সিপিইউ, এলসিডি মনিটর, কয়েকটি ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা এবং ইয়াবা সেবনের সরঞ্জাম উদ্ধার করে।
রফিউর রাব্বির বক্তব্য: নিহত ত্বকীর বাবা সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি বলেন, এক বছর আগে মামলার তদন্তকারী সংস্থা র্যাব মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেবে বলে সংবাদকর্মীদের জানালো। কিন্তু তারপর এই যে তদন্ত কার্যক্রম বন্ধ করে রাখা, এটা হচ্ছে এ বিষয়ে সরকারের উদাসীনতা এবং ত্বকী হত্যার সঙ্গে যারা অভিযুক্ত তারা সরকারের অংশীদার হওয়ায় আজকে ত্বকী হত্যার বিষয়টা অগ্রসর হচ্ছে না।
প্রধানমন্ত্রী যদি চান এ বিষয়টা অগ্রসর হোক, ত্বকী হত্যার বিচার হোক তাহলেই বর্তমান বাস্তবতায় এটা অগ্রসর হবে। কারণ এটা থমকে আছে যে কারণে, সেটা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী এই অপরাধী চিহ্নিত পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণার কারণে। আর অন্য কোন কারণ নেই।
প্রতিক্ষণ /এডি/রাতুল