দরূদ পাঠের প্রয়োজনীয়তা
প্রতিক্ষণ ডেস্ক
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধু মানব জাতিই নয়, সমগ্র বিশ্ব জাহানের জন্য রহমত স্বরূপ। আল্লাহ সূরা আম্বিয়ার ১০৭ নং আয়াতে বলেন-আমি আপনাকেই শুধুমাত্র সমগ্র বিশ্ব জাহানের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি। যিনি আমাদের জন্য রহমত। তাঁর প্রতি দরূদ পাঠের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারিমে তা উল্লেখ করেছেন। প্রতিক্ষণ পাঠকদের জন্য দরূদ পাঠের ফজিলত তুলে ধরা হলো-
রাসুল সাল্লাল্লাহু আমাদের জন্য রহমত
পৃথিবীতে আমাদের চোখে যা কিছু দৃষ্টি গোচর হয় তার সবই আমাদের জন্য রহমত। কারণ সমগ্র সৃষ্টি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ। সুতরাং আল্লাহ হচ্ছে জগতের প্রতিপালক। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছে আমাদের জন্য রহমত। যার প্রমাণ হচ্ছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর নাজিলকৃত আল-কুরআনুল কারিম।
তাঁর প্রতি দরূদ পাঠের হুকম-
আল্লাহ বলেন- “নিশ্চয় আল্লাহ এবং তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি দরূদ পাঠান। হে ঈমানদারগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠাও।” (সূরা আল-আহযাব : আয়াত ৫৬)। এ দরূদ পাঠের ধরন ও হুকুম হচ্ছে-
ক. আল্লাহর পক্ষ থেকে নবীর প্রতি দরুদের অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি সীমাহীন করুণার অধিকারী। তিনি তাঁর প্রশংসা করেন। তাঁর কাজে বরকত দেন। তাঁর নাম বুলন্দ করেন। তাঁর প্রতি অবিরত রহমত বর্ষণ করেন।
খ. ফেরেশতাদের পক্ষ থেকে দরুদের অর্থ হচ্ছে- তাঁরা তাঁকে চরমভাবে ভালোবাসেন এবং তাঁর জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন, আল্লাহ যেন তাকে সর্বাধিক উচ্চ মর্যাদা দান করেন এবং আল্লাহ যেন তাঁর শরিয়তকে প্রসার ও বিস্তৃতি দান করেন এবং তাঁকে একমাত্র মাহমুদ তথা সর্বোচ্চ প্রশংসিত স্থানে পৌঁছিয়ে দেন।
গ. মানবকূলের পক্ষ থেকে অর্থ হচ্ছে- হে লোকেরা! তোমরা যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বদৌলতে সঠিক পথে সন্ধান পেয়েছো, তারা তাঁর মর্যাদা অনুধাবন করো এবং তাঁর মহা অনুগ্রহের হক আদায় করো। তোমরা মুর্খতার অন্ধকারে পথ ভুলে বিপথে ছিলে। এ ব্যক্তি তোমাদের জ্ঞানের আলোকবর্তিকা দান করেছেন। তোমরা নৈতিক অধ:পতনের মধ্যে ডুবেছিলে, তিনি তোমাদের বর্বর ও পাশবিক জীবন যাপন থেকে সর্বোত্তম মানবিক সভ্যতা ও সংস্কৃতির সাজে সুসজ্জিত করেছেন। তিনি কারো সঙ্গে করেননি দুর্ব্যবহার, দেখিয়েছেন আলো পথ।
তার প্রতি কৃতজ্ঞতার অনিবার্য দাবি-
ইসলামের দুশমনরা তাঁর প্রতি যে পরিমাণ হিংসা ও বিদ্বেষ পোষণ করে, তোমরা তাঁর প্রতি সমপরিমাণ বা তার চেয়েও বেশি ভালোবাসা পোষণ করো। তাদের অবাধ্যতার চেয়ে তোমাদের অনুরক্ততা হবে অনেক বেশি। তাদের নিন্দা তোমাদের প্রশংসায় ডুবে যাবে। তাদের বদকামনা তোমাদের শুভকামনায় হারিয়ে যাবে। হে মানবজাতি তোমরা সেই একই দোয়া ও কল্যাণ কামনা আরো বেশি পরিমাণে যা আল্লাহর ফেরেশতারা দিনরাত তাঁর জন্য করে যাচ্ছে যে, “হে আমাদের রব! তোমার নবী যেমন আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন তেমনি তুমিও তাঁর প্রতি অসীম ও অগণিত রহমত বর্ষণ করো, তাঁর মর্যাদা দুনিয়াতেও সবচেয়ে বেশি উন্নত করো এবং আখেরাতেও তাঁকে সকল নৈকট্য লাভকারীদের চাইতেও বেশি নৈকট্য দান করো।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই হাদিসটি দরূদ পাঠের গুরুত্ব স্মরণ করিয়ে দেয় যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেহরাবে আরোহ করলেন আর বললেন আমিন। সাহাবায়ে কিরামের জিজ্ঞাসায় তিনি বলেছিলেন, জিব্রাইল আমিন বলেছিলেন, যে ব্যক্তি আপনার নাম শুনল অথচ আপনার প্রতি দরূদ পাঠ করল না, সে ধ্বংস হোক। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিব্রাইল আমিনের কথার উত্তরে বলেছিলেন আমিন। সুতরাং বুঝাই যায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরূদ পাঠের প্রয়োজনীয়তা।
আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর প্রতি প্রতিনিয়ত দরূদ পাঠানো তাওফিক দান করুন। আমাদেরকে তার দেখানো পথে ও মতে জীবন পরিচালনার তাওফিক দান করুন। আমাদেরকে দরুদের হক আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
প্রতিক্ষণ/এডি/ডিএইচ