দুর্দিনে বাদ্যযন্ত্রের কারিগররা
নিজস্ব প্রতিবেদক
আজকালের সঙ্গীত প্রাঙ্গন গিটার, পিয়ানো, বেহালা, কিবোর্ড, ড্রামস ইত্যাদি আধুনিক বাদ্যযন্ত্রে ছেয়ে আছে। বাঁশির সেই সুরেলা সুর, ঢুলির ঢোলের সেই টাকডুম টাকডুম শব্দ আর শোনা যায় না বললেই চলে। আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের আধিপত্যে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশের ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রগুলোর ব্যবহার এবং সেই সাথে হারিয়ে যাচ্ছে সেগুলোর মনকাড়া সুরেলা সুর।
বাংলার ঐতিহ্যবাহী কিছু বাদ্যযন্ত্র হলো ঢোল, খোল, একতারা, দোতারা, তবলা, সানাই, কঙ্গো, বাঁশি ইত্যাদি। আধুনিকতার ছোঁয়ায় নানা অনুষ্ঠানে এইসব বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার নেই বললেই চলে। তাই বগুড়ার বাদ্যযন্ত্রের কারিগরদের এখন দুর্দিন চলছে।
বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার পৌর শহরের বেশকিছু পরিবারের সদস্যরা বাদ্যযন্ত্র তৈরির কাজে জড়িত আছে। এই পেশার কারিগররা তবলা, ডুগি, মৃদঙ্গ, খোল, কংগো, খঞ্চনি, ঢাক, ঢোল, হারমোনিয়াম ও একতারার মতো বাদ্যযন্ত্র তৈরী করেন। সান্তাহার নতুন বাজার এলাকার বাদ্যযন্ত্র কারিগর উপেন এই পেশায় নিয়োজিত আছেন প্রায় ৪০ বছর ধরে। উপেন তেমন লেখাপড়া করতে পারেন নি। এখন তিনি চান তার সন্তানরা লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হোক।
তিনি জানালেন, তার ব্যবসা এখন ভালো যাচ্ছে না। আধুনিক যন্ত্রপাতির প্রচলন হওয়ায় তাদের কদর এখন কমে গেছে। সান্তাহারের এই পেশার আরেকজন শিল্পী রামু দাস জানালেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের হরিবাসর, নববর্ষ, পূজার সময় তাদের ব্যবসা ভালো যায়। বাকিটা সময় অলস সময় কাটাতে হয় তাদের। এক সময় সান্তাহারের বাদ্যযন্ত্র উত্তরাঞ্চলসহ সারা দেশে সরবরাহ করা হতো।
জলিল নামে একজন কারিগর জানালেন, ঢোল তৈরিতে কাঁচামাল হিসাবে আম, জাম, রেইন্ট্রি, কড়াই, মেহগনি কাঠ ব্যবহার করা হয়। আর ঢাকের ছাউনির জন্য ছাগল ও ভেড়ার চামড়া এবং বেড়ি দেওয়ার জন্য মহিষের চামড়া ব্যবহার করে থাকেন। বর্তমানে এসব কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবং আগের মতো আর ঐতিহ্যবাহি বাদ্যযন্ত্রগুলোর কদর না থাকায় কমে গেছে তাদের উৎপাদিত পন্যের দাম।
সান্তাহারে বাদ্যযন্ত্রের দোকানগুলোর মালামাল পাইকারী ও খুচরা হিসাবে বিক্রি হয় বলে জানালেন করিম উদ্দীন নামে এক শিল্পী। তিনি আরো বলেন, সরকারী কিছু পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তারা এ পেশাকে লাভজনক পেশা হিসাবে গড়ে তুলতে পারবেন।
প্রতিক্ষণ/এডি/এআরকে