নীলাচলের মমতা হৃদয়ে স্বর্গীয় অনুভূতি জাগায়
আকিদুল ইসলাম, প্রতিক্ষণ ডটকম:
শরতের প্রকৃতি মনে হয় পবিত্রতার রংয়ে নিজেকে সাজাতেই বেশী ভালোবাসে। কাশফুল, সাদা মেঘের ভেলা যেন মিতালি করে মিলিত হয় দিগন্তে। আকাশ পাতাল পার্থক্যের প্রবাদ ভুলিয়ে দিয়ে সবাইকে একাকার করে তোলে তার শুভ্রতায়।
সাদা যদি পবিত্রতার প্রতীক হয়, তাহলে তার উপর আলোর ছটা সেটাকে আরও অন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়। দিগ-দিগন্তে অপরূপ সৌন্দর্যের ছড়াছড়ি যেখানে,তার অপর নাম বান্দরবানের নীলাচল।
নীল বেদনার রং বলে ছড়িয়ে পড়লেও এখানে ঠিক তার বিপরীত ভাষা। নীলাচল,নীলগীরি তাহলে প্রকৃতির সেরা সৌন্দর্যের নিদর্শন হিসেবে হৃদয় মন্দিরে ঠাঁইতো পেতোই না বরং নাম শুনলে মলিনতায় ভরে উঠত মন প্রাণ। কিন্তু না , এখানে মুদ্ধতায় মুদ্ধতা বাড়ায়, স্নিদ্ধতায় ভিজিয়ে দেয় প্রত্যেকের বেদনাতুর হৃদয় পরম মমতা ও ভালোবাসায়।
পাহাড় আর চির সবুজে ঘেরা বান্দরবান তাই প্রকৃতির ডাকে প্রতিনিয়ত সাড়া দিয়ে বর্ণিলভাবে সাজে ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে। পৃথিবী যেমন সুন্দর তার বৈচিত্রময়তার জন্য, তেমনি বান্দরবান তথা নীলাচল সুন্দর তার ঋতুভেদে বৈচিত্রময়তায়। তবে নিলাচলকে সব ঋতুতেই সুন্দর দেখালেও একটু ভিন্ন ভাবে চেনা যায় শরতে।
শরতের শেষে এই নিলাচল তার রূপ রহস্যটার ঘোমটা খুলে মেলে ধরে তার পবিত্র শুভ্র চেহারা ভ্রমণ পিয়াসীদের কাছে। বান্দরবান শহর থেকে প্রায় পাঁচ কিঃমিঃ আগে টাইগারপাড়া নামক এলাকায় নীলাচলের আবাসভূমি। উচু-নিচু, আঁকা-বাঁকা পাহাড়ি রাস্তায় চলার আকর্ষণটায় আলাদা। সেটি উপভোগ না করে থাকি কিভাবে?
আমরা তাই দুপুরে শহরের জুম্মু হোটেলে পাহাড়ী খাবার শেষে রওনা দিলাম নীলাচলের উদ্দেশ্যে। পাহাড়ী রাস্তায় চলাচলে ভয়ের উদ্রেকের মাঝে সৌন্দর্যে বিমোহিত হতে লাগলাম প্রতিটি মুহূর্ত।
সমভূমি থেকে নীলাচলের উচ্চতা প্রায দুই হাজার ফুট। উপর থেকে ভালো করে তাকালে পাহাড়ের গায়ে লেগে থাকা ঘরগুলো মনে হয় একেকটা রাজহাঁসের ডিম।
পাহাড়ের চূড়ায় গা ছুঁয়ে শরতের সাদা মেঘ ভেসে যাচ্ছে। মৃদু বাতাস এসে মনে হয় আলতো করে বুলিয়ে দিচ্ছে পরম মমতায়।
প্রতিটি মুহুর্ত মনে হয় প্রকৃতি যেন স্বাগত জানাচ্ছে আপন আঙ্গিনায়। বাতাস আর সাদা মেঘের মিতালি তুলার মত খেলা করছে শূন্যতায়। মনে হয় খন্ড খন্ড তুলোর টুকরো ভেসে বেড়াচ্চে বাঁধ ভাঙ্গা উল্লাসে। এ এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি। সাদা তুলার স্পর্শে শরীর মন সব স্নিগ্ধতায় মাতোয়ারা হয়ে একাকার হয়ে যায়। প্রকৃতির নিষ্পাপ মমতায় জড়িয়ে ধরলে স্বর্গীয় অনুভূতিতে ভরে উঠে মন।
যে বয়সেই হোক না কেন প্রকৃতির সাথে খেলায় মেতে উঠতে মন চায় সবার । মনে হয় পাহাড়ী স্বর্গভূমীতে সৌন্দর্য্য স্নানে কাটিয়ে দিই সারা জীবন। প্রকৃতির মুগ্ধতা,স্নিগ্ধতা,মমতা,ভালোবাসা খেয়ে যদি বেঁচে থাকা যেত তাহলে সব মানুষের আবাস ঐখানেই হতো নিশ্চিত। চোখের সামনে সবুজে ঘেরা বিরাট পাহাড়ের স্থির মিছিল,মাথার উপরে সাদা মেঘের নৃত্য, রোদ-ছায়ায় সূর্ লেুকোচুরি খেলা শুধুই আন্দোলিত করে মন প্রানকে।
যা দেখে স্থির মুগ্ধতায় স্নান করা ছাড়া উপায় থাকে না। নীলাচলে পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িযে মনে হয় স্মৃতি স্তম্ভ হয়ে থাকি। তাহলে হয়তো শরতের মতো অন্য ঋতুর প্রকৃতির খেলাও দেখা যাবে প্রতি ঋতুতে। তবে এখানের সূর্যোদয় নয়ন জুড়ানো। হালকা শীতল বাতাসের সাথে সাদা মেঘের খেলার মাঝে সূর্যকে সোনালী গোলক মনে হয়, ঐ সাদা তুলা দন্ডের মধ্যে মেঘের উপর সোনালী আভা ছড়াচ্ছে যা চোখে না দেখে কল্পনাতেও কল্পনা করা কঠিন।
প্রতিক্ষণ/এডি/আকিদ