পথভ্রষ্ট তারুণ্য, স্বজনদের হাহাকার

প্রকাশঃ জুলাই ১০, ২০১৬ সময়ঃ ১২:২২ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১০:১৯ পূর্বাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ

32পরপর দুটি জঙ্গি হামলায় কেঁপে উঠেছে বাংলাদেশ। যা দেশবাসী কখনো কল্পনাও করেনি সেটাই সত্যি হয়ে দেখা দিল বাংলার বুকে। আমাদের দেখতে হলো যে, বাংলার সন্তানরা জঙ্গি। বাংলাদেশের যে তরুণের দেশের ভবিষ্যত হওয়ার কথা, দেশের গৌরব হওয়ার কথা, তারাই দেশের ও পরিবারের জন্য বয়ে আনছে লজ্জা। এই লজ্জা পরিবারের সদস্যদেরই যেন বেশি। তাইতো বুকে হাহাকার নিয়ে শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতের কাছে জঙ্গী আক্রমণের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত সন্দেহভাজন হামলাকারী আবির রহমানের বাবা সিরাজুল ইসলাম প্রশ্ন করেছেন, “ওর মতো ছেলেদেরকে কারা এ পথে নিয়ে যাচ্ছে?”

শুধু প্রশ্নই নয়, সেই সাথে তিনি আহ্বানও জানান যেন এটা বের করতে পদক্ষেপ নেয়া হয়।

সাংবাদিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের সময় ছেলের কথা বলতে গিয়ে তিনি এতটাই ভেঙে পড়েছিলেন যে বেশিক্ষণ কথা বলতে পারেন নি। মি. ইসলাম বলছিলেন, তিনি প্রার্থনা করেন বাংলাদেশের আর কোন বাবা-মা যেন এরকম পরিস্থিতিতে না পড়ে।

“কিভাবে কারা এই ধরণের ছেলেদের মডিফাই করে কি করছে, এ জন্য যেন পদক্ষেপ নেয়া হয়” – বলেন তিনি।

ব্যথিত পিতা সিরাজুল ইসলাম বলেন, যে ছেলে তাকে নিয়ে নামাজ পড়তে যেতো, বাসায় থাকলে বাবাকে না নিয়ে খেতে বসতো না – তার যে এমনটা হবে তা তিনি ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করতে পারেন নি। ঢাকার বসুন্ধরা এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলছিলেন, তার অন্য দুই ছেলের খেলাধুলায় আগ্রহ ছিল না, কিন্তু আবির ক্রিকেট খেলতো। ভাইদের সাথে এটাই ছিল তফাৎ।

আবিরের ভাই আশিকুর রহমান বলছিলেন, আবির ধার্মিক ছিল, নিয়মিত নামাজ পড়তো, দাড়ি রেখেছিল। কিন্তু এটা অস্বাভাবিক কিছু বলে তাদের মনে হয় নি। কিন্তু কেন চার মাস আগে আবির বাড়ি ছেড়ে হঠাৎ করে নিখোঁজ হয়ে যায় – তা সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারছেন না পরিবারের কেউই। তারা এ নিয়ে পুলিেশর কাছেও যান নি।

তবে গুলশানের ঘটনার পর যখন সংবাদমাধ্যমে খবর বের হয় যে – সচ্ছল মধ্যবিত্ত পরিবারের নিখোঁজ হয়ে যাওয়া তরুণ ছেলেদের একটি দলই হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা চালিয়েছে এবং এরকম আরো অনেক পরিবারের ছেলেই নিখোঁজ আছে – তখনই আবিরের পরিবার পুলিশের কাছে ব্যাপারটা জানানোর সিদ্ধান্ত নেন। থানায় জিডি করার কয়েকদিনের মধ্যেই শোলাকিয়ার আক্রমণে ঘটনায় আবিরের নিহত হবার খবর পান তারা।

এ-লেভেলের পরই অস্ট্রেলিয়া যাবার ইচ্ছে ছিল আবিরের। কিন্তু তা সম্ভব না হওয়ায় মনক্ষুণ্ণ হয়েছিল সে – জানিয়েছেন তার বাবা ও ভাই ।

“তাকে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএতে ভর্তি করা হয়। আবিরের কথা ছিল, এই কোর্স শেষ করে অস্ট্রেলিয়ায় নয়, বরং মালয়েশিয়া যাবে। সেই আশাতেই আমরা ছিলাম।” বলছিলেন আবিরের বাবা সিরাজুল ইসলাম।

কিন্তু চার মাস আগে হঠাৎ করে নিখোঁজ হয়ে যায় আবির। তার ঘরের বারান্দায় ফুলের গাছ ছিল, খাঁচায় পোষা পাখী ছিল। যাবার আগে সে পাখিগুলো ছেড়ে দিয়ে গেছে, বলছিলেন আবিরের ভাই, আশিকুর রহমান।

 

 

প্রতিক্ষণ/এডি/সাদিয়া

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G