পাটের সুদিনের প্রত্যয়ে পাটবন্ধুদের আড্ডা

প্রকাশঃ জানুয়ারি ২২, ২০১৭ সময়ঃ ৫:০১ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৫:০১ অপরাহ্ণ

16237742_10211433579175962_1845307804_n

কেউ ময়মনসিংহ, রংপুর কিংবা চট্টগ্রাম থেকে এসেছেন; বাদ যায়নি জামালপুর, কুড়িগ্রামের বন্ধুরাও। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘পাটের লড়াই’ নামক সংগঠনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তারা এসেছিলেন সবাই। পাটপণ্য উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি পাট কর্মকর্তা, বিশেষজ্ঞ, উন্নয়নকর্মী, শিক্ষক, ছাত্র, সাংবাদিকসহ আরও অনেকেই এসছেন। পাটবন্ধু হয়ে নিজেদের মতামত বিনিময় করতে তারা একত্রিত হয়েছেন এ আড্ডায়।

২০ জানুয়ারি, শুক্রবার রাজধানীর বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে ‘পাটবন্ধু আড্ডা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে ‘পাটের লড়াই’ নামক একটি সংগঠন। বিকাল ৪টায় আড্ডা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় হলরুম।

পাটবন্ধুর হাতে শুভেচ্ছা স্মারক তুলে দেয়ার মাধ্যমে শুরু হয় আড্ডার মূল পর্ব। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে বাংলাদেশের পাটশিল্প ও পাটপণ্য উদ্যোক্তাদের সমস্যা-সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন আগত বন্ধুরা।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ইনস্টিটিউটের মহাপরচিালক ওয়াসিম জব্বার, কেয়ার বাংলাদেশের সুইচ এশিয়া জুট ভ্যালু চেইন ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের টিম লিডার শেখর ভট্টাচার্য, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মাদ মইনুল ইসলামসহ পাটপণ্য উৎপাদন ও রপ্তানির সাথে জড়িত ৩০ প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যাক্তিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫০ জন পাটবন্ধু।

শুভেচ্ছা বক্তব্যে ‘পাটের লড়াই’এর প্রতিষ্ঠাতা নাসিমূল আহসান বলেন, কৃষক, পাটপণ্য উদ্যোক্তা ও পাটের সাথে সংশ্লিষ্ঠ সবার প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠতে চাই আমরা। সবাইকে নিয়ে সবার জন্য কাজ করতে চাই। কৃষকদের কাছে পাটচাষ সংক্রান্ত দরকারি তথ্য পৌঁছে দেয়ার পাশাপাশি কৃষকদেরকে পাট চাষ ও পাটবীজ উৎপাদনে উৎসাহী করতে চাই। পাটপণ্য উদ্যোক্তাদের জন্য একটি পণ্য ডিজাইন ও আইসিটি সেল করতে চাই; যেখানে পাটপণ্য উৎপাদনের সাথে জড়িত প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের লোগো থেকে শুরু করে প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি, ব্রান্ডিং ও মার্কেটিংসহ সব ধরনের কাজ করা হবে’।

তিনি জানান, পাটপণ্যকে জনপ্রিয় করার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ইতোমধ্যে পাটের লড়াই সেই কাজটি শুরু করেছে। আমরা শুধুমাত্র পাটপণ্য নিয়ে দেশের প্রথম অনলাইন মার্কেটপ্লেস ‘ইউজুট’ তৈরির কাজ এগিয়ে নিচ্ছি। ইউজুট পাটপণ্য ক্রেতা ও বিক্রেতার মাধ্যমে একটি চমৎকার সেতু হয়ে উঠবে, যা দেশীয় বাজারে পাটপণ্যের চাহিদা ও জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে দারুণ ভূমিকা রাখবে।

শিশুদের ও কিশোরদের মাঝে পাটপণ্যকে জনপ্রিয় করে তোলার গুরুত্ব সর্ম্পকে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, আজকের শিশু কিশোররাই ভবিষ্যতের বাংলাদেশ। ওদেরকে পরিবেশবান্ধব চেতনায় বড় করা গেলে, পাটপণ্য সম্পর্কে সচেতন করা গেলে সেটা দারুণ কাজ হবে বাংলাদেশের পাটশিল্পের জন্য। ছোটবেলা থেকেই শিশুরা যাতে পাটপণ্য চিনতে পারে, জানতে পারে এবং সর্বোপরি পরিবেশবান্ধব চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে পারে সেজন্য ‘জুট ফর কিডস’ নামের একটি উদ্যোগ আমরা হাতে নিয়েছি।

অনুষ্ঠানে আগত বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ইনস্টিটিউটের মহাপরচিালক ওয়াসিম জব্বার বলেন, পাটশিল্পকে এগিয়ে নিতে এর সাথে সংশ্লিষ্ঠ সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করতে হবে। সোনালী আঁশকে যে আমরা হীরক আঁশের মর্যাদায় নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছি, তা সবাই মিলে একসাথে বাস্তবায়ন করতে হবে।

শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ বলেন, পলিসি সাপোর্ট না থাকলে কোনো শিল্পই দাঁড়াতে পারেনা। পাটকে গৌরবময় অতীত ঐতিহ্যে ফিরিয়ে নিতে হলে আমাদের সঠিক পলিসির দরকার। পাটনীতির দ্রুত বাস্তবায়ন খুব জরুরি। পাট নীতিতে যে বিষয়গুলোর উল্লেখ আছে, সেগুলো গুরুত্বের বিবেচনায় একটা একটা করে এগিয়ে নিতে হবে।

কেয়ার বাংলাদেশের সুইচ এশিয়া জুট ভ্যালু চেইন ডেভলপমেন্ট প্রকল্পের টিম লিডার শেখর ভট্টাচার্য বলেন, আমাদের মাটি, আমাদের জমি পৃথিবীর মধ্যে পাট উৎপাদনের জন্য সবচেয়ে অনুকূল জমি। কিন্তু পাটবীজ উৎপাদনে আমরা পিছিয়ে আছি। প্রতিবছর আমাদের সাড়ে চারহাজার মেট্রিকটন বীজ প্রয়োজন হয়, অথচ উৎপাদন করতে পারি মাত্র ১২শ মেট্রিকটন। সরকারকে এই জায়গায় কাজ করতে হবে।

অনুষ্ঠানে আগত কারুকাজ প্রোডাক্টস -এর সিইও এবং ডিজাইনার আবদুল খালেদ বলেন, বিশ্ববাজারে পাটের ব্যাপক সম্ভাবনা ও চাহিদা সত্ত্বেও আমরা সে সুযোগ কাজে লাগাতে পারছিনা। পাট নিয়ে চিন্তাভাবনাটা এখনও আমাদের ক্ষুদ্র পরিসরেই আটকে আছে। বেশি মুনাফার আশা না করে, পাটপণ্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার নাগালে নিয়ে আসতে হবে। এছাড়াও কারিগরি দিক দিয়ে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। এ সময় তিনি ‘পাটবন্ধু ডিজাইন হাউস’ নামে একটি আলাদা শাখা তৈরির প্রস্তাব করেন।

আড্ডায় কুড়িগ্রাম থেকে আগত চারকোল মিল অ্যান্ড স্টোর -এর স্বত্ত্বাধিকারী মাসুদুল ইসলাম বলেন, পাট গাছের মধ্যে পাটখড়ি ছিল সবচেয়ে অবহেলিত। সাধারণ রান্নাবান্না এবং বেড়ার কাজ ছাড়া এটির ব্যবহার আমাদের দেশে ছিল না। কিন্তু আমরা সেই পাটখড়িকে কাজে লাগিয়ে এখন সম্পদে পরিণত করতে পেরেছি।

ক্রাফটভিশন -এর স্বত্ত্বাধিকারী ইব্রাহিম খলিল বলেন, পাটশিল্প অগ্রগতির ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতা আমাদের প্রধান অন্তরায়, এটিকে আগে দূর করতে হবে। পাশের দেশ কলকাতায় পাটপণ্য কেনাবেচার জন্য ‘জুট পল্লী’ আছে কিন্তু আমাদের দেশের পাটপণ্য উদ্যোক্তা এবং ক্রেতাদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই। আমি বিশ্বাস করি, বিজেএমসি, জেডিপিসি আমাদের জন্য কাজ করবে; যদি আমরা তাদের সঠিকভাবে বুঝাতে পারি।

প্রতিক্ষণ/এডি/শাআ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G