পাস হলো ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট
নিজস্ব প্রতিবেদক:
২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর ২১৯ জন মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের ৫৭ ঘণ্টার আলোচনার পর পাস হলো ২ লাখ ৯৫ হাজার ১’শ কোটি টাকার নতুন বাজেট।
এর মাধ্যমে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বাংলাদেশকে যে সমৃদ্ধির সোপানে নিয়ে যেতে চাইছেন তা একধাপ এগিয়ে গেলো।সেই সঙ্গে দেশের সর্ববৃহৎ এই বাজেটটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশে উচ্চ প্রবৃদ্ধির পথ রচনা হবে বলেও অভিমত অর্থমন্ত্রীর।
অর্থমন্ত্রীর ভাষ্যমতে, এবার বাজেটের ৯৫ দশমিক ৭ শতাংশই বাস্তিবায়িত হবে। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী একাধিকবার বলেছেন বাজেট উচ্চাভিলাসী। তবে এটি বাস্তবায়ন যোগ্য।
আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টা ১০ মিনিটে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে দিনের কার্যক্রম শুরু হয়।
অধিবেশনের শুরুতেই স্পিকার সংসদকে জানান এ পর্যন্ত ৫৬টি মঞ্জুরি দাবি পাওয়া গেছে। এছাড়া ১০ জন সংসদ সদস্যের ৫২৫টি ছাটাই প্রস্তাব পাওয়া গেছে।
এ ১০ জন মধ্যে ৭ জন বিরোধীদল জাতীয় পাটির ও ৩ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য। এরমধ্যে ৭টি মন্ত্রণালয়ের উপর আলোচনার জন্য সম্মতি জানিয়েছেন সংসদ সদস্যরা। বাকি মন্ত্রণালয়গুলো সরাসরি ভোটে দেওয়া হয়।
স্পিকার প্রস্তাবিত বাজেট কণ্ঠ ভোটে দেন। পরে সরকারি দল ও বিরোধি দলের পূর্ণ সমর্থনে পাস হয় ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট। এর মাধ্যমে বিদায় নিলো ২০১৪-১৫ অর্থবছর। আর শুরু হলো নতুন অর্থবছর। ১ জুলাই থেকে কার্যকর শুরু হবে নতুন অর্থবছরের এ বাজেট ।
বাজেটের আকার:২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৯৫ হাজার ১’শ কোটি টাকা। যা ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ছিলো ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে বাজেটের আকার বেড়েছে প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা।
বিদায়ী ২০১৪-১৫ অর্থবছরের মতো নতুন অর্থবছরের বাজেটেও সামাজিক অবকাঠামো ও ভৌত অবকাঠামো খাতেকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সামাজিক অবকাঠামোতে নতুন অর্থবছরে জন্য ৬৯ কোটি ১৮৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।বিদায়ী অর্থবছরে এ খাতের বরাদ্দ দেওয়া হয়ে ছিলো ৬৩ হাজার ৩৬ কোটি টাকা।
মানব সম্পদ উন্নয়নে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৬০ হাজার ৭১ কোটি টাকা। এর মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ১৭ হাজার ১০৩ কোটি টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ১৪ হাজার ৫০২ কোটি টাকা, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ১২ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা ও অন্যান্য ১৫ হাজার ৭৭১ কোটি টাকা।
ভৌত অবকাঠামোতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৯০ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা। বিদায়ী অর্থবছরে এ বরাদ্দ ছিলো ৭৫ হাজার ৫৪৩ কোটি টাকা। সাধারণ সেবা খাতের বরাদ্দ ৮২ হাজর ৫৬০ কোটি টাকা। বিদায়ী অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিলো ৫৯ হাজার ৪৯ কোটি টাকা।
বিদায়ী অর্থবছরে মানবসম্পদ উন্নয়নে বরাদ্দ ছিলো ৫৪ হাজার ৬৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ১৫ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ১৩ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ১১ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা ও অন্যান্য ১৩ হাজার ৭০৬ কোটি টাকা।
এডিপি: নতুন অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ৯৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যা বিদায়ী অর্থবছরে ছিলো ৮০ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এডিপি বেড়েছে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা।
মানব সম্পদ উন্নয়নে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২১ হাজার ৩০৮ কোটি টাকা। যা বিদায়ী অর্থবছরে ছিলো ১৯ হাজার ৫১৯ কোটি টাকা। নতুন বাজেটে কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৪ হাজার ৫২১ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিলো ২০ হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা।
জ্বালানি অবকাঠামো খাতে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৮ হাজার ৪৭৯ কোটি টাকা। বিদায়ী অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিলো ১১ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা। যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে নতুন অর্থবছরের জন্য ২১ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
বিদায়ী অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিলো ১৮ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। অন্যান্য খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১১ হাজার ৩৩ কোটি টাকা। বিদায়ী অর্থবছরে এ বরাদ্দ ছিলো ৯ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা।
ঘাটতি: অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের বাইরে নতুন অর্থবছরের বাজেটে মোট ঘাটতির পরিমাণ ৮৬ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা। বিদায়ী অর্থবছরে বাজেটে ঘাটতি ধরা হয় ৬৭ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরের বাজেটে আকারের সঙ্গে বেড়েছে ঘাটতির পরিমাণ।
সম্পদ আহরণ: বাজেটে মোট অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা। বিদায়ী অর্থবছরে এ লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১ লাখ ৮২ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরে সম্পদ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ২৫ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা বেশি ধরা হয়েছে।
ঘাটতি পূরণ: বৈদেশিক ঋণের মাধ্যমে নতুন অর্থবছরের বাজেটের ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩২ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা। বিদায়ী অর্থবছরে বাজেটে ঘাটতি পূরণে বৈদেশকি ঋণের এ লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ২৬ হাজার ৫১৯ কোটি টাকা।
নতুন অর্থবছরে বৈদেশিক অনুদানের লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। বিদায়ী অর্থবছরের জন্য এ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৬ হাজার ২০৬ কোটি টাকা।
ঘাটতি অর্থ ব্যাংকিং খাত থেকে নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৮ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। বিদায়ী অর্থবছরে যা ছিলো ৩১ হাজার ২২১ কোটি টাকা। ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে নতুন অর্থবছরের ঘাটতি পূরণে ১৮ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের প্রস্তাব করা হয়েছ। বিদায়ী অর্থবছরে ব্যাংক বহির্ভূত খাতে থেকে অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১২ হাজার ৫৬ কোটি টাকা।
ব্যাংক বহির্ভূত খাতের মধ্যে সঞ্চয়পত্র থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা নিয়ে নতুন অর্থবছরের ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। বিদায়ী অর্থবছরে এ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা।
ঘাটতি অর্থ অন্যান্য খাত থেকে নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ হাজার কোটি টাকা। বিদায়ী অর্থবছরে এ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩ হাজার কোটি টাকা।
উন্নয়ন ব্যয়: নতুন অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়ন ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা। এরমধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) খাতে ৯৭ হাজার কোটি টাকা ও এডিপি বহির্ভূত খাতে ৩ হাজার ৩৩৯ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। এছাড়া কাবিখা বা কাজের বিনিময়ে খাদ্য ও স্থানান্তরে ১ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।
বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়ন খাতের ব্যয় ধরা হয় ৮৬ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে এডিপির জন্য রাখা হয় ৮০ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। এডিপি বহির্ভূত খাতে রাখা হয় ৩ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা। আর ১ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয় কাবিখা ও স্থানান্তর খাতে।
অনুন্নয়ন ব্যয়: বাজেটে অনুন্নয়ন খাতে মোট ১ লাখ ৮৪ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। বিদায়ী অর্থবছরে এ খাতের ব্যয়ের পরিমাণ ধরা হয় ১ লাখ ৫৪ হাজার ২৪১ কোটি টাকা।
নতুন বাজেটে অনুন্নয়ন রাজস্ব খাতে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটে এ ব্যয় ধরা ছিলো ১ লাখ ২৮ হাজার ২৩১ কোটি টাকা।
এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ধরা হয়েছে ৩৩ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। বিদায়ী অর্থবছরে এ ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্র ছিলো ২৯ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা। বৈদেশিক ঋণের সুদ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭১৩ কোটি। বিদায়ী অর্থবছরে এ ব্যয়ে বরাদ্দ রাখা হয় ১ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা।
আর নতুন বাজেটে অনুন্নয়ন মূলধন ব্যয়ের ধরা হয়েছে ১৯ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা। বিদায়ী অর্থবছরে এ খাতে ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা ছিলো ২৬ হাজার ১০ কোটি টাকা। এছাড়া খাদ্য খাতের ব্যয় ধরা হয়েছে ২২৭ কোটি টাকা। বিদায়ী অর্থবছরে খাদ্য খাতের ব্যয়ের জন্য বরাদ্দ ছিলো ৩০৯ কোটি।
প্রতিক্ষণ/এডি/ফাহিম