পুলিশি অভিযানে বিএনপির সংশয়
প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ
জঙ্গি দমনে দেশজুড়ে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানের উদ্দেশ্য নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে বিএনপি। তাদের মতে এই অভিযান বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের দমন-পীড়নে সহায়তা করবে সরকারকে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই অভিযানকে বর্ণনা করেছেন ‘জনগণের আন্দোলনকে দমিয়ে রাখতে’ সরকারের একটি ‘কৌশল’ হিসেবে।
দেশে একের পর এক জঙ্গি কায়দায় হত্যা-হামলার প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এই অভিযানের ঘোষণা দেওয়া হয়। ‘জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামছে পুলিশ’ শিরোনামে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশব্যাপী এই অভিযান শুক্রবার ভোর থেকে শুরু হয়ে চলবে সাত দিন।
এ প্রসঙ্গে মীর্জা ফখরুল বলেন, “আজ এই সাঁড়াশি অভিযানের অজুহাত দিয়ে তারা আবারও বিরোধী দলের ওপর চড়াও হবে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।”
সরকারবিরোধী আন্দোলনে নাশকতার দিকে ইঙ্গিত করে এসব হত্যাকাণ্ডের জন্য বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করে আসছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।
ওই অভিযোগ ‘অমূলক নয়’ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার বলেন, “একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না, আমি হেড অফ দি গভার্নমেন্ট। আমার কাছে নিশ্চয়ই তথ্য আছে।”
এর পাল্টায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বৃহস্পতিবার দাবি করেন, আওয়ামী লীগ ও তার রাজনৈতিক মিত্ররাই এসব ঘটনায় জড়িত।
নির্বাচনী সংঘাতে আহত গাইবান্ধার বিএনপি নেতা আজিজুর রহমানকে দেখতে আজ শুক্রবার সকালে আগারগাঁওয়ের পঙ্গু হাসপাতালে গিয়ে মির্জা ফখরুলও সাংবাদিকদের সামনে এ বিষয়ে কথা বলেন।
গত কয়েক দিনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে সন্দেহভাজন পাঁচ জঙ্গিসহ নয়জনের মৃত্যুর প্রসঙ্গে টেনে তিনি বলেন, “আপনারা লক্ষ্য করেছেন, এই ধরনের সাঁড়াশি অভিযানের কথা বলছে, ইতোমধ্যে ক্রসফায়ার বা তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনাও বেড়ে গেছে।”
গত ২ জুন ইউনিয়ন পরিষদের শেষ ধাপের ভোটের দুদিন আগে গাইবান্ধায় গুলিতে আহত হন ফুলছড়ি উপজেলার ভেরেন্ডা্বাড়ি ইউপিতে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী আজিজুর রহমান। ভোটে তিনিই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
আজিজুরকে প্রথমে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুদিন আগে তার বাঁম পা কেটে ফেলতে বাধ্য হন চিকিৎসকরা। তার ওপর হামলার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করে আসছে বিএনপি।
মির্জা ফখরুল হাসপাতালে গিয়ে আজিজুর রহমানকে দেখেন এবং তার চিকিৎসার খোঁজ খবর নেন।
পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “এই ঘটনা থেকে সারাদেশের চিত্র আমরা পাই। দেশে আজ কোথাও কোনো আইনের শাসন নেই্। জীবনের নিরাপত্তা নেই। বিশেষ করে ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে যে সহিংসতা হয়েছে, অতীতে আর কখনো ঘটেনি।”
সহিংসতা ঠেকাতে না পারায় নির্বাচন কমিশনেরও সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব। “নির্বাচন কমিশন সরকারের লেজুড়বৃত্তি করার কারণেই আজকে এতোটা অবনতি হয়েছে। পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।”
ফখরুল অভিযোগ করেন, ক্ষমতা ‘চিরস্থায়ী করার চেষ্টায়’ সরকারই সারাদেশে ‘নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে’। এ অবস্থা থেকে ‘উত্তরণে’ দ্রুত একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানান এই বিএনপি নেতা।
অন্যদের মধ্যে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, গাইবান্ধা জেলা সহ সভাপতি মো. হাসান আলী, স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিক্ষণ/এডি/সাদিয়া