পোস্টের লাইক আর শিক্ষার মান-প্রমাণ
মিজান বিন মজিদ :
বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে একটি সময়োপযোগী লেখা লিখেছেন ময়মনসিংহ ক্যাডেট কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক মিজান বিন মজিদ। প্রতিক্ষণের পাঠকদের জন্য তার ফেসবুক পাতা থেকে হুবহু লেখাটি দেওয়া হলো:
যেইবার জিপিএ শুরু হইছিল সেইবার ৫ পাইছিল ৭৬ জন ব্রিলিয়ান্ট। এক্ষণ লাখে লাখ। হাজারে হাজার, কাতারে কাতার। কারিগরি বোর্ডে এক শিক্ষাবর্ষে যত মেধাবী বেরোয়, সচিবালয়সুদ্ধ অত স্টান্ডধারী নাই। হালবছর মাদ্রাসা বোর্ড উতপাদন করেছে দুই হাজার @পিলাস!!
৫০% র নিচে নামলো বইলা একখানা স্ট্যাটাস দিয়াই হাইড মারছিলাম! সেইখানেও দিখি লাইকে লাইক! শদুয়েক। আর যদি নায়ক নায়িকার আব্রুবৈ ছবি হয়, ব্লা ব্লা। তাহাদের কমন আছো,কিমন লাগিচ্ছে আস্কিংয়ে লাইকের বন্যা বহিয়া যায়। তারাই তো আমাদের নিশিকে শিশিতে ভরিয়া নিঃশেষ করিল! এক সাকিব আল হাসান আর এক সাকিব খানকে লইয়া বাংগালির বিদ্যার বিস্তরণ দেখিয়া বিতরণককারী কর্তৃপক্ষ নাচিতে রাচি যাইতে পারিবেন!
আমাদের বিদ্যার গলদ কোথায়? এইটা জানিতে যাইতে হইবে সেইকালের ভিক্টোরিয়া কলেজের বিএসসি ফেল মাস্টারের কাছে। তিনি ফেল করেছিলেন,এই তার বংশের গর্ব এলাকার গৌরব! বিলিভ মি!! কতজনার তৃপ্তি সেই সে ফেলে! পাসের হার ১৯,২০,২৬%। বারেব্বা। কোনবার ত্রিশ হইলেই বাম্পার বলিত। সেই এক কাল যুগ ছিল আমাদের শিক্ষার। আল্লাহ ফিরিয়ে দাও আমাদের সেই ফেলের কাল!
ফল বেরোলেই কিছু চেনামুখ বয়ান দেন। তারা সেমিনার করেন,পয়সা নেন।ফর্মুলা দেন.. তারা থাকেন এসিতে,পড়ান এসিতে খান ঘুমান শীতাতপ ব্যবস্থায়! তাহার কী করিয়া বুঝিবেন, চর ক্লার্ক উচ্চ বিদ্যালয়ে কেন পাসের হার ৫০এর নিচে! সেই স্কুল প্রমাণ করিতে মরিয়া যে, সেনবাগে খলিফার হাটে আরো দুর্যোগ! মাস্টারদের দোষই বা কী! তারা সিলেবাস বুঝিতে বুঝিতে ফর্মুলা চেঞ্জ! স্ট্রেঞ্জ! ইটস ট্রু,বন্ধুগণ। আমরা যারা ভাল ইশকুল আর নামি দামি কালেজে পড়াই তাহারাও গলদঘর্ম হইতে হইতে শিখি। আর যখনি শিখাইতে লই,কলিগ বলে নতুন বইয়ে অই গল্প কই???
কী করিতে হইবে? এইবার ফিরাও মোরে। তৃণমূলে যাইতে হইবেক। শিক্ষায় যেহহেতু আরাধ্য তাহারা যাহারা ইহার খদ্দের আর খরিদ্দার তাহাদের সহিত কথা বলুন। সাপ্লাইয়ার যোগানদার দোকানদের ডাকুন!!
আমার আজিকার ভাষা কেন গুরুচাণ্ডালী? নিজ দায়িত্ববোধ থেইক্যা বুইজ্যা লইবেন।
বারণ আছে লিখিতে! বুক ভাংগিয়া যাই বেদনা বিপন্নতা গিলিতে! তাই যদি উপরে চলিয়া যাই আমাদের এই গোঙানি।মনে শান্তি পাইবাম! সামান্য লেখাও অসামান্য ফল বয়ে আনে কদাচ!
লাইকের নিক্তিতে পোস্ট মূল্যায়ন অনুচিত। জিপিএ দিয়ে শিক্ষার মান-প্রমাণ অন্যায়।
তবে কী করিতে হইবে??
চলুন একখানা গল্প শুনি, আদি অকৃত্রিম..
বড় বাড়ির জামাই। শ্বশুরকুল অশিক্ষিত। জামাই দরিদ্র আর বিদ্যার্থী। সেইবার তার ম্যাট্রিক পরীক্ষার ফল বারইবে! সকাল বেলায় জামাই হাজির শ্বশুরঘর! শাশুড়ি জানিতে চাহে কেমন বাহে? বালা আছি। আইজকা হরীক্ষার হল(ফল)দিব দোয়া করিয়েন,টেনশান লাগের!
বিকাল বেলা! শাশুড়ি জায়নামাজ এ প্রার্থনারত। জামাইই খবর কী? না আম্মা হাশ কইরতাম হারি ন! হেল নি কইরছেন? হেলেরতুন খারাপ আর কি!
শাশুড়ি প্রাণ খুলে দোয়া শুরু কইরলেন, “আল্লাহ তুঁই আর জামাইর হাশ লই গেছো, আল্লাহগো হেল গান তুলি নিও না। আর জামাইর হেল(ফেল!) টিকাও।”
(এই লেখা প্রচারে লাভ হইবে বলিয়া মনে করিলে প্রাচারবেন।)
প্রতিক্ষণ/এডি/রন