প্রতিক্রিয়া পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যে
প্রতিক্ষণ ডেস্ক
এক সপ্তাহের মধ্যে দুইজন বিদেশি নাগরিক খুন হওয়ার ঘটনায় অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, ইতালি, জাপান, যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। একই সঙ্গে এসব দেশের নাগরিকদের বাংলাদেশে চলাফেরায় সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। নিরাপত্তার কারণে পোশাক শিল্পের বিদেশি ক্রেতারা তাদের নির্ধারিত সফর, বৈঠক বাতিল ও স্থগিত করা শুরু করেছে। বিদেশি নাগরিকদের চলাফেরায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে তৈরি পোশাক শিল্প আবারও সঙ্কটের মুখে পড়ার আশঙ্কা বাড়ছে।
৫ অক্টোবর দেশের তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সঙ্গে বায়ার্স ফোরামের বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও নিরাপত্তা ইস্যুতে তা স্থগিত করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের নিয়ে বায়ার্স ফোরাম দুই বিদেশি হত্যাকান্ডের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, এ সময়ে অনেকগুলো মানুষ একসঙ্গে বৈঠক করা নিরাপদ নয়। এ কারণে তারা বৈঠক স্থগিত করছেন। বর্তমানে একদিকে জিএসপি ইস্যুতে দেন দরবার চলছে। অন্যদিকে বিদেশি নাগরিক হত্যায় ক্রেতাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এরমধ্যে বায়ার্স ফোরামের বৈঠক স্থগিত একটা অশনি সঙ্কেত বলে মানছেন তৈরি পোশাক শিল্প উদ্যোক্তারা। এ অবস্থা চলতে থাকলে আবারও পোশাক শিল্প সঙ্কটের দিকে যাবে। যা মোকাবেলা করা হবে আরেকটি চ্যালেঞ্জ।
পোশাক খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, এর আগে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে পড়েছিল পোশাক খাত। তখনও এ শিল্প চরম সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছিল। এরপর রানা প্লাজা ধ্বসের পর বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। একপর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের অবাধ প্রবেশাধিকার- জিএসপি সুবিধা বাতিল হয়ে যায়। এতে আরও বড় ধরনের সঙ্কটে পড়ে পোশাক শিল্প। সেই রেশ না কাটতেই আবার বিদেশি নাগরিক হত্যাকা-ের পর অনেক ক্রেতা নির্ধারিত সফরের সূচি বাতিল করেছেন। এ অবস্থা যদি বেশি দিন চলতে থাকে তাহলে পোশাক খাতকে আবারও নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পোশাক কারখানার এক স্বত্বাধিকারী বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠানে ৬ অক্টোবর বায়ার আসার কথা ছিল। কিন্তু বিদেশি দুই নাগরিক হত্যাকা-ের পর নিরাপত্তা ইস্যুতে ওই বায়ার তার সফর পিছিয়েছেন। তিনি আগামী ২৫ অক্টোবর পরবর্তী সফরের কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘শুধু আমি নই, আমার মতো অনেক পোশাক কারখানায় যেসব বায়ার অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে আসার জন্য সময় নির্ধারণ করেছিলেন, তাদের বেশিরভাগই সফর পিছিয়েছেন।’
এ ব্যাপারে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘দুই জন বিদেশি খুন হওয়ার পর দেশে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। সবগুলো কূটনৈতিক মিশন থেকে বিদেশিদের সাবধানে চলাফেরা করতে বলা হয়েছে। এতে পোশাক রফতানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না কেন? বিদেশি নাগরিক হত্যার পর তৈরি পোশাক খাতের ক্রেতারা দেশে আসবে না তা নয়, তবে তাদের অনেকেই আসার সময় পিছিয়ে দিচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, পোশাক শিল্পে আমরা দুটি রাজনৈতিক অস্থিরতা পার করেছি, রানা প্লাজার মতো দুর্ঘটনায় পোশাক খাতের ভাবমূর্তি অনেক ক্ষুণ্ন হয়েছে। এসব ঘটনার পর সরকারের সহযোগিতায় যখন আমরা বড় চ্যালেঞ্জ পার করতে যাচ্ছি, ঠিক তখনই দেশে দুইজন বিদেশি হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এতে আবারও পোশাক খাত বড় চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে যাচ্ছে।
এদিকে গত সপ্তাহে ঢাকায় ইতালীয় নাগরিক সিজার তাবেলাকে হত্যার পর নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে তৈরি পোশাকের কিছু ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর বাতিল করেছেন। এমনকি আগামী দু-এক সপ্তাহ পরে আসার কথা, এমন অনেক ক্রেতাও আসবেন না বলে জানিয়ে দিচ্ছেন দেশের ব্যবসায়ীদের। এমন এক অবস্থার মধ্যেই রংপুরে জাপানের নাগরিক কুনিও হোশি হত্যাকা-ের শিকার হলেন। বিদেশী হত্যাকান্ডের ঘটনায় নতুন করে জটিলতা সৃষ্টি হবে ক্ল্যাসিক গ্রুপে ক্রয়াদেশ দেয়ার বিষয় নিয়ে কথা বলতে ১২ অক্টোবর আমেরিকার এক ক্রেতার বাংলাদেশে আসার কথা ছিল। সফরটি স্থগিত করেছেন ওই ক্রেতা। এমন তথ্য দিয়ে গ্রুপটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদউল্লাহ আজিম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘দুই বিদেশি হত্যার ঘটনায় ক্রেতা ও ব্র্যান্ডদের কাছে ভালো বার্তা যাচ্ছে না। এটা আমাদের জন্য খারাপ।’ অন্যদিকে অবন্তি কালার টেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহ-সভাপতি আসলাম সানি জানান, ‘আমার কারখানায় ফ্রান্সের এক ক্রেতা আসার কথা থাকলেও সেটি স্থগিত হয়েছে।’ তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ফারুক হাসান একই ধরনের তথ্য দিয়ে বলেন, গত সপ্তাহে একটি কারখানার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসতে ব্রিটিশ এক ক্রেতার আসার কথা ছিল। ইতালীয় নাগরিক হত্যার পর ওই ক্রেতা আর আসেননি। চলতি সপ্তাহেই আরেকটি কারখানায় ডেনমার্কের একটি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের আসার কথা ছিল। তারাও আসবেন না।
কয়েকজন ব্যবসায়ী নেতা বলেছেন, ইতালীয় একজন নাগরিক হত্যার ঘটনার পর সেটিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলেই মনে হয়েছিল। তবে জাপানি নাগরিক হত্যার ঘটনায় নতুন করে জটিলতা সৃষ্টি হবে। এতে বিদেশিদের মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বাড়বে। শিগগিরই ঘটনা দুটির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় না আনা হলে দেশের ভাবমূর্তি সংকটে পড়তে পারে। একই সঙ্গে বিদেশিদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারকে পরামর্শ দেন এই ব্যবসায়ী নেতারা। কয়েকজন ব্যবসায়ী নেতা বলেছেন, ইতালীয় নাগরিক হত্যার ঘটনার পর সেটিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলেই মনে হয়েছিল। তবে বিদেশী হত্যাকান্ডের ঘটনায় নতুন করে জটিলতা সৃষ্টি হবে। এতে প্রভাব পড়বে তৈরি পোশাক রফতানিতে। এমনিতেই এর প্রবৃদ্ধি কমে আসছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রফতানিকারক দেশ থেকে বাংলাদেশ চার নম্বরে নেমে এসেছে। বিদেশী নাগরিক হত্যার ঘটনায় ভাবর্মূতি ক্ষুণ্ন হলে এ অবস্থা আরো খারাপ হওয়ার শঙ্কাই বাড়ছে।।
আমাদের বুধবার