প্রতিবন্ধী যুবকের মুখে খাবার তুলে দিলেন এএসপি
ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত ২টা। এলাকাবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাতের সড়কে দায়িত্ব পালন করছে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তার নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম। হঠাৎ তাদের চোখ আটকে যায় ফুটপাতে পড়ে থাকা এক প্রতিবন্ধী তরুণকে দেখে। কাছে যেতে বোঝা যায় অনাহারে আছেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে ঐ এএসপির গাড়িতে থাকা একটি খাবারের প্যাকেট ঐ ব্যক্তিকে দেয়া হয়। শুধু তাই নয় এএসপি নিজেই চামচ দিয়ে খাইয়ে দেন তাকে।
চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার ঘটনাটি গত ঈদুল আজহার আগের রাতে হলেও এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও শনিবার (২৪ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
ঈদুল আজহার আগের রাতে রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের এএসপি আনোয়ার হোসেন শামীম রাতে রাউজান উপজেলার সড়কে ডিউটি করছেন। নোয়াপাড়া বাজার এলাকায় ফুটপাতে এক প্রতিবন্ধীকে দেখে গাড়ি থামান তিনি। তরুণ ঐ প্রতিবন্ধীকে জিজ্ঞাসা করতেই তিনি জানান, রাতে তার আহার জোটেনি। সঙ্গে সঙ্গে এএসপির গাড়িতে থাকা খাবার থেকে ঐ তরুণকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেন তিনি।
এরপর প্রতিবন্ধীকে দেয়া হয় প্লাস্টিকের বাটিভর্তি সেমাই। তৃপ্তি ভরে বাটির সবটুকু সেমাই খান তিনি। শেষে তার কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয় আর কিছু খাবেন কি-না? এরপর তিনি চা খেতে চাইলে এএসপি নিজে হাতে ধরে ঐ প্রতিবন্ধীকে পাশে থাকা দোকানের টুলে বসান। এরপর তার হাতে দেয়া হয় গরম এক কাপ দুধ চা। সবশেষে আবার নিত্যদিনের ডিউটিতে চলে যান এএসপি।
ভিডিওর বিষয়ে জানতে চাইলে এএসপি আনোয়ার হোসেন শামীম বলেন, ‘আমি প্রায় সময় রাতের বেলা ডিউটিতে বের হলে বাসায় থেকে কয়েক পোটলা খাবার নিয়ে যাই। এসব খাবার অনাহারে-অর্ধাহারে থাকা পথচারীদের দেই। ঈদের আগের দিন রাতেও কয়েক পোটলা খাবার নিয়ে বের হয়েছিলাম। ঈদ উপলক্ষে কয়েকটা সেমাইয়ের বাটিও নিয়েছিলাম। পথে এক প্রতিবন্ধী যুবককে দেখে তাকে গাড়ি থামিয়ে খেতে দিয়েছিলাম।’
এদিকে ফেসবুকে প্রতিবন্ধী যুবককে খাবার খাওয়ানোর ভিডিওটিতে প্রশংসা করে মন্তব্য করছেন সবাই। ফারজানা ববি নাজমা নামে একজন লেখেন, ‘চোখে জল আসলো খুশিতে। ধন্যবাদ আপনাকে, স্যার। যদি এমন হতো সবাই, যদি নিজের খুশীর একটু অংশ অসহায়দের মধ্যে বিলিয়ে দিতে পারতো তাহলে হয়তো আমাদের দেশটা সোনার দেশ হতো।’
আমিরুল ইসলাম একজন লেখেন, ‘কিছু ভালো কাজ নিজে করার চেয়ে অন্যের করাটা দেখে বেশি আনন্দ পাওয়া যায়। একদম নিরেট নির্মোহ নির্ভেজাল ভালো মানুষ আমাদের শামীম স্যার। আপনি আমাদের পুলিশ বাহিনীর গর্ব। আপনার হাত ধরেই একদিন আলো আসবে। অনেক অনেক শুভ কামনা রইলো, স্যার।’
প্রতিক্ষণ/এডি/অপ