অনেকে ভোগেন ডাইভারটিকিউলার ডিজিজে। যার ফলে উল্টো-পাল্টা খেলেই বমিভাব, জ্বর, ডায়রিয়া কিংবা কোষ্টকাঠিন্য।
আপনি যদি সব খেতে পারেন, তাহলে আপনি নিঃসন্দেহে ভাগ্যবান। কারণ অনেক মানুষেরই খাবারের তালিকা অনেকটাই সীমিত। সেসব মানুষদের জন্যই টনিক জানিয়ে দিচ্ছে সকালের নাশতায় তারা স্বাস্থ্যকর কি খেতে পারেন।
ডাইভারটিকিউলার ডিজিজ
পরিশোধিত আটা/ময়দা এবং চালে আঁশ কম থাকে। দীর্ঘদিন ধরে যাদের কম আঁশযুক্ত খাবার খাওয়ার অভ্যাস সাধারণত তাদের এই রোগ বেশি হয়। শরীর প্রয়োজনীয় আঁশ না পেলে ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। তাই এই রোগের ভুক্তভোগীদের সকালের নাশতায় রাখতে হবে হাই-ফাইবার অর্থাৎ আঁশযুক্ত খাবার।
নাশতায় যা খাবেন:
# দুধ এবং ওটস দিয়ে বানানো সুস্বাদু পরিজ—তবে চিনি কিংবা মধুর বদলে মিষ্টি স্বাদ আনার জন্য যোগ করুন খেজুর কুচি। ওটসে আঁশ তো থাকবেই, খেজুর থেকে পাবেন বাড়তি ফাইবার।
# খেতে পারেন লাল চালের ভাত এবং ডাল।
# হোলগ্রেইন বাদামী পাউরুটির উপর লাগিয়ে নিন পিনাট বাটার।
দুধে অ্যালার্জি যাদের
দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবার আমাদের শরীরের জন্য ক্যালসিয়ামের সবচেয়ে বড় উৎস। যদি আপনি এসব খেতে না পারেন তাহলে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করতে হবে অন্য উৎস থেকে।
নাশতায় যা খাবেন:
# পছন্দের ফল দিয়ে তৈরি করুন স্মুদি, সঙ্গে দুধের বদলে যোগ করতে পারেন সয়া মিল্ক। আজকাল বাজারে আমন্ড মিল্কও পাওয়া যায়।
# লাল আটার রুটি বা হোলগ্রেইন পাউরুটিতে লাগিয়ে নিন পিনাট বাটার, সঙ্গে দিন পাকা কলা কুচি।প্রতিক্ষণ/এডি/তাজিনঝাল খেতে চাইলে রুটি পেঁচিয়ে নিন ডিমের ঝুরিভাজা, টমেটো কুচি, পালংশাক, ধনে পাতা এবং কাঁচামরিচ কুচি দিয়ে।
# ল্যাকটোজ ফ্রি দুধ দিয়ে তৈরি করে নিন পরিজ। ব্যবহার করতে পারেন সয়া মিল্ক কিংবা আমন্ড মিল্কও।
সিলিয়াক ডিজিজ
গম, বার্লি, রাইজাতীয় শস্য থেকে তৈরি রুটিজাতীয় সব খাবারে থাকে গ্লুটন নামের পদার্থ। সিলিয়াক ডিজিজ আক্রান্ত রোগীদের গ্লুটন যুক্ত খাবার পরিহার করে চলতে হয়। তবে এই রোগে আক্রান্তদের খাবারের তালিকাও তেমন ছোট নয়। প্রাকৃতিকভাবে গ্লুটনমুক্ত খাবার হল তাজা ফল, শাকসবজি, ডিম, মাছ, মাংস, বাদাম, ডাল এবং দুধ।
নাশতায় যা খাবেন:
# আটা, ময়দা, সুজিতে যেহেতু সমস্যা, তাই এসব বাদ দিয়ে সবই খেতে পারেন আপনি। টমেটো, ধনে পাতা, পনির ইত্যাদি দিয়ে বানিয়ে ফেলুন মজার অমলেট।
# দুধ-কলা দিয়ে ভাত তো খাওয়াই হয়, সামান্য দারচিনি গুঁড়ো দিয়ে এবার যোগ করুন বাড়তি স্বাদ। সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে চিনির বদলে দিন মধু। আর সাদা ভাতের বদলে খেতে পারেন লাল চালের ভাত।
# রুটির বদলে সকালের নাস্তায় ভাতই হোক আপনার পেট ভরানোর উপায়। মিষ্টি স্বাদের কিছু ভাল না লাগলে মৌসুমি শাক-সবজি দিয়ে ভাত ভাজা করে নিতে পারেন। সঙ্গে টুকরো মাংসও থাকতে পারে।
ফ্রুক্টোজ অ্যালার্জি যাদের
আম খেলেই পেট ফুলে বেলুন হয়ে যাচ্ছে? আপেল খেয়ে পেট খারাপ হয়েছে? এগুলোই ফ্রুক্টোজ অ্যালার্জির লক্ষণ। ফলমূল (যেমন আম, কলা, আপেল, আনারস), মধু, কোমল পানীয়—অর্থাৎ যেসব খাবারে মিষ্টি বেশি থাকে, সেগুলোতে থাকে ফ্রুকটোজ।
নাশতায় যা খাবেন:
# সাধারণ পাউরুটিতে চিনি থাকে, বাজারে গেলে তুলে নিন চিনি ছাড়া পাউরুটি (যাকে ডায়াবেটিক পাউরুটিও বলে)। রুটিতে টমেটো পিউরি মাখিয়ে ছড়িয়ে দিন পনিরের টুকরো। ডিম খান নিশ্চিন্তে।
# বাড়িতে বানানো রুটির সঙ্গে টাটকা মাংস কিংবা মাছের তরকারি চলতে পারে। তবে টিনজাত মাছ-মাংস আপনার জন্য নয়।
# চিনিমুক্ত কর্নফ্লেক্স, ওটসে দুধ দিয়ে খান। তবে বাড়তি চিনি কিংবা মধু যোগ করবেন না।
সমস্যা যখন দুটো:
ল্যাক্টোজ অ্যালার্জির সঙ্গে ডাইভারটিকিউলার ডিজিজ?
# এক্ষেত্রে আপনার দুধ জাতীয় খাবার এড়াতে হবে এবং আঁশযুক্ত খাবার বেশি খেতে হবে। সবচেয়ে সহজ উপায় হল, ডাল দিয়ে ভাত খান।
# রঙ চায়ে ভিজিয়ে রুটি চাপাতি খেতে ভাল লাগে অনেকের। সঙ্গে থাকতে পারে কোনো সবজির ভাজি কিংবা ডিমের অমলেট।
# পরিজ কিংবা কর্নফ্লেক্স ভালো লাগলে ল্যাক্টোজবিহীন দুধ দিয়ে খেতে হবে। বাদাম এড়িয়ে চলুন, পাকা কলা যোগ করতে পারেন।
ফ্রুক্টোজ এবং ল্যাক্টোজ অ্যালার্জি?
মিষ্টি এবং দুধ আপনার শত্রু। তাহলে কি খাবেন সকালে?
# লাল আটার রুটি সেঁকে সঙ্গে নিন ডিম, প্রচুর সবজি কিংবা ডাল। টকজাতীয় ফল খেলে সমস্যা নেই তাই খান লেবু, পেয়ারা, তেঁতুল।
# খেতে পারেন চিতই পিঠা, মজার কোনো চাটনি দিয়ে।
# ভাত খান, সবজি এবং মাছ-মাংসের তরকারির সঙ্গে। কিংবা আগের রাতে ভিজিয়ে রাখুন ছোলা, পেঁয়াজ-মরিচ কুচি দিয়ে মেখে এক বাটি খেয়ে পেট ভরান।
সিলিয়াকর সঙ্গে ল্যাক্টোজ এবং ফ্রুক্টোজ অ্যালার্জি?
লক্ষ্য করুন, আপনার জন্য আটা-ময়দা-সুজি, দুগ্ধজাত এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার নিরাপদ নয়। দুঃখজনক হলেও সত্যি, আপনার খাবারের তালিকা অনেকটাই ছোট।
# ঝামেলা এড়াতে পেঁয়াজ-মরিচ দিয়ে ডিমের অমলেট বানিয়ে খেয়ে ফেলুন ভাত এবং ডালের সঙ্গে। অথবা খেতে পারেন মাছ-মাংসের যে কোনো পদ।
# ভুট্টার আটা দিয়ে তৈরি রুটি খেতে পারেন, তবে খেয়াল রাখবেন এতে যেন গম না থাকে।